মিয়াগি: দ্য জাপানীস ওয়াইফ

‘মিয়াগি’ নামের অর্থ উপহার। কুণাল বসুর লেখা এই মিয়াগি ও স্নেহময়ের প্রেমের গল্প অবলম্বনে অপর্ণা সেন সযত্নে নির্মাণ করেন ছবিটি। গল্পের প্রেক্ষাপট সুন্দরবন।অনেক বছর আগের সময়ের কথা এখানে বলা হয়েছে। অধুনা হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের দুনিয়ায় ধোপে টেকেনা। ফোন কল ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। প্রতি সপ্তাহে একটি করে চিঠি লেখালেখিই ছিল জাপান ও ভারতের দুটি মনের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।

গল্পের নায়ক ভারতের স্নেহময় চ্যাটার্জী(রাহুল বোস) মানুষ মাতলার কোলে, তার মাসির কাছে। অঙ্কের শিক্ষক, নিরীহ প্রকৃতির।মেলামেশা, হইহুল্লোড় না-পসন্দ। ওদিকে তার পেন-ফ্রেন্ড মিয়াগি অর্থাৎ চিগুসা তাকাকু জাপাননিবাসী, স্বভাব প্রকৃতি স্নেহর সঙ্গে খাপ খায়। চিঠির মাধ্যমে সুখবর, উপহার আদানপ্রদান চলছিল বেশ। একবার ছুটিতে গিয়ে মাসির থেকে সইয়ের মেয়ে সন্ধ্যার সাথে বিয়ের প্রস্তাব আসে। মিয়াগি জানতে পারলো। জানালো তার মনের কথা। দুজনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলো। সমস্যাও আছে। সাধারণ স্কুল শিক্ষকের পক্ষে জাপান যাওয়ার খরচ এবং মিয়াগির মায়ের অসুস্থতার জেরে সাক্ষাৎ অধরা। ওপার থেকে সিলভার রিং এবং এপার থেকে শাঁখা, সিঁদুর পাঠিয়ে বিয়ে হলো।
দূরত্বে সম্পর্ক হয়, বিয়েও হয় কিন্তু যৌনচাহিদা মেটেনা। নির্দেশক খুব সুন্দর দেখিয়েছেন।
“বলি,চিঠি চাপাটি নিখে তো আর ছেলেপুলে হবেনা” – মাসির চরিত্রে মৌসুমী চ্যাটার্জী অসাধারণ। স্নেহও প্রেমকে ঠকিয়ে অন্য শরীরের দিকে তাকায়নি।
গল্পের মোড় ঘুরলো। টানাপোড়েন ও মানসিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টির জন্যে গল্পকার সন্ধ্যা অর্থাৎ রাইমা সেনকে আবারও প্রবেশ করান। অসহায় অবস্থা। বিধবার বেশ। সমাজের বৈধব্য রীতি নীতি চিঠিতে জানায় মিয়াগিকে।

মাসির ইচ্ছে ও মানবিকতার খাতিরে মা ও ছেলে পল্টুকে আশ্রয় দিলো। স্নেহ-সন্ধ্যার যোগসূত্র ও রূপক পল্টু, “মিয়াগি কাকিমা জাপানি বউ আর আমার মা বাংলা বউ”। আশ্রিতা বলে শ্রদ্ধা থাকলেও একটা কোণে স্নেহময়ের প্রতি ভালোবাসা লক্ষ্য করা যায়। মিয়াগি জানায় তার অসুস্থতার কথা। বিয়ের ১৫ বছর পার।

এটাও পড়তে পারেন রাধা কলঙ্কিত তবু পরকীয়া শ্রেষ্ঠ

স্ত্রীর প্রতি কর্তব্য পালনে ৬মাসের ছুটি নিয়ে আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি কিছুই বাদ দিলোনা। চিঠিতেই ওষুধ পাঠালো। পল্টুর পৈত্য আয়োজনে সন্ধ্যাকে গোসাবায় নিয়ে যাওয়ার ভার পড়লো স্নেহময়ের।সেদিন রাত্রে অনভিপ্রেত মিলন হল। অপরাধবোধে মিয়াগিকে চিঠি লিখলো। মিয়াগি জানায় তার ক্যান্সার। পাগলপ্রায় হয়ে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় করে কলকাতা গেল। অঙ্কোলজিস্ট নিরাশ করলে ফোন কল করে। প্রথমবার স্পষ্ট গলা শুনতে পায় দুজনে, কথা হয় শেষবারের মতো। বাড়ি ফিরলো নিউমোনিয়া নিয়ে। মারা গেল স্নেহময়। মানুষ মরে, প্রেম মরেনা। সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস থাকলে দূরত্ব কিছু নয়।
পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু’জনার মনে।
আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হ’য়ে আকাশে আকাশে।
শেষ দৃশ্যে মিয়াগিকে বিধবার বেশে নিয়ে আসা হয় স্নেহময়ের ঘরে। নামকরণ সার্থক।চিত্রনাট্য ও সংলাপ দারুণ। রূপকের ব্যবহার নেই। ঘুড়ির লড়াইয়ের ব্যাপারটা বাড়তি মনে হয়েছে। কাস্টিং দারুণ, সোহাগ সেনের কর্মশালা আরও সমৃদ্ধ করেছে হয়তো। বেশ লেগেছে। খুন, জখম, দাঙ্গা, ধর্ষণ হীন একটা নিখাদ প্রেম।

Facebook Comments Box

Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *