LaughaLaughi

You Create, We Nurture

Emotional

প্রাক্তন এর সাথে শেষের সেদিন

প্রাক্তন মানেই জীবনের কিছু ফেলে আসা অধ্যায়,
কিছু ফেলে আসা চাওয়া-পাওয়া।
ফেলে আসা স্টেশনের মত।
সেদিন, হঠাৎ দেখা তোমার সঙ্গে!
ট্রেনের কামরায়, ট্রেন বলতে মেট্রো।
জানি না,প্রাক্তন দের সাথে কেন ট্রেনেই দেখা হয়।
তুমি পরেছিলে, তোমার প্রিয় গাঢ় নীল রং-এর শার্ট।
মাথা নীচু করে একমনে বসে মোবাইলে আঙুল চালিয়ে যাচ্ছিলে।
যেন দেখতেই পাওনি আমাকে!
নাকি দেখতে পেয়েছিলে বলেই…
ওই মোবাইলটা জন্মদিনে তোমাকে উপহার দিয়েছিলেন তোমার কাকা।
বাতাসে ভাসছে সেই অতি চেনা ডিওডোরেন্ট -এর গন্ধটা।
তোমার মনে আছে, এই মেট্রো করেই আমরা শপিং করতে যেতাম নিউমার্কেটে।তখন তুুমিতো প্রাক্তন ছিলেনা।

তোমার ওই নীল শার্টটা তো ও খান থেকেই কেনা।
তোমার মনে আছে, প্রিন্সেপঘাটের সেই পড়ন্ত বিকেলের সোনালী দিনগুলোয়, হাতে হাত ধরে দেখা রক্তিম সূর্যাস্তের আভা।
কলকাতা শহরের কাঁপতে থাকা ছায়া বুকে নিয়ে বয়ে চলা নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকা।
সেই বৃষ্টির মধ্যে ট্রামলাইন ধরে হেঁটে যাওয়া, ভিজতে ভিজতে।
কত মান-অভিমান, আদর-আবদার।

অতীতের স্মৃতি বড় সুখময়,
তবে স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকা, ভালো না মন্দ তা
আমার জানা নেই।
আচ্ছা, নতুন কেউ এসেছে নাকি তোমার জীবনে?
তুমি এখন তার সাথে বেশ সুখেই আছো হয়তো।
আমি সাধারণত মেট্রোর লেডিস সীটেই বসি।
কিন্তু, সেদিন কোনোরকমে দৌড়ে সামনে যেটা পেয়েছি সেটাতেই….
তাই জেনারেলেই ঠাঁই হল অগত্যা।
ঠিক পাশের পাশের সীটেই বসে আছো তুমি।
আমাদের মাঝখানে শুধু অচেনা একজন,মাত্র একজন।
এত কাছ থেকে দেখলাম তোমাকে, ইচ্ছা করলে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিয়ে ডাকতে পারতাম।
সে হাতে এখন ও লেগে আছে তোমার উষ্ণ স্পর্শ।
নিঃশ্বাসে এখন ও তোমার উজ্জ্বল উপস্থিতি।
শ্যামবাজার, শোভাবাজার, সেণ্ট্রাল,
একের পর এক মেট্রোস্টেশনের নাম ঘোষণা হচ্ছে।

এটাও পড়তে পারেন- তুমি বোধ হয় প্রেম নও

যাত্রী নামছে,উঠছে,
তুমি কোথায় নামবে আমি জানি না।
তবে, আমি নামবো রবীন্দ্রসদনে।আমি নয়,আমরা।
মাকে নিয়ে যাচ্ছি সাথে, কিছু টেস্ট করাবো।
আমার মায়ের ব্লাড ক্যান্সার। ফোর্থ স্টেজ।
রোগটা যখন ধরা পড়ল,
আত্মীয়-স্বজন, হিতৈষী, সবাই আস্তে আস্তে সরে পড়লো পাশ থেকে!
ভেবেছিলাম, তুমি অন্তত পাশে দাঁড়াবে
যেভাবে ভরসা দিতে আমাকে,
বিয়ের পর আমার বিধবা মাকে দেখভাল করার।
তাই সহায়-সম্বলহীন আমি, ছুটে গিয়েছিলাম তোমার কাছে।
কিন্তু, তুমি ও যে এভাবে মুখ ফিরিয়ে নেবে,
তা, আমি দুঃস্বপ্নে ও কোনোদিন ভাবিনি।
পরিস্থিতি বড় নির্মম কুঠার, এক লহমায় সে কুঠার, স্বপ্নের রঙিন জগৎ-কে ফালাফালা করে,
আছড়ে ফেলে বাস্তবের কঠিন পাথরে।
মত্ত বুনো হাতির মাড়িয়ে দিয়ে চলে যায়। সবকিছু প্রাক্তন করে দিয়ে।

আজ হঠাৎ এভাবে দেখা হয়ে গেল।
তুমি আমার এত কাছে বসে আছো,
অথচ, আমাদের মধ্যে এখন আলোকবর্ষের দূরত্ব!
তোমাকে দেখে আমার মনে পড়ে যাচ্ছিল,
রবি ঠাকুরের সেই রেলগাড়ির কামরায় ‘হঠাৎ দেখা’ র প্রাক্তন এর কথা।
খুব ইচ্ছে করছিলো, তোমার হাতটা একবার নিজের হাতে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করি-
“আমাদের এতদিনের সম্পর্কটা কি ঠুনকো ছিল এতটাই!যে সামান্য একটা দমকা বাতাসে এভাবে ভেঙে পড়ল,
কাঁচের মত টুকরো টুকরো হয়ে! আমাদের প্রাক্তন করে দিয়ে।

থাক সেসব, সংযত করি নিজেকে, অতীতের দুঃস্বপ্ন বর্তমানে টেনে এনে কি লাভ! তুমি তো এখন শুধুই প্রাক্তন।
আমরা নামলাম রবীন্দ্রসদনে, তোমাকে নিয়ে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল ট্রেন, যাত্রা করল যেন অনন্তের পথে!
তোমার শার্টের নীল রং ফিকে হয়ে আসতে লাগলো, আস্তে আস্তে।
শার্টের বোতাম গুলো হয়ে উঠল যেন অস্তমিত সূর্য, ফিকে নীল রঙে, গোলাপি ও হলুদ আভা মিশিয়ে অস্ত যেতে শুরু করল!

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi