LaughaLaughi

You Create, We Nurture

News

উত্তরাখন্ড রাজ‍্যের ভুতুড়ে গ্রামগুলোতে ফিরছে প্রাণ

উত্তরাখন্ড রাজ‍্যের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় একাধিক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোর সবকটা দীর্ঘদিন ধরে জনশূন্য ছিল। ঘরদোর ছিল, ছিল না লোকজন। সন্ধ‍্যায় প্রদীপ জ্বলতোন না। নিঝুম দুপুরে শুধু খসখসে পাতার আওয়াজ। তার সঙ্গে বন‍্য জন্তু জানোয়ারের হাঁকডাক। এমনই ভুতুড়ে পরিবেশেই এতদিন পড়েছিল উত্তরাখন্ডের কয়েকটি পাহাড়ি গ্রাম।

এই গ্রামগুলোর লোকজন রুটিরুজির টানে পাড়ি দিয়েছিলেন শহরের উদ্দেশ্যে। রোজগারের টানে ভারতের একটা বড় অংশের শ্রমিক মহারাষ্ট্র কিংবা গুজরাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এক্ষেত্রেও বেশিরভাগ গ্রামবাসী মহারাষ্ট্র কিংবা গুজরাটে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। ফলেই পাহাড়ি গ্রামগুলো দীর্ঘদিন জনমানবহীন। প্রকৃতির মায়ায় ভুতুড়ে রূপ ধারণ করেছিল।

দীর্ঘদিন ধরে ঘরবাড়ির বাইরে ঝুলছিল মরচে পড়া তালা। বাড়ির উঠোন গ্রাস করেছিল ঝোপঝাড়। দেওয়ালে দেওয়ালে শ‍্যাওলা পড়েছিল। তাই এই পাহাড়ি গ্রামগুলোর নাম হয়েছিল ভুতুড়ে গ্রাম।

এখন সময় বদলেছে। করোনার আবহে রুটিরুজিতে কোপ পড়েছে। শহরে কলকারখানা বন্ধ থাকায় হাতে কাজ নেই শ্রমিকদের। তাই দলে দলে গ্রামে ফিরছেন শ্রমিকরা। উত্তরাখন্ড রাজ‍্যের পাহাড়ি গ্রামগুলো ফিরে পাচ্ছে প্রাণের ছোঁয়া। আবারো উঠোনে জ্বলছে সান্ধ‍্য প্রদীপ।

উত্তরাখন্ড সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘সাইনা’ গ্রামে এতদিন মোট দুটো পরিবার বসবাস করত। গতমাসে শহর থেকে এক পরিবার ফেরায় সংখ‍্যা দাঁড়িয়েছে তিন। ঘরে ফিরে বেজায় খুশি সেই পরিবার। অন‍্যদিকে ‘বানধনু’ গ্রামে ফিরে এসেছে ১৭০ জন পরিযায়ী শ্রমিক। বানধনুর রাস্তা এখন গমগম করছে। যেন যৌবন ফিরে পেয়েছে এই গ্রাম। রাস্তার ধূলোবালিতে খেলা করছে শিশুদের দল। জমে উঠছে সান্ধ‍্য আড্ডা। মাঠেঘাটে কাজে লেগেছেন গ্রামবাসীরা।

এতদিন জনশূন্য থাকায় ভুতুড়ে গ্রামের তকমা পেয়েছিল পাহাড়ি এলাকার সুন্দর গ্রামগুলো। এই ‘ভুতুড়ে গ্রাম’ জনশ্রুতিতে গা ভাসিয়েছিল খোদ রাজ‍্যের মাইগ্রেশন কমিশনও। কমিশন ও এই গ্রামগুলোকে ‘ঘোস্ট ভিলেজ’ নামেই ডাকতে শুরু করেছিল।

জনশূন্য থাকায় এই পাহাড়ি গ্রামগুলোর সেরকম উন্নয়ন হয়নি। গ্রামের ভালো রাস্তা নেই। পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত নেই। সেইসঙ্গে কাজ হারিয়ে ফিরে এসেছেন শ’খানেক শ্রমিক। গ্রামের এই জনসংখ‍্যা ধরে রাখতে হলে তাদের জন‍্য কাজের বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে উত্তরাখন্ড সরকারের। নিজেদের গ্রামে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে আর হয়তো বাইরে যেতে হবে না গ্রামবাসীদের। সঙ্গে সঙ্গে আবারো লোকজনের ভিড়ে সম্পৃক্ত হবে এই পাহাড়ি গ্রামগুলো, ঘুচবে ভুতুড়ে গ্রামের বদনাম।

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi