হিয়ার মাঝে (পর্ব ৩)

॥ হিয়ার মাঝে ॥

পর্ব- ৩

প্রকাশের চোখে রিনি শুধুমাত্রই ভালো একজন বন্ধু হলেও রিনি প্রকাশকে পাগলের মতো ভালোবেসে ফেলেছিল। এসবের মাঝেই হঠাৎ ওরা বেশ কিছুটা বড় হয়ে ওঠে। অপ্রত্যাশিত ভাবেই ওরা এক কলেজে এক ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়। এরপর প্রকাশকে পাওয়ার জেদ রিনির আরও বেড়ে যায়।অনেক ভাবনার অবসান ঘটিয়ে খুব যত্নে লুকিয়ে রাখা ভালোবাসাটা রিনি প্রকাশের কাছে নিবেদন করে।কিন্তু প্রকাশ দায়সারা ভঙ্গিতে সবটাই নিছকই রিনির ছেলেমানুষি বলে হেসে উড়িয়ে দেয়। এরপরেও রিনি প্রকাশকে ভালোবাসে বটে কিন্তু প্রকাশের সান্নিধ্য, বন্ধুত্ব হারিয়ে ফেলার ভয়ে সেই ভালোবাসা আর প্রকাশ্যে আসতে দেয়নি।

এরপর প্রকাশ বহুবার অল্প-স্বল্প প্রেমে পড়েছে কিন্তু কোনোটাই স্থায়িত্ব পায়নি। রিনি মনে মনে সান্ত্বনা পেয়েছে যে তার ভালোবাসার মানুষটা অন্য কারোর হতে পারেনি। কিন্তু কয়েক মাস আগে থেকে রিনির প্রকাশ একটু একটু করে কেমন যেন পালটে যেতে শুরু করেছে। প্রকাশের ভাবনায়, মনে হিয়া যেন জাঁকিয়ে বসেছে। সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে রিনিকেই প্রকাশ হিয়ার কথাটা প্রথম জানায়। আর ঠিক তারপর থেকেই রিনির মনে তার ভালোবাসার মানুষটাকে পুরোপুরি হারিয়ে ফেলার ভয় দুঃস্বপ্নের মত তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

পিকনিকে আসার পর থেকেই হিয়া থার্ড ইয়ারের প্রকাশদের গ্রুপটাকে এড়িয়ে চলছে, কারণ প্রকাশের মুখোমুখি সে হতে চায়না। কিন্তু এই খেলাকে উপলক্ষ্য করে তাকে প্রকাশের মুখোমুখি হতেই হল। কলেজে ওঠার পর থেকেই যথাক্রমে সেকেন্ড ইয়ার এবং থার্ড ইয়ারের সিনিয়ররা তাদের সাথে আলাপ পর্ব সারতে আসে। সিনিয়র দাদাদের ওপরে বেশ কিছু মেয়ে বেশ জোরালো রকমের ক্রাশও খায় বইকি! তবে হিয়ার সেরকম কিছুই হয়নি। তবে থার্ড ইয়ারের প্রকাশদার নজর যে তার ওপর অাছে, সেকথা বন্ধু-বান্ধবদের মুখে শোনে এবং প্রকাশের চাহনি দেখে সেও বেশ খানিকটা আঁচ করে। এরপর দিনে দিনে কথাবার্তার দৌড় বাড়তে শুরু করে, প্রকাশকে চিনতে শুরু করে হিয়া। প্রকাশের কম-বেশি যত্ন, হিয়াকে দেখে ক্যাবলার মত হাসি আর বন্ধু-বান্ধবদের খ্যাপানোর মাঝে প্রেমে পড়বেনা পড়বেনা করেও কিছুটা আকস্মিকভাবেই সেও প্রকাশকে ভালোবাসতে শুরু করে যদিও প্রকাশ নিজের মুখে হিয়াকে কখনোই কিছু বলেনি।

হিয়া তার মনের মধ্যে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা ভালোবাসা থেকে প্রকাশের সাথে এক নতুন সম্পর্কের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকে কবে প্রকাশ নিজের মুখে নিজের ভালোবাসা-ভালোলাগা সবটা স্বীকার করে হিয়াকে কাছে টেনে নেবে। সবার সামনে মুখে তার ভালোবাসা স্বীকার না করলেও অধীর আগ্রহে হিয়া প্রকাশের প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

ঠিক যখন এইরকম মনের টালমাটাল পরিস্থিতি, তখনই রিনি হিয়ার সাথে দেখা করে কিছু কথা বলতে চায় তার সঙ্গে। শান্ত-শিষ্ট নির্মল আবহাওয়াকে যেমন এক দমকা ঝোড়ো হাওয়া এসে নিমেষে অশান্ত, অপ্রতিরুদ্ধ করে তুলতে পারে ঠিক তেমনি রিনির সাথে বাক্যবিনিময়ের পর হিয়ার আস্তে আস্তে বাড়তে থাকা সাজানো গোছানো ইচ্ছেগুলো এক নিমেষে ছারখার হয়ে গেল।

Facebook Comments Box

Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *