LaughaLaughi

You Create, We Nurture

I got a story to tell

অরন্ধন বা রান্নাপুজো

পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অরন্ধন বা রান্নাপুজোর প্রচলন আছে; ভাদ্র সংক্রান্তিতে রান্না আর পয়লা আশ্বিনে খাওয়া। সারারাত ধরে নানারকম পদ রান্না করে পরের দিন বাসি রান্না মা মনসাকে ভোগ হিসেবে নিবেদন করে তা খাওয়া হয়। ভাদ্রে রান্না, আশ্বিনে খাওয়া। পুজো পার্বন থাকবে, অথচ খাওয়া দাওয়াটা মাঠে মারা পড়লে চলে কি? আর যেখানে প্রথাটাই রান্নাপুজো বা অরন্ধন কেন্দ্রীভূত। পুরোহিতের পুজো শেষে উৎসর্গীকৃত ভোগ সবাই মিলে গ্রহণ করে আগের দিন করে রাখা বাসি ভাতের সাথে অর্থাত পান্তভাতের সাথে। রান্না করে পান্তা খাওয়ার রীতি তাই অনেক জায়গায় একে পান্না পুজোও বলে। অনেকে একে ইচ্ছেপুজোও বলে থাকেন।

উৎসবের আগের দিন রাতে গৃহস্থদের ব্যস্ততা থাকে চরমে। মরশুমের সেরা সব্জি আর মাছ আরাধ্য দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করাই হল এই অরন্ধন এর প্রধান লক্ষ্য। উৎসবের মূল আকর্ষণ হল ইলিশ মাছের পদ। অরন্ধন এর বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে অন্যতম হল— ছোলা- নারকেল দিয়ে কালো কচুর শাক, সজনে শাক, গাঁটি কচু, শোলা কচু, মালপোয়া, তালের পদ ইত্যাদি।

চলুন এবার একটু ভোগ নিবেদনের প্রথা বা বিশ্বাসের নিয়ম গুলো জেনে নেওয়া যাক। এই অরন্ধন এর দুদিন আগে থেকে চলে তুমুল আয়োজন। সারারাত ভোগরান্নার পর মনসা গাছ বা সিঁধ বৃক্ষের পাশে রান্নাপুজোর ভোগ রাখার ব্যবস্থা করা হয়। অনেকে মনসার বাহারি ঘট বা পাঁচফণার ঘট পেতে মাটিতে গোবর ছড়া দিয়ে কুলোয় পদ্মপাতা বা কলাপাতা বা পাথরের বা কাঁসার থালাতে সবরকম ভোগ সাজিয়ে দেয়। পুজোর স্থানে চমৎকার আল্পনা দিয়ে ফুল সাজিয়ে দেয়। অরন্ধন বা রান্নাপুজোতে গৃহের উনুনকে সেদিন শুদ্ধ করে পুজো করা হয়, এবং সেদিন কোনো রান্না হয় না। উনুনকে বিশ্রাম দেওয়া হয়। এটি অরন্ধন এর আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।

Ganesh Chaturthi: Not a mere religious festival

তবে আজকাল আড়ম্বরের মেজাজে অরন্ধন তার সাবেকিয়ানা অনেকটাই পেছনে ফেলে আধুনিকতার দিকে এগিয়ে গেছে। পাঁচ- সাত রকমের ভাজা, চালতার চাটনি, ছাঁচি কুমড়ো, নারকেল দিয়ে মুগডাল, মটর ডালের চচ্চড়ি, ইলিশ ও চিংড়ির পদ এতো সবের বাহারও কমেছে। পাশাপাশি পান্তা গ্রহণের রীতিতেও বদল এসেছে। সুস্থতার দিকে খেয়াল রেখে বাসি খাওয়ার প্রথা ভেঙে উৎসর্গের পরই গরম এবং টাটকা খাবার খাওয়ার রীতি মেনেছে অরন্ধন। তবে বদল ঘটলেও এখনও বাংলার গ্রামে গঞ্জে এই লোকাচার বা লোকসংস্কৃতি বজায় আছে। ভিত্তিভূমি বা শিকড়কে নিয়েই উৎসবের আমেজ বজায় থাকুক চিরন্তন।

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi