শীতকাল মানেই হরেক মজা,মেলা,অনেক ঘোরাঘুরি।হালকা শীতের আমেজে শহরবাসী থাকে ছুটির আমেজে। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পুরো সময়টাই কলকাতার সব বিনোদন পার্ক রেস্তোরাঁ জাদুঘর থাকে লোকসমাগমে পূর্ণ। কলকাতার বুকে গড়ে ওঠা আলিপুর চিড়িয়াখানাও এক বিশেষ আশ্চর্যের জায়গা বিশেষত ছোটদের কাছে।টিভিতে ছবিতে দেখা সব পশু পাখি যেন হাতের মধ্যেই। চোখের পলক ফেললেই পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে সিংহের দুয়ারে , দেখা যায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের রয়্যাল ভাব ভঙ্গি, গলা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা জিরাফ , কিচিরমিচির করা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পাখির কলরব কানে আসছে। আবার অনেক বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীদের ও আমরা দেখতে পাই চিড়িয়াখানায়। আমাদের বিনোদনের জন্যই পাঁচ বাই পাঁচ ফুটের খাঁচায় নীরবে বন্দি দশা বেছে নেয় প্রাণীকুল। প্রচলিত কথায় আমরা বলি ” বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে ” বনের মধ্য যাদের ঘর সংসার দিনযাপন তাদের খাঁচার মধ্যে আটকে রাখা কষ্টসাধ্য বিষয়। মানুষের বিনোদনের জন্য তৈরি চিড়িয়াখানা কখনও কখনও মনে হয় যেন কয়েদখানা। খাঁচার মধ্যে বসা মনমরা ম্যাকাও দিন গুনছে বন্দি দশা থেকে মুক্তির অপেক্ষায়। সব সময় active থাকে যারা অর্থাৎ মানুষের থেকে কিছুটা পিছিয়ে তাদেরই গোত্রের শিম্পাঞ্জি। তারা চমকদারী খেলা করতে এবং দেখাতে ভালোবাসে তারাও বসে থাকে মুখভার করে। যার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে বন্যভূমি। সেই পশুরাজ সিংহ ও সঙ্গীর অভাবে ক্লান্তিতে ঘুমোয়। কিন্তু শান্তির ঘুম হয়না। দর্শনার্থী দের চিল চিৎকার , বাঘ সিংহের ঘুম ভাঙাতেই তারা ব্যস্ত । খাঁচার পাশে বড় বড় করে লেখা “পশুপাখিদের বিরক্ত করবেন না”। যেটা বারণ করা থাকে আমরা সেটাই বেশি করে করি। এক্ষেত্রেও অন্যথা হয় না। আমরা বুঝতেই পারিনা ওরাও বিরক্ত হয় ওদের ও ধৈয্যের বাঁধ ভাঙে। কিন্তু ওদের ভাষা যে আমরা বুঝিনা তাই অবলা প্রাণীকুলের কষ্টের কথা মাথায় আসার আগে আমাদের আনন্দ উল্লাসের পরিমানের কথাই আগে মাথায় আসে।কয়েদখানায় বন্দি মানুষদের মতোই তারা অসহায় । দৌড়ঝাঁপ করে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে শিকারকে বাগে আনার প্রচেষ্টা তাদের নেই ।খাঁচায় বন্দি থেকে সেই অভ্যাস ও নেই। দশ ফুটের খাঁচায় কাটে তাদের দিনের পর দিন বছরের পর বছর। চিড়িয়াখানায় একরাশ আনন্দ নিয়ে ঢুকলেও বেরিয়ে আসার সময় মনের মধ্যে ঘুরপাক খায় অনেক প্রশ্ন। চোখে ভেসে ওঠে ছোট্ট খাঁচায় ডানা মেলতে না পারা পাখিদের কথা। কখনও কি বদলাতে পারে এই দৃশ্য?? মানুষ খাঁচায় বন্দি হয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরে পশু পাখির দর্শন করতে পারে কি? উত্তর কিন্তু জানা নেই।

Facebook Comments Box

By Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *