LaughaLaughi

You Create, We Nurture

Emotional

পাড়াগ্রামের মেয়ে কল্পনা (৩য় ও শেষপর্ব)

কল্পনা তখন রান্না ঘরে রান্না করছে। কল্পনার ছেলে সুমন ও মেয়ে রিয়া দুজনে বসার ঘরে বসে ছিল। সুমন তার দিদি রিয়াকে বলে, শোন দিদি, ঠাম্মি সবসময় মাকে এভাবে বকাবকি কেন করে? মা কি আমার মতো খুব দুষ্টামি করে? জানিস তো দিদি একদিন আমি দেখি ঠাম্মি মাকে চুলের মুঠি ধরে টানছে। মা খুব দুষ্টুমি করে তাই না দিদি? এইসব কথা শুনে রিয়া হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। রিয়ার বয়স কম হলেও সে বুঝতে পারে, ঠাম্মি তার মাকে বিনা কারণে কত কষ্ট দেয় এবং সে মেয়ে হয়েছে বলেও তার মাকে ঠাম্মি কথা শোনাতো। কিন্তু সুমন তো একেবারে শিশু তাই সে এখনো কিছু বুঝতে পারে না। রিয়া সুমনকে বলে, না রে ভাই মা দুষ্টু নয়। তুই বড়ো হলে সব বুঝতে পারবি। রান্না ঘর দূরে থাকায় কথাটাগুলো কল্পনা শুনতে পায় না।

কল্পনার শ্বাশুড়ি এতটাই নির্দয় ছিল যে, নাতি নাতনির প্রতিও তার কোনো দয়া মায়া ছিল না। আপনারা শুনলে অবাক হবেন, বাচ্চা দুটো যে তাদের পছন্দের কিছু খাবে সেটাও খেতে দিত না। এমন কি গাছের কোনো ফল পেড়ে নিয়ে এলেও সেটা এনে ওনার কাছে দিতে হত। তার যখন ইচ্ছে হবে তখন দেবে। বেশির ভাগ সময়ই হতো কী, ঘরে রাখার পর ফলগুলো যে পঁচে যেত সেগুলো বের করে দিত খাওয়ার জন্য। তখন সেই পঁচা ফলগুলোই বাচ্চাদের খেতে হত। কল্পনা শখ করেও তার সন্তানদের মনের মতো খাবার তৈরি করে দিতে পারতো না।

পাড়াতে কারো বাড়িতে ভালোমন্দ রান্না হলে ছেলে এসে বায়না করতো কিন্তু কল্পনা সেটা করে খাওয়াতে পারতো না। একজন মায়ের কাছে এটা কতটা যে বেদনা দায়ক!কল্পনা ঠাকুরের কাছে বলতো, হে প্রভু আর কত ধৈর্য্যর পরীক্ষা নেবে আমার। এতদিন আমি একা ছিলাম সব সহ্য করেছি। কিন্তু আজ আমার সন্তানের কষ্ট যে আর সইতে পারছি না প্রভু। আমাকে যত খুশি কষ্ট দাও কিন্তু বাচ্চা দুটোকে আর কষ্ট দিও না ঠাকুর।

কল্পনার তৃতীয় সন্তান আসে পৃথিবীতে। মেয়ে হয়েছে শুনে কল্পনার শ্বাশুড়ি বলে, আমি ঐ মেয়ের মুখ ও দেখতে চাই না। আমার আরেকটা নাতি চাই নাতনি না। হঠাৎ একদিন এক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো। কল্পনা তার মেয়েকে বিছানায় একা শুয়ে রেখে গেল বাইরে, তখন কল্পনার শ্বাশুড়ির চোখ পড়ে যায় সেই শিশুটির দিকে, বাচ্চাটি হাত পা নেড়ে খেলা করছে আর হাসছে, ফর্সা টুকটুকে, লাল চুল, তাকে দেখে আর থাকতে পারলো না তার ঠাম্মি, দৌড়ে এসে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে বললো, এই মেয়েকে আমি কি করে না দেখে থাকতে পারলাম।

কান্না শুনে কল্পনা ভয়ে দৌড়ে এসে দেখে, তার শ্বাশুড়ি ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে কাঁদছে আর বলছে আমি কেন এতদিন ওকে দেখতেও চাইনি। কল্পনা এই দৃশ্য দেখে তো হতভম্ব হয়ে গেল। হঠাৎ ওনার কি হলো? “আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?” চিমটি কেটে দেখে কল্পনা। এটা স্বপ্ন নয় সত্যি। তারপর থেকেই কল্পনার শ্বাশুড়ি আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে থাকলো। আগের মতো আর কল্পনাকে কষ্ট দিত না এবং ছোট নাতনিকে সে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতো। যখন যেখানেই যেত নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে যেত। এমনকি কেউ যদি তাকে কিছু খেতে দিত সেটা না খেয়ে নাতনির জন্য নিয়ে আসতো।

এটাও পড়তে পারেন
পাড়াগ্রামের মেয়ে কল্পনা (দ্বিতীয় পর্ব)

কল্পনার ছেলে মেয়েরা বড়ো হয়েছে। তাদের সবারই বিয়েও হয়ে গেছে। কল্পনার শ্বাশুড়ি মৃত্যুর আগে তাকে ছাড়া কিছু বুঝতো না। সব সময় মা ছাড়া কথা বলতো না। যাকে কোনোদিন বৌমা বলেও ডাকতো না তাকে মা বলে ডাকে! কল্পনা তার শ্বাশুড়ির এই ব্যবহারে আগে পাওয়া কষ্টগুলো সব ভুলে যায় এবং শ্বাশুড়িকে খুব সেবা যত্ন করে। তারপর একদিন বৌমার কোলে মাথা রেখেই ইহলোক থেকে পরলোকে চলে যায়। কল্পনা এখন খুব সুখী। কেন না তার সন্তানদের ভালো পরিবারে বিয়ে হয়েছে। নাতি,নাতনি নিয়ে সে এখন সুখের রাজ্যে বাস করছে।

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi