LaughaLaughi

You Create, We Nurture

I got a story to tell

ব্রেক ফেল

জীবনে ব্রেক থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। তবে এ ব্রেক ইংরেজি ব্রেক। যার দুটি অর্থ। দুটি অর্থ কি এই গল্পে প্রাসঙ্গিক।

 রাতের পাহাড়ের গা বেয়ে জমজ ধূমকেতুর মতো ছুটে আসছে দুটো আলো । স্পিডোমিটার কাটা তখন নব্বই ছুঁয় ছুঁয়। দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন তা নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। কিন্তু তা নয়। সৃজিতের বাবা করোনা আক্রান্ত। শরীর থেকে দ্রুত কমে যাচ্ছে অক্সিজেনের মাত্রা। শিলিগুড়ির এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। তাই রাস্তা যেন শেষই হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে সৃজিতার। আচমকাই ব্রেক। সৃজিতের মুখটা সোজা গিয়ে পরল সামনের সিটের উপর। বেশ ব্যথা বোধ হচ্ছে চোয়ালে ও হাতের কনুইটায়। নিজেকে একটু সামলে ড্রাইভারকে সৃজিতার প্রশ্ন,

‘কি ভায়ো দাজো’!
ড্রাইভের হতবাক রক্তাক্ত চোখ তখন গাড়ির সামনের ঘোলাটে কাঁচ পেরিয়ে ঢালু খাদের দিকে।

কৃষ্ণেন্দু প্রায় চৌদ্দ বছর ধরে এই পাহাড়েই। প্রথম পোস্টিং এখানে হয়েছিল সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে। তারপর এই পাহাড়ের মায়ায় এমন পড়েছে, বাড়ির কাছে যাওয়ার হাজারো সুযোগ এলেও তা করেছে হাতছাড়া। একটু বাউন্ডুলে প্রকৃতির কৃষ্ণেন্দুর ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি, ট্রাকিং, হাইকিং, রিভার রাফটিং ইত্যাদির প্রতি অগাধ জ্ঞান। তাই পাহাড় ওর কাছে মূল্যবান সোনার খনির চেয়ে কিছু কম নয়।

গাড়িটাকে ক্রেন দিয়ে তোলা হচ্ছে ধীরে ধীরে। লাল রঙের টাটা নেক্সন। নম্বরটা দেখে বুঝে নিল কৃষ্ণেন্দু গাড়িটা ভিন রাজ্যের। গাড়ি যত উপরে আসছে বোঝা যাচ্ছে গাড়িতে যাত্রী দুই। একজন পুরুষ আর একজন মহিলা। একজন ড্রাইভারের সীটে, আর একজন পেছনের। পাহাড়ের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে কৃষ্ণেন্দুর জানা, এতো উপর থেকে গাড়ি খাদে পড়লে, কারোরই বাঁচার আশা নেই। এক ঘণ্টা চেষ্টার পর গাড়িটাকে রাস্তার উপরে উঠানো সম্ভব হল। সামনের দিকটা একেবারে তুঙ্গে গেছে। একজন কনস্টেবল কৃষ্ণেন্দুর আজ্ঞায় গাড়ির পেছনের দরজা খুলতেই বেরিয়ে এল, শাখা পলা পরা একটি হাত। হাত দুটো ধরে টেনে দেহটা বাইরে বের করতেই, চোখ জ্বলে উঠলো কৃষ্ণেন্দুর। এক ছুটে কাছে গিয়ে পাগলের মতো পালস আর হার্টবিট চেক করতে আরম্ভ করলো। অকাতরে গালে থাপ্পর মারতে মারতে রুদ্ধ গলায় ডাকতে শুরু করলো,
‘ শ্রীজা-শ্রীজা ।
‘ সৃজিতা’
তারপর মুখ তুলে চিৎকার করলো, ডাক্তার! অ্যাম্বুলেন্স!
হাজার ডাকলেও সেদিন আর চোখ মেলে তাকাল নি সৃজিতা।
ঠিক যেমন সাত বছর আগে, সৃজিতের হাজারটা ডাকেও ফিরে তাকায় নি কৃষ্ণেন্দু।

কলমে: মৌমিতা ভাওয়াল দাস।

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *