দৃশ্য এক:
পুজোআচ্চা, নিষ্ঠা ভরে ধার্মিক জীবনযাপন চ্যাটার্জী পরিবারের চিরকালের অভ্যাস। বহুবছর এবং বহু প্রজন্ম ধরে পুরোহিত পেশায় নিযুক্ত এই পরিবার। সমাজের মানুষজনও বেশ মান্যিগণ্যি করে চলে। এহেন পরিবারের সদা ধর্মপ্রাণা,পুজোপাটে ব্যস্ত চাটুজ্জে গিন্নী দেহ রাখলে জানা যায় তিনি মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকার করে গিয়েছেন। চ্যাটার্জী বাড়ীতে এ এক বিষম অবাক করার মতই বিষয়। সবাই যেন আকাশ থেকে পরে!! আত্মীয়েরা আড়ালে টিপ্পনী কাটে, “বুড়ো বয়সের ভীমরতি”। বামুনের ঘরের বিধবার দেহ সৎকার না হয়ে কিনা কাটাছেঁড়া হবে, সে যেন এক বিষম লজ্জার ব্যাপার। প্রতিবেশীরাও আড়ালে আবডালে সুযোগ বুঝে ফিসফাস করে, ‘মহাপাতকী হবে’।
চাটুজ্জে গিন্নির একমাত্র পুত্র শ্যামলও ভারী বিরক্ত। এ নিশ্চয়ই ঐ পাশের বাড়ির ডাক্তার ছোঁড়ার উস্কানীতে মা যে কী বেআক্কেলে কান্ড ঘটিয়েছে… সে ভেবেছিল চন্দন কাঠের চিতা সাজিয়ে মা এর অন্তিম সংস্কার করে সবাইকে দেখিয়ে দেবে মাতৃভক্তি কাকে বলে। লোকে ধন্য ধন্য করবে। কিন্ত সে এখন নিরুপায়, অতঃপর তার প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও দেহ চলল হাসপাতালে…
দৃশ্য দুই (বছর কয়েক পর):
শ্যামলের ছোট ছেলেটা জন্ম থেকেই বড় রোগে ভোগে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যকৃত প্রতিস্থাপন আবশ্যিক। কিন্ত প্রতিস্থাপনের জন্য সঠিক অঙ্গ পাওয়া ক্রমশ দুরূহ হয়ে উঠছে। ছেলের শারীরিক অবনতি হচ্ছে ক্রমশ। শ্যামলের স্ত্রী মানত, তাবিজ, পুজোপাট বাকী রাখেনি কিছুই। চোখের জলও শুকোতে বসেছে। অবশেষে অনেক অপেক্ষা আর সাধ্যসাধনার পর জনৈকা ভদ্রমহিলার দান করা অঙ্গে ছেলে এ যাত্রায় প্রানে বাঁচল। হাঁপ ছেড়ে বাঁচল সকলে। সকলেই বলল বহুজন্মের পুণ্যফল, ঠাকুর মুখ তুলে চেয়েছেন।
কিন্ত শ্যামলের চোখে আজ জল… আনন্দের নাকি গ্লানীর তা অবশ্য আজ বোঝাই দায়…
ঐ উপরে কোথাও কোনও একজন অলক্ষ্যে বসে হাসলেন… সত্যিই পাপপুন্যের বিচারটা তাঁর কাছেও চিরকাল বড়ই গোলমেলে।