হলদিয়াতে পেট্রোকেমিক্যাল কারখানা শুরু হওয়া থেকে সিঙ্গুর থেকে টাটাদের চলে যাওয়া। বান্তলা থেকে ধান্তলা, ওদিকে বিজনসেতু থেকে সাঁইবাড়ি। মরিচঝাপির কথা তো বাদই দিলাম। কম্পিউটার আসতে না দেওয়া থেকে স্লিপে করে চাঁদা তোলা। ৩৪ বছরের সিপিএম সরকারের আমরা অনেক উত্থান-পতন দেখেছি, কিন্তু আজ আলোচনা করবো তাদের উত্থান এবং পতন নিয়ে।

৩৪ বছর নেহাতই কম সময় নয়। এককালে গোটা বাংলাজুড়ে ছিল বামপন্থীদের একছত্র বিস্তার। দীর্ঘ লড়াই ও সংগ্রামের পরে অবশেষে ১৯৭৭ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরা সরকার গঠন করে। কিন্তু কীভাবে তারা ক্ষমতায় আসলো? তা জানতে হলে আমাদের চলে যেতে হবে ১৯৩০ সালে।
তখন ছিল অবিভক্ত বাংলা, অর্থাৎ সেই সময়ে বাংলাদেশও আমাদের ভারতেরই অংশ ছিল। সেই বছরেই মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে কিছু বামপন্থী যুবক-যুবতী চট্টগ্রাম সেনা অস্ত্রাগার এবং তার সাথে সাথে ইউরোপীয় ক্লাব এবং টেলিগ্রাফ কেন্দ্র আক্রমণ করে। প্রচুর গোলাবারুদ, বন্দুক ও অস্ত্র তারা লুঠ করে এবং চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

স্বাভাবিকভাবেই তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ঘটনাটিকে ভালো চোখে নেয়নি, ফলে তারা চট্টগ্রামে তাদের সামরিক বাহিনী পাঠায়। তাই বিপ্লবীরা চট্টগ্রামের জলালাবাদ পাহাড়ে গিয়ে লুকোয়। সেখানে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৩৪ সালে মাস্টারদা সূর্য সেন ধরা পড়েন এবং তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় জড়িত আরেক বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদেদার ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণকালে পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মঘাতী হন।

ইতিহাসে এই ঘটনাটি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন নামে পরিচিত। এই ঘটনাটি নিঃসন্দেহে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক কড়া পদক্ষেপ ছিল এবং বাংলায় বামপন্থী যুগের শুরুর প্রথম ধাপও ছিল।
১৯৩৫ সালের মার্চ মাসের কথা বলছি। জ্যোতি বসু তখন ইংল্যান্ডে গেছেন আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে। সেখানে থাকাকালীন তিনি Communist Party of Great Britain অর্থাৎ CPGB-র কিছু নেতা যেমন হ্যারি পলিট, রাজনি পালম দত্ত, বেন ব্রাডলির সংস্পর্শে আসেন। বলা ভালো, এই সময় থেকেই তার মনে ধীরে ধীরে বামপন্থী মনোভাব আরও দৃঢ় হতে থাকে। তিনি তাদের সাথে নানা কর্মসূচিতেও যোগদান করেন।
১৯৪০ সালে জ্যোতি বসু ভারতে ফিরে আসেন এবং সরাসরি একজন ‘হোলটাইমার’ হিসেবে Communist Party of India অর্থাৎ CPI-তে যোগদান করেন।
বরাবরই Communist Party শ্রমিক, কৃষক ও মজুরদের জন্য লড়াই করে এসেছে। ইতিহাসের বই ঘাঁটলে তোমরা এর ভুরি ভুরি উদাহরণ পাবে। ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলায় Communist Party-র “কিষাণ সভা” নামক একটি কৃষক সংগঠন তেভাগা আন্দোলন নামে এক জোরালো সংগ্রাম শুরু করে। সেই সময়ে চাষিদের, তাদের চাষ করা ফসলের অর্ধেকটাই জমিদারের হাতে তুলে দিতে হতো, তাই তাদের দাবি ছিল সেই ভাগ অর্ধেক থেকে এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা।
ধীরে ধীরে এই আন্দোলন বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। বহু জায়গা থেকে অনেক জমিদার ভয়ে পালিয়ে যায়। ফলে শেষ পর্যন্ত তৎকালীন মুসলিম লিগ সরকার তাদের দাবি মানতে বাধ্য হয়। আর এই কারণেই বাংলায় বামপন্থীদের ভিত আরও শক্ত হয়ে ওঠে।
সাল ১৯৫৯। ততদিনে দেশ ভাগ হয়ে গেছে, ফলে অবিভক্ত বাংলাও তখন বিভক্ত। একদিকের নাম পশ্চিমবঙ্গ যা ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আরেকদিকের নাম পূর্ব পাকিস্তান যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। কিন্তু সেই বছরেই পশ্চিমবঙ্গে ঘটে এক মারাত্মক ঘটনা। সেই সময়ে গ্রামে ও শহরে উভয় জায়গাতেই খাদ্যের অভাব দেখা গিয়েছিল।
ফলে ১৯৫৯ সালের ৩১-শে আগস্ট আবারও সেই কিষাণ সভার নেতৃত্বে কলকাতার বুকে একটি বিরাট গণবিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। গ্রাম-শহর মিলিয়ে প্রচুর মানুষ সেই আন্দোলনে যোগদান করেছিল। মিছিলটি যখন Writers’ Building-এর দিকে যাত্রা শুরু করে তখন কোনো রকম সতর্কতা ছাড়াই পুলিশ তাদের উপর নিষ্ঠুরভাবে লাঠিচার্জ করতে শুরু করে। সেই ঘটনায় প্রায় ৮০ জন মানুষ প্রাণ হারান।

বিধানসভায় দাঁড়িয়ে জ্যোতি বসু, এই হত্যাকাণ্ডকে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের সাথেও তুলনা করেছিলেন। এই ঘটনা তৎকালীন কংগ্রেস সরকারকে কোণঠাসা করতে সক্ষম হয়েছিল।
তবে সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী আন্দোলন একটা বড় ধাক্কা খায়। যাই হোক, এটা ছিল অনেক বড় ঘটনা, কিন্তু তবুও তোমাদের জন্য ছোট করে বলছি।
তোমরা তো জানোই ১৯৪৭ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে ঠান্ডা যুদ্ধ চলছিল। ঠান্ডা যুদ্ধ নিয়ে ইতিমধ্যেই আগের একটি প্রতিবেদনে কথা বলেছি, যদি না দেখে থাকো তবে এখানে লিঙ্ক দেওয়া থাকলো দেখে নিও।
ঠিক ১৯৫০-এর দশক থেকে চিন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কিছু আদর্শগত ভাঙন দেখা দেয়। ১৯৫৬ সালে অনুষ্ঠিত সোভিয়েত ইউনিয়নের পার্টি কংগ্রেসে, সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ, স্টালিনের সমালোচনা করেন এবং পশ্চিমাদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথাও বলেন, যা চিনের বামপন্থী নেতা মাও সে তুং একেবারেই ভালো চোখে নেননি। তিনি এটিকে আদর্শগত বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে করেছিলেন। এবং এই ঘটনাই প্রভাব ফেলে বঙ্গ রাজনীতির উপর।
তৎকালীন Communist Party of India অর্থাৎ CPI-র কিছু অংশ কংগ্রেসের সাথে সহযোগিতায় বিশ্বাসী ছিল, কিন্তু আরেকটি অংশ কংগ্রেসের মতো বুর্জোয়া দলের সাথে কোনো ধরণের সহযোগিতার ঘোর বিরোধী ছিল।
১৯৬৪ সালের ৩১-শে অক্টোবর থেকে ৭-ই নভেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম পার্টি কংগ্রেসের অধিবেশন। সেখানেই দুই পক্ষের আদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রথম সামনে আসে। যার ফলে কিছু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা সেই অধিবেশন থেকে বেরিয়ে আসেন, যাদের মধ্যে ছিলেন জ্যোতি বসু, মুজাফ্ফর আহমেদ ও প্রমোদ দাশগুপ্তর মতো হেভিওয়েট নেতারা। তারপর তারা একটি নতুন দল গঠন করেন এবং জন্ম নেয় Communist Party of India (Marxist) অর্থাৎ CPI(M)।
তোমরা যদি লক্ষ্য করো তবে দেখবে যে এতক্ষণ পর্যন্ত আমি একবারও CPI(M) শব্দটা উচ্চারণ করিনি। যা বলেছি পুরোটাই ছিল CPI অর্থাৎ Communist Party of India-র উপরে।
এখানেই বোঝার বিষয় রয়েছে। আসলে চিন-সোভিয়েত সংঘাতের পর গোটা পৃথিবীর কমিউনিস্ট মতাদর্শে একটি অন্তর্দ্বন্দ্ব আসে। যার ফলে Communist Party কোনো একটি নির্দিষ্ট পার্টি নয়। এর অনেক ভাগ রয়েছে। যেমন একটি ভাগ হলো CPI Maoist অর্থাৎ যারা মাও সে তুং-এর কমিউনিস্ট মডেল মেনে চলে। আরেকটি ভাগ হলো CPI(ML) যা কার্ল মার্ক্স এবং লেনিনের নীতি মেনে চলে। আরেকটি ভাগ হলো CPI(M) যারা বেশিরভাগই কার্ল মার্ক্সের নীতি অনুসরণ করে। এরা সবাইই বামপন্থী, কিন্তু এক একটি সংগঠনের নীতি ও আদর্শে নানা অমিল রয়েছে।
আর এই CPI(M)-ই আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর রাজত্ব করেছে। কী, মাথা ঘুরছে? তাই তো? দরকার পড়লে লেখাটি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে পড়ে নাও আরেকবার। ওখানে ভাগ ভাগ করে বলা আছে।
এরই মাঝে পশ্চিমবঙ্গে তখন তালমাতাল পরিস্থিতি। ১৯৬৭ সালে কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে পশ্চিমবাংলার একটি ছোট গ্রাম নকশালবাড়ি থেকে শুরু হয় একটি কৃষক বিদ্রোহ। এই আন্দোলন ছিল মূলত একটি উগ্র বামপন্থী আন্দোলন যা ভারতবর্ষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ঘোর বিরোধী ছিল।

এই আন্দোলনের ভিত্তি ছিল কৃষকদের জমি সমানভাবে ভাগ করতে হবে, ভূমিহীন কৃষকদের অধিকার দিতে হবে এবং আরও অনেক কিছু। কিন্তু ধীরে ধীরে এই আন্দোলন একটি ভয়াবহ অমানবিক আন্দোলনে পরিণত হয়। এই সংগ্রামটি মূলত বামপন্থী শাখার মাওবাদী অর্থাৎ মাও সে তুং-এর আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল।
সারা পশ্চিমবাংলায় এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোনো নিরীহ মানুষকেও ছাড়তো না। একজনকে হত্যা করতে গিয়ে এরা ১০০ জনকে হত্যা করে চলে আসতো। বাচ্চা, বুড়ো কেউই এদের হাত থেকে নিস্তার পায়নি। এবং বামপন্থীদের এই মাওবাদী শাখাটি CPI(M) অর্থাৎ মার্ক্সবাদী দলটিকে ভীষণভাবে ঘৃণা করতো। হাজার হাজার CPI(M) কর্মীকে এরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা।
এই নকশালবাড়ি আন্দোলন কিন্তু এখনও থামেনি। কঠোর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের ফলে এদেরকে অনেকটা দমিয়ে দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পুরোপুরি থামানো যায়নি এখনও।
তবে এই সময়ে কেউই এসে বাংলার হাল ধরতে পারেনি। কখনো অজয় মুখার্জির নেতৃত্বে আসা জোট সরকার, কখনো আবার প্রেসিডেন্ট রুল, তার উপর অতিবামদের অত্যাচার—সবকিছু মিলিয়ে বাংলার অবস্থা হয়ে উঠেছিল ভয়াবহ। ১৯৭২ সালের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে কংগ্রেস ও CPI-এর জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ফলে কংগ্রেস নেতা সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন।
সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় কংগ্রেসের একজন প্রভাবশালী নেতা হলেও তিনি যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন, তার প্রভাব মোটেও ভালো ছিল না। তার শাসনকাল বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে কালো অধ্যায় নামে পরিচিত।
১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী “জরুরি অবস্থা” ঘোষণা করেন, যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার ধ্বংস করা, গণমাধ্যমের উপর সেন্সরশিপ এবং বিরোধীদের উপর দমন-পীড়ন শুরু হয়, যার কট্টর সমর্থক ছিলেন এই সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়।

ফলে গোটা বাংলাজুড়ে স্বৈরতন্ত্র শুরু হয়। যদিও অতিবামদের উপর সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের নীতি ছিল “NO Mercy” অর্থাৎ বুঝতেই পারছো, যেখানে-সেখানে নকশালদের দেখলেই…
কিন্তু তবুও কোথাও গিয়ে যেন এমন দমন-পীড়ন মানবাধিকারের লঙ্ঘন করছিল। এই সময়ে লোকেরা বাড়ি থেকেও বেরোতে ভয় পেত। সন্ধ্যের পর কেউ আর বাড়ির বাইরে বেরোতো না।
আর এইটারই সুযোগ কাজে লাগায় CPI(M)। তারা ধীরে ধীরে মাওবাদী ছাড়া অন্যান্য বাম দলগুলিকে নিয়ে সাধারণ মানুষের অধিকারের দাবিতে পথে নামে। খাদ্য, বস্ত্র ও জীবনের অন্যান্য সমস্যাগুলি নিয়ে তারা তীব্র আন্দোলন শুরু করে, যা মানুষের সমর্থনও লাভ করে। অবশেষে ১৯৭৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৪৩ টি আসন জয়লাভ করে তারা পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী যুগ শুরু করে।
নতুন যুগের তো শুরু হলো, কিন্তু এই যুগ কি সোনার যুগ ছিল? নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনো ইতিহাস?
যে সময় CPI(M) পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এসেছিল, সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ ছিল একটি বিধ্বস্ত রাজ্য। তাই CPI(M) নেতারা দ্রুত তাদের কাজ শুরু করে দেন। ১৯৭৮ সালে তারা শুরু করে “অপারেশন বর্গা”। এটি ছিল বামফ্রন্ট সরকার কর্তৃক একটি ভূমি সংস্কার উদ্যোগ, ইংরেজিতে যাকে বলে land reform policy।
এর প্রধান লক্ষ্য ছিল বরগাছাশিদের অধিকার রেকর্ড করা এবং জমির মালিকদের শাসন ও অত্যাচারের হাত থেকে তাদের রক্ষা করা। অপারেশন বর্গার আগে অনেক চাষির আইনগত সুরক্ষা ছিল না। ফলে জমির মালিকেরা তাদের যেকোনো সময় উচ্ছেদ করতো এবং তাদের চাষ করা ফসলের অনায্য ভাগ নিত।
কিন্তু এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার চাষিদের আইনগত অধিকার ফিরিয়ে দেয় এবং তাদের ফলানো ফসলের ন্যায়যুক্ত ভাগ তারা নিশ্চিত করে। বাংলার গরিব কৃষকের জন্য নেওয়া এই উদ্যোগ বামফ্রন্ট সরকারের ভিতকে আরও মজবুত করে তোলে।
এর ফলে প্রচুর পরিবার উপকৃত হয়।
এছাড়াও, ১৯৭৮ সালে বামফ্রন্ট সরকার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করে, যেখানে গ্রামের গরিব মানুষরাও সরাসরি স্থানীয় প্রশাসনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়।
তারা শিক্ষার প্রসারে বিশেষভাবে জোর দিয়েছিল। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। গ্রামাঞ্চলে বহু নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করা হয় এবং শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধাও বৃদ্ধি করা হয়। এছাড়াও গোটা বাংলার সাক্ষরতার হার অনেক বেড়ে গিয়েছিল সেই সময়।
তারা যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন সেতু, সড়ক ও ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছিল। তোমরা কলকাতার রাস্তা দিয়ে যে সব সেতু ও জাতীয় সড়কগুলো দেখো, তার অধিকাংশই CPI(M) সরকারের আমলে তৈরি।
সেই সময় চাকরির নিয়োগও হতো। প্রচুর মানুষ সচেতনভাবে চাকরি পেয়েছিল। এছাড়াও অনেককিছুই রয়েছে যা বললে লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাবে।
কিন্তু কথাটেই আছে, একই মুদ্রার দুটি পিঠ থাকে।
যত দিন যায়, ততই পরিস্থিতি আরও বদলাতে শুরু করে। সুন্দরবনের মরিচঝাপিতে ঘটে একটি অমানবিক ঘটনা। তোমরা সবাই জানো মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ ভারতের দণ্ডকারণ্য-এ আশ্রয় নেয়, যা বর্তমান চত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ এবং ওড়িশার কিছু অংশ নিয়ে বিস্তৃত।
সাল তখন ১৯৭১।
বহু CPI(M) নেতা তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা ক্ষমতায় এলে তাদেরকে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় দেবে। ১৯৭৭-এ পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার গঠনের পর দণ্ডকারণ্য থেকে তারা সুন্দরবনের দিকে আসতে শুরু করে এবং সেখানকার মরিচঝাপি দ্বীপে এসে আশ্রয় নেয়। সেখানেই তারা ধীরে ধীরে বসতি গড়ে তোলে।

জানলে অবাক হবে, তারা সেই জঙ্গলের ভিতরেই রাস্তা, বাজার, পথঘাট তৈরি করে নিয়েছিল। আর জীবিকা নির্বাহের জন্য তারা জঙ্গলের কাঠ কেটে ব্যবসা শুরু করেছিল।
সেই সময় সুন্দরবন অঞ্চলটি ছিল সংরক্ষিত অঞ্চল, অর্থাৎ সেখানে বসতি স্থাপন বা কাঠ কাটার আইনগত বিরোধ ছিল, কিন্তু গরিব মানুষদের পেটে যখন তা টান পড়ে, তখন আইন মানতে তাদের কাছে হয়তো বিলাসিতা মনে হতো।
ফলে কিছুদিন যেতে না যেতেই বামফ্রন্ট সরকার সেখানে বিশাল পুলিশ বাহিনী পাঠিয়ে দেয়। কয়েক হাজার নিরীহ মানুষ পুলিশর গুলিতে নিহত হয়। অনেকে পালিয়ে যায়।
তাদের খাদ্য, জলের ব্যবস্থা সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন CPI(M)-এর অনেক নেতাই এই ঘটনাকে অস্বীকার করবেন, কিন্তু সেখানে যে প্রচুর মানুষের প্রাণ চলে গিয়েছিল তা অনেক কেস স্টাডিতে জানা গেছে। এই বিষয়ে দীপ হালদারের লেখা “Blood Island” বইটি পড়তে পারো। (প্রমোশন করছি না)
এখানেই প্রশ্ন ওঠে, যে এই গণহত্যার কি অন্য কোনো বিকল্প পথ ছিল না? এত শরণার্থীকে আশ্রয় যখন দেওয়া হয়েছিল, তখন আগে থেকে তাদের জন্য ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয়নি? আর যেকালে ব্যবস্থাপনার অভাব ছিল, তখন এত শরণার্থীর আশ্রয় দেওয়ার কারণ কী ছিল? এই বিষয়ে তৎকালীন রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা সরাসরি প্রকাশ পেয়েছিল।
আর এই ঘটনার পরে CPI(M) সরকার প্রবলভাবে সমালোচিত হয়।
তবে এখানেই শেষ নয়, এমন আরও অনেক কিছু ঘটে যা সত্যিই হৃদয় কাঁপানো বিষয়।
২০০৩ সালের একটি ঘটনার কথা বলি, সময়টা তখন মাঝরাত। দুটি যাত্রীভর্তি বিয়ে বাড়ির বাস ধানতলা এলাকায় দিয়ে যাচ্ছিল।
দুটি বাসই হঠাৎ মাঝপথে আটকে দেয় কিছু গুন্ডা বাহিনী।
প্রথমেই তারা বাসের ভিতরে ঢুকে বাসচালক সমির ঘোষকে গুলি করে হত্যা করে এবং বাসের মধ্যে উপস্থিত বাকী ছেলেদের ছাদে বসতে বলে। আর বাসের ভিতরে থাকা মেয়েদের শ্লীলতাহানি ও ধর্ষ*ণ করে। তার সঙ্গে সঙ্গে জবতীয় গয়না, হাতঘড়ি এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র লুট করে নেয় তারা।
ঘটনার পরে সেখানকার দুজন CPM নেতা, সুবল বাগচি ও সাইদুল ইসলাম কারিগরকে পুলিশ গ্রেফতার করে। যদিও পরে তারা ছাড়া পেয়ে যায়। সুবল বাগচির বয়ান ছিল, quote unquote, “CPM নেতাদের একদল মানুষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, যখন থানাতে আমি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে চাই তখন আমাকে অপমানিত করা হয়েছে এবং গ্রেফতার করা হয়েছে” …
তাই হলে এবার নিজেই ভেবে দেখো…
তবে এখানেই কি শেষ? না, একটু পিছনে যাওয়া যাক। সালটা ১৯৯০। ৩ জন সরকারি কর্মী তাদের কর্মসূচি সেরে গোসাবা থেকে কলকাতা ফিরছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন—
অ্যানিতা দেওয়ান – ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট এক্সটেনশন মিডিয়া অফিসার।
উমা ঘোষ – সিনিয়র অফিসার, পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তর।
এবং, রেনু ঘোষ – ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জন প্রতিনিধি।
ঠিক সন্ধ্যে ৬.৩০ নাগাদ, ফেরার পথে যখন তারা ইস্টার্ন বাইপাস রোড ধরে বানতলার কাছে আসে, হঠাৎ ৪-৫ জন গুন্ডা তাদের সিপিএম পার্টি অফিসের সামনে গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করে। বেগতিক বুঝে গাড়ির চালক অভনি নাইয়া গাড়ি জোরে চালিয়ে পালাতে চেষ্টা করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। তখন পর্যন্ত আরও ১০-১৫ জন গুন্ডা এসে তাদের ঘিরে ধরে।
এবং তারপর যা ঘটে তা নির্মম বললেও কম বলা হবে। গাড়ির চালকসহ ৩ জনকে গাড়ি থেকে বাইরে বের করে আনা হয়। ৩ জন মহিলা কর্মীকেই ধ*র্ষণ করা হয়। গাড়ির চালক বাধা দিতে গেলে তার গোপনাঙ্গে আঘাত করা হয় এবং সেটিকে থেঁতলে দেওয়া হয়। আজ্ঞে হ্যাঁ! ঠিকই পড়েছো!
ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পর পুলিশ সেখানে হাজির হয়। ৩ জনের মধ্যে ২ জনকে বাঁচানো গেলেও ১ জনকে নিহত বলে ঘোষণা করে চিকিৎসকরা। নিহত মহিলার নাম অনিতা দেওয়ান।
ঘটনার ভয়াবহতা এতই গভীর ছিল যে যখন তার অটপসি চলছিল (ময়না তদন্ত), সেই সময় তার গোপন অ*ঙ্গের ভিতরে থেকে ১ ফুট লম্বা টর্চ উদ্ধার করা হয়।
যে মহিলা ডাক্তার অটপসি করছিলেন, তিনি ঘটনাস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
এবার ভাবো, যারা পোস্টমর্টেম, অটপসি ইত্যাদি করেন তাদেরকে মানসিকভাবে সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়, কিন্তু এই ঘটনার ভয়াবহতা সেই মহিলা ডাক্তারের মানসিক শক্তিও হারিয়ে দিয়েছিল।
সিপিএমের অনেক নেতার মুখে শোনা যায় যে এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের যোগ কী আছে।
দেখাও, যোগ আছে কী নেই, তা জানতে বিচারব্যবস্থা রয়ে গেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ হিসেবে প্রশ্ন তো করতেই পারি…
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রাক্তন ডিরেক্টর ডি. বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সুমন্ত ব্যানার্জিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য ইউনিসেফ থেকে যত ফান্ড আসে, তার পুরোটাই অপব্যবহার হয় সিপিএম শাসিত পঞ্চায়েতগুলোর মাধ্যমে।”
সেইদিন অনিতা দেওয়ান গোসাবা থেকে এসব জালিয়াতির অনেক প্রমাণপত্র জোগাড় করেছিলেন, কিন্তু তার শেষরক্ষা হয়নি। গুন্ডাদের আক্রমণে পুরো গাড়িটাকেই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, ফলে সমস্ত নথি পুড়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে তার প্রাণও চলে যায়।
এবার প্রশ্ন হলো, কোথায় ছিল প্রশাসন সেইদিন? হয়তো পরে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে, কিন্তু একের পর এক নিরীহ প্রাণ চলে যাওয়ার দায় কি তাদের ছিল না?
তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রসান্ত সুর বলেন, “গ্রামবাসীরা সেই মহিলাদের শিশু অপহরণকারী ও পাচারকারী বলে ভুল করেছে।” আবার অন্যদিকে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সেই দিনের বক্তব্য ছিল, “এরকম ঘটনা তো ঘটে থাকে।”
৩৪ বছরের কুকৃতী কি ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ করা সম্ভব?
সালটা ১৯৮২। বালিগঞ্জের বিজন সেতুতে ঘটে আরও এক নৃশংস পৈশাচিক ঘটনা।

১৯৮২ সালের ৩০ এপ্রিল
আনন্দমার্গি সম্প্রদায় (একটি হিন্দু সম্প্রদায়) এর ১৬ জন সন্ন্যাসী ও এক জন সন্ন্যাসিনীকে দিনের আলোয় নৃসংশভাবে পিটিয়ে ও গায়ে আগুন জ্বালিয়ে হ*ত্যা করা হয়েছিল।
এই সন্ন্যাসীরা তিলজোলায় অবস্থিত তাদের সদর দপ্তরে একটি শিক্ষা সন্মেলনে যাচ্ছিলেন। ঠিক বিজন সেতুর সামনে তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে প্রথমে লোহার রড দিয়ে মারা হয়। তারপর খড়াল দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া হয় এবং তাদের দেহে পেট্রল ও অ্যাসিড দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
ভাবো, কতটা ভয়াবহ ছিল এই ঘটনা। এবং এটি ঘটেছে বালিগঞ্জে।
হ্যাঁ, ঠিকই শুনছো, বালিগঞ্জ। যে রাস্তা দিয়ে তুমি-আমি রোজই প্রায় যাতায়াত করি।
ঘটনায় নিহত সুপ্রিয়া ব্রহ্মচারিনীর শাল ও সোনার ঘড়ি সিপিএম নেতা সম্ভু নস্কার এর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু রাজনৈতিক চাপের কারণে পুলিশও তখন নিরব থেকে যায়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার অ্যাডিশনাল ডিসট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট অর্থাৎ বাড়তি জেলাসাসক শের সিং এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এটি একটি ভূমি বিরোধের কারণে ঘটেছে। রাণী রাসমণির পরিবারের একটি জমির প্লট বেআইনিভাবে দখল করার পরিকল্পনা করেছিল সিপিএমের কিছু নেতা। কিন্তু সেই নিয়ে প্রতিবাদ করে আনন্দমার্গি সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ। ফলে তারা এই ঘটনাটিকে চক্রবৃত্ত করে, যাতে সম্প্রদায়ের মানুষ শিক্ষা পায় এবং তারা কখনও এই ঘটনা না ভুলতে পারে।”
এই ঘটনার মধ্যে রবীন দেব, কান্তি গঙ্গুলী মত হেভিওয়েট নেতাদেরও নাম জড়ায়।
হ্যাঁ, ঝড়ের পরে যে কান্তি আসে, এ হলো সেই কান্তি গঙ্গুলী। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই ঘটনার কোনো সুবিচার হয়নি।
তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর একটি কমিশন বসানো হয়েছিল। সেই কমিশনের রিপোর্টও জমা পড়েছিল, কিন্তু তা আর কখনও জনসমক্ষে আসেনি। অর্থাৎ সেখানেও…
এবার আরও একটি ঘটনার কথা বলি।
১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ, সিপিএমের দুষ্কৃতীরা তিন ভাইয়ের উপর হামলা চালায়, যারা কংগ্রেসের প্রতি গভীর ভালোবাসা রাখত।
বড়ভাই নব কুমার সাঁই কে ছুরি দিয়ে আঘাত করে তার চোখ উপরে ফেলা হয়। এবং বাকি দুজন অর্থাৎ মলয় ও প্রনব কে তাদের পরিবারের সামনে হত্যা করা হয়। এবং ছেলেদের রক্তমাখা ভাত বৃদ্ধা মা’কে খাওয়ানো হয়। একদম ঠিকই পড়েছো! রক্তমাখা ভাত।
পরবর্তীকালে জাস্টিস তারাপদ মুখার্জি’র অধীনে একটি কমিশন গঠন করা হয়। সেই কমিশনে রক্তমাখা ভাত খাওয়ানোর কথা উল্লেখ না থাকলেও সেই বাড়ির এক গৃহবধূ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমার ভাইদের প্রনব কুমার সাঁই ও মলয় কুমার সাঁইকে আমার চোখের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আমার বয়স তখন ২৬ বছর। সকাল ৭.৩০ থেকে তারা আমাদের বাড়িতে পাথর ছুরতে শুরু করে এবং তারপর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ছেলেদের রক্ত মেশানো ভাত আমার শাশুড়ি মৃগনয়না দেবীর মুখে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।” এক বছর পরে সেই বড় ভাই নব কুমার সাঁইকে প্রাণে হত্যা করা হয়।
এতো শুধু কয়েকটা বড় বড় ঘটনার কথা বললাম। এরকম আরও প্রচুর ঘটনা সেই সময় ঘটেছে যা কেউ এখনো অজানা।
সেই সময় জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গে কম্পিউটার আনার অনুমতি দিতেন না। কেন তা আজও কেউ জানে না। তবে কেউ কেউ বলে চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে তারা এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন।
শুধু তাই নয়, এমনকি ইংরেজি শিক্ষার পক্ষে তার সায় ছিল না। কেন ছিল না, সেটাও দলের নেতারা বলতে পারবেন।
কথায় কথায় লোডশেডিং, রাস্তার মেরামত না করা, কাঁচা রাস্তা পাকা না করা ইত্যাদি সেই সময় লেগেই থাকতো। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো পান থেকে চুন খোসলেই বন্ধ লেগে যেতো।
ভাবো, সপ্তাহে ৭ দিনের মধ্যে যদি ৪ দিনই বন্ধ লেগে থাকে, তাহলে মানুষ খাবে কী?
গ্রামে গঞ্জে গুন্ডারাজ ছিল অনেকটা জলভাতের মতো। শহরে প্রভাব কম থাকলেও গ্রামেগঞ্জে সিপিএমের পোষা গুন্ডাবাহিনী রীতিমতো সেখানে বসিন্দাদের উৎখাত করে তুলেছিল।
অবস্থা এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল যে সয়ং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জ্যোতি বসুকে বলেছিলেন, “চোরদের সরকারের আমি আর থাকব না।”
বর্তমানে সিপিএম নেতা-কর্মীরা অনেক আদর্শের কথা বলে থাকেন, কিন্তু যে কোনো সময় তাদেরকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা নানা অজুহাত নিয়ে খারাপভাবে পালিয়ে যায়।
সিপিএম সরকারের কফিনে সর্বশেষ পেরেক গেঁথে দেয় নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের ঘটনা।
যদিও নন্দীগ্রাম নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। এটা নিয়ে আবার অন্য একদিন লিখবো।
৩৪ বছরে একটা শিল্প না আনার পরে অবশেষে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মনে করেন যে পশ্চিমবঙ্গে শিল্প দরকার।
তাই তিনি টাটাদের সাথে চুক্তি করেন। তার উদ্দেশ্য ঠিক হলেও তার পদ্ধতি ভুল ছিল।
তারা সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ করা শুরু করে। কৃষকরা যখন বিদ্রোহ শুরু করে তখন পুলিশ এর সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ হয়। প্রচুর মানুষ গৃহছাড়া হয়, প্রচুর মানুষ মারা যায়।
পশ্চিমবঙ্গে একটি উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়। আর সেই ঘটনার ফায়দা তোলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী এবং বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
তিনি কৃষকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। চারিদিকে ছেয়ে যায় অরাজকতা, মারামারি। শিল্পায়ন তো দূরের কথা, উল্টো প্রচুর কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আন্দোলনের জেরে টাটা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয় এবং ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২২৭ টি আসন নিয়ে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের জোট সরকার বিজয় লাভ করে এবং পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটে।
দেখো, এমনি এমনি কেউই সরকারের ওপর বিশ্বাস হারায় না। এমনি এমনি আজ তারা শূন্য নয়।
সিপিএম নেতারা যতই আদর্শের কথা বলুক না কেন, ৩৪ বছরের কুকীর্তি তাদের অজানা নয়। যার ফলাফল তারা এখনো বুঝতে পারছে। বিধানসভায় আজ তাদের কোনো আসন নেই। আজ তারা শূন্য।
এটি একদিকে যতটা লজ্জাজনক, ঠিক ততটাই প্রাপ্যও বটে।
লেখা – ঋতম এবং রয়
Sources
Master Da Surya Sen
http://www.srilankaguardian.org/2022/02/man-of-chittagong-revolutionary.html
https://www.frontierweekly.com/articles/vol-49/49-17/49-17-Chittagong%20Uprising.html
https://indiachapter.in/index.php?/user/article/2/37/34
https://frontline.thehindu.com/other/obituary/article30210972.ece
Pritilata Waddedar
https://www.getbengal.com/details/the-making-of-the-unsung-fighter-pritilata-waddedar
https://www.dhakatribune.com/bangladesh/310405/remembering-pritilata-waddedar-a-brave
1959 Famine
Naxalbari Movement
https://caravanmagazine.in/reportage/naxalbari-fifty-years-uprising
1975 Emergency
Marichjhapi Massacre
https://www.getbengal.com/details/marichjhapi-massacre-when-they-turned-refugees-in-their-own-land