PMKVY একটা জালিয়াতি!

প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা (PMKVY) চালু হয়েছিল এক বড় স্বপ্ন নিয়ে—দেশের যুবসমাজকে দক্ষ করে তোলা, কাজের যোগ্য বানানো, আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করা।

২০১৫ থেকে ২০২৩—এই সময়কালে কেন্দ্র সরকার তিনটি ধাপে এই প্রকল্পে প্রায় ১০,১৯৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, যেখানে উপকারভোগীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১.১০ কোটিরও বেশি।

যে টাকাটা ভাগ হয়ে সবার ব্যাঙ্ক এ যাওয়ার কথা

কিন্তু ২০২৫ সালের CAG–এর পারফরম্যান্স অডিট রিপোর্ট বলছে, এই স্বপ্নের নিচে লুকিয়ে ছিল এক ভয়ংকর, সংগঠিত এবং দীর্ঘমেয়াদি জালিয়াতি।

এই রিপোর্ট কোনো বিরোধী দলের অভিযোগ নয়, কোনো মিডিয়া স্টিং নয়—এটা ভারতের সাংবিধানিক অডিটর–এর লেখা। আর যা উঠে এসেছে, তা শুধু অনিয়ম নয়—এটা পুরো ব্যবস্থার ভেতরে ঢুকে পড়া প্রতারণার নীলনকশা।

অডিটে সবচেয়ে ভয়াবহ যে তথ্য উঠে এসেছে, তা হলো—যে নিয়োগকর্তারা আদৌ বৈধ নয়, বা কোম্পানির রেজিস্টার থেকে বহু আগেই ‘struck off’, তারাই হাজার হাজার মানুষকে “কর্মী” হিসেবে সার্টিফাই করেছে।

এমনই একটা সংস্থা হলো Neelima Moving Pictures (NMP)

এটি একটি প্রোপ্রাইটারী বিসনেস যা RoC–এ নিবন্ধিত নয়। অডিটের সময় (অক্টোবর ২০২২) এই সংস্থার কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। তবু এই সংস্থা ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে ৮ টি রাজ্যে, ২১ টি জব রোলে, ৩৩,৪৯৩ জনকে সার্টিফিকেট দিয়েছে।

তদন্ত করে দেখা যাচ্ছে যে করোনা কালে এই সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বন্ধ হয়ে যাওয়া সংস্থা কীভাবে হাজার হাজার মানুষকে প্রশিক্ষণ দিল, পরীক্ষা নিল এবং সার্টিফিকেটও দিয়ে দিল?

আরেকটি সংস্থা হলো Radiate Designs

এই সংস্থা ২০১৪–১৫ সালের পর RoC–এ কোনো রিটার্ন জমা দেয়নি, পরে একেবারেই “struck off” হয়ে যায়। অথচ জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি ২০২০–র মধ্যেই তারা ১৫,২১৮ জনকে মিডিয়া ও এন্টারটেইনমেন্ট সেক্টরে সার্টিফাই করে। অডিট টিম যখন ঠিকানায় যায়, সেখানে পাওয়া যায় একটা সাধারণ দোকান—কোনো সাইনবোর্ড নেই, কোনো অফিস নেই।

মানে ভাবো যে তোমার পাড়ার একটা স্টেশনারি দোকান যদি একটা ট্রেনিং সেন্টার এ পরিণত হয়ে যায় ভুয়ো কাগজে কলমে তাহলে কী হতে পারে!

আর দুর্নীতি শুধু এখানেই থেমে থাকেনি।

PMKVY–RPL গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাচের জন্য হাই রেজোলিউশনের আলাদা ছবি ও ভিডিও জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু CAG দেখেছে—

একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে

– ভিন্ন ব্যাচে

– ভিন্ন তারিখে

– ভিন্ন রাজ্যে

একই ছবি ভিন্ন রাজ্য / সেন্টার এ!

একই গ্রুপ ছবি দেখানো হয়েছে কখনো ১৪.০৫.২০২০, কখনো ০৮.০৬.২০২০–এর প্রশিক্ষণ হিসেবে। এমনকি আরও ভয়াবহ—কিছু ছবি আদৌ PMKVY–এর নয়। ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্যানার দেখে অডিট বুঝতে পারে, সেগুলো DDU–GKY বা DAY–National Urban Livelihood Mission–এর প্রশিক্ষণের ছবি, যেগুলোকে পরে PMKVY–এর প্রমাণ হিসেবে চালানো হয়েছে।

মানে ভাবো যে তুমি ডাক্তারদের ল্যাব এর জামা পরে বলছো তুমি মিডিয়ার ট্রেনিং নিতে এসেছো।

ওদিকে কিছু সংস্থাকে “Best-in-Class Employer (BICE)” ঘোষণা করা হয়েছিল। অথচ অডিট বলছে—

– অনেক সংস্থার কর্মীসংখ্যা ২ থেকে ১০ জন

– কিন্তু সার্টিফিকেশন হাজারে হাজার

মানে অনেকটা এই রকম যে যেই সংস্থায় ১০ জন কাজ করে সেই সংস্থায় দেখানো হয়েছে ৫০০ জন কর্মী।

৩৩ টি জিম সেন্টার এ ৩০ হাজার জিম ট্রেনার!

স্পোর্টস সেক্টরে Edujoin নামের একটি সংস্থা ২৫,৩৪৮ জন ‘ফিটনেস ট্রেইনার’ সার্টিফাই করেছে ১০টি রাজ্যে। মন্ত্রক জানায়—এরা আসলে জিমের সঙ্গে টাই–আপ করা। পরে আবার বলে—প্রতিটি জিমে এক বা দুইজন কর্মী। অথচ একই নথিতে বলা হচ্ছে—এই জিমগুলোতে ১০,০০০ জন প্রার্থী রাখা হয়েছিল, আর মোট কর্মী সংখ্যা ছিল ৩০,০০০!

বাংলা হিসাব হলো ৩৩ টি জিম সেন্টার এ ৩০ হাজার ট্রেনার!

এটাও দেখা গেছে যে ইন্সপেকশন এ যার যাওয়ার কথা সে একই দিনে গুজরাট, কর্ণাটক, ঝাড়খন্ড বিভিন্ন রাজ্যে পৌঁছে গেছিলো!

অডিটে এটাও দেখা গেছে—

৭ লাখের বেশি প্রার্থী একই ইমেল আইডি ব্যবহার করেছে

১০ লাখের বেশি প্রার্থী একই মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেছে

৫২,৩৮১ জন প্রার্থী একই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছে

কিছু অ্যাকাউন্ট নম্বর ছিল—

1111111111, 123456….., এক অঙ্কের সংখ্যা, এমনকি নাম–ঠিকানা–বিশেষ চিহ্ন দিয়ে ভর্তি!

এমনকি ৯৫.৯৮ লাখ প্রার্থীর মধ্যে ৯৪.৫৩% ক্ষেত্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফিল্ড ছিল Null / N/A / Zero।

ইলেকশন কমিশন আবার এই সব দেখে সিসিটিভির গল্প না দিতে চলে আসে কারণ ভোটার তালিকা তেও এই একই ধরণের নাম, ঠিকানা সব দেখা গেছিলো।

ভুয়ো ইমেইল এড্রেস

এমন আরো অনেক কিছু। যে গুলো খুঁজে পেলাম সেগুলো হাইলাইট করে দিচ্ছি এই পোস্ট এ। CAG এর প্রকাশিত রিপোর্ট টাও দিয়ে রাখছি যাতে যাচাই করে নিতে পারো।

অর্থাৎ ভাবো যে তোমার আমার ট্যাক্স এর টাকা কে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে কিভাবে জালিয়াতি করা হয়েছে।

একই টেস্টিমোনিয়ালও ভিন্ন সেন্টার এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে

“না খাউংগা না খানে দুঙ্গা”

এটাও যে একটা জুমলা তা প্রতিটা পদে পদে প্রমাণিত হচ্ছে!

এবার অনেকে বলতে পারে যে সরকার তো এই নিয়ে তদন্ত করছে এবং এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে!

তাদেরকে বলি যে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যাচ্ছে যে সরকার শুধুমাত্র কিছু ট্রেনিং সেন্টার / পার্টনার কে ব্ল্যাকলিস্ট করেছে।

ব্যাস ওইটুকুই।

CAG রিপোর্ট

https://cag.gov.in/uploads/download_audit_report/2025/Report-No.-20-of-2025_PA-PMKVY_English-PDF-A-06943abec463479.68516873.pdf

#pmkvyscam #corruption #india

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *