‘ঋত্বিক’ একটি বোধের নাম
ভারতীয় সিনেমা তথা বাংলা সিনেমার জগতে ‘ ঋত্বিক কুমার ঘটক’ একটি অতি পরিচিত নাম। ১৯২৫ সালের ৪ঠা নভেম্বর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন রায়বাহাদুর সুরেশচনদ্র, মা ছিলেন ইন্দুবালা দেবী।
ঋত্বিক ঘটক তাঁর শিক্ষাজীবনের সূচনা করেন ঢাকার ময়মনসিংহের মিশন স্কুলে। তারপর কলকাতার বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে মাট্রিক পাশ করেন এবং তারপর বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন ইংরেজি অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে। এরপর আর এক ধাপ অগ্রসর হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এম.এ. পড়তে শুরু করলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটি সম্পূর্ণ করতে পারলেন না।কমিউনিস্ট পার্টি তে ঢুকে অন্তিম পরীক্ষার ঠিক আগেই পড়া ছেড়ে দিলেন।
৪৭’ এ দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে রাজশাহী থেকে কলকাতায় আসেন। সেই বছরে মানে ১৯৪৮ এ ভারতীয় গণনাট্য বা Indian People’s Theatre Association (IPTA) – এর সেক্রেটারি পদে নিযুক্ত হন। দেশভাগের পর যারা পূর্ববঙ্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে পশ্চিম বাংলায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তাদের অনেকেই ‘শরনার্থী’, ‘বাস্তুহারা’, ‘রিফিউজি’ ইত্যাদি বলতেন। দেশভাগের সময়ে চারিদিকে শোষিত, নিপীড়িত, অত্যাচারিত মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছিল। তখন এই সবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য তিনি নাটককেই অস্ত্র বা হাতিয়ার হিসাবে বেছে নিলেন। কারণ তিনি মনে করেছিলেন যে নাটক মানুষকে সোজাসুজি প্রভাবিত করতে পারে, প্রত্যক্ষভাবে মানুষের মনে প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁর মঞ্চস্ত নাটকগুলি হল- ‘জ্বালা’, ‘দলিল’, ‘অফিসার’,’ভাঙ্গা বন্দর’, ‘সাঁকো’। কিন্তু এই হাতিয়ারের ব্যবহার বেশিদিন কার্যকরী হল না। তাঁর মনে হতে লাগলো যে নাটক মানুষকে সোজাসুজি প্রভাবিত করলেও সেটি ক্ষনস্তায়ী ও অপর্যাপ্ত। তখন তাঁর মনে হল সিনেমার কথা। কারণ সিনেমা অনেক বড় এবং শক্তিশালী মাধ্যম এবং এটি একসঙ্গে লক্ষ-লক্ষ মানুষের মনে দাগ কাটতে পারে। তাঁর কর্মজীবনে তিনি আটটি পুর্ণদৈর্ঘের সিনেমা এবং কয়েকটি তথ্যচিত্র পরিচালনা করেন। তাঁর সবকটি সিনেমার মধ্যেই চূড়ান্ত বাস্তবতা, নির্মম সত্যতা, অভাব, দারিদ্রতা, দেশভাগ, প্রেম, স্নেহ ইত্যাদি বিষয় উল্লেক্ষ্য ছিল। তাঁর দ্বারা পরিচালিত আটটি সিনেমা হল- নাগরিক(১৯৫২), অযান্ত্রিক(১৯৫৮), বাড়ি থেকে পালিয়ে(১৯৫৮), মেঘে ঢাকা তারা(১৯৬০), কোমল গান্ধার(১৯৬১), সুবর্ণরেখা(১৯৬২), তিতাস একটি নদীর নাম(১৯৭৩), যুক্তি তক্কো গপ্পো(১৯৭৪)। এছাড়াও তিনি ভারতের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রামকিঙ্কর বৈজের উপর একটি তথ্যচিত্র নির্মান করেছিলেন ১৯৭৫ সালে। ভারত সরকারের হয়েও তিনি কয়েকটি তথ্যচিত্র পরিচালনা করেছিলেন। তাঁর এইসব অসামান্য কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে ভারত সরকার ১৯৭০ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেন।তিনি তাঁর এই স্বল্প কর্মজীবনের খানিকটা সময় তিনি কাটিয়েছিলেন Pune Film And Television Institute Of India তে Vice principal এর পদে নিযুক্ত হয়ে। এই সময় তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিখ্যাত কিছু নাম হল- সুভাষ ঘাই, মনি কাউল, রেহানা সুলতানা, কে.টি.জন. প্রমুখ. পুনেতে থাকাকালীন তিনি স্বল্পদৈর্ঘের দু-তিনটি সিনেমা বানিয়েছিলেন। সেগুলি হল- ‘Rendezvous’, ‘Fear’ ইত্যাদি। পুনেতে সরকারী অব্যবস্থার চরিত্র দেখে সেই চাকরিকে ইতি জানিয়ে দিয়ে কলকাতায় ফিরে এলেন।
ঋত্বিক কুমার ঘটক ভারতের প্রথম এবং একমাত্র ‘People’s Artist’ ছিলেন। তিনি নিজের গোটা কর্মজীবনে কখনও নিজের শিল্পীসত্তার সাথে আপোষ করেননি। সিনেমা লোকে বানায় প্রধানত দুটি কারণে- একটি-খ্যাতির বিড়ম্বনা, দ্বিতীয়টি-অর্থাগম। কিন্তু তিনি এই দুইটির কোনটিতেই বিশ্বাস করতেন না. সত্যজিত রায় ও মৃনাল সেনের সমসাময়িক এই মহান পরিচালক কোনদিনই খ্যাতি বা অর্থের লোভে নিজেকে বা নিজের শিল্পীসত্তাকে বিক্রী করতে রাজি হননি। বিভিন্ন পরিচালক, অভিনেতা, সমালোচক, কলাকুশলীদের মতে, ঋত্বিক ঘটক তাঁর চিন্তাভাবনার ধরনের দিক থেকে নিজের সময়ের থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন। তাঁর অনেক কাজই অনেকের কাছে এখনও বোধগম্য হয়নি বলে আমার ধারণা। আশা করা যায় যে, আগামী দিনগুলিতে লোকে তাঁর এক একটি অমূল্য কাজগুলির মূল্যবোধ দিতে পারবে।
বর্তমান ভারতীয় সিনেমা তথা বাংলা সিনেমা একটু বেশিই দক্ষিনমুখী হয়ে পড়েছে। রিমেকপর্ব প্রাধান্য লাভ করায় নতুন সৃষ্টি যেন একটু বেশি পিছপা হয়ে পড়েছে। তবে বলাবাহুল্য, সিনেমার জগতে এই সংকট-দুর্দিনের মধ্যেও ভালো কাজও উপহার হিসেবে পেয়েছি আমরা। এখন আশা করা যায়, যে এই ভালো কাজের সংখ্যাটা যাতে আগামী দিনগুলিতে আরও বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানের পরিচালক, অভিনেতারা রিমেকমুখী না হয়ে যেন সৃষ্টিমুখী হয় তাহলেই ভারতীয় সিনেমা তথা বাংলা সিনেমার সার্থকতা।
এই মহানপরিচালক তথা নাট্যকার শ্রী ঋত্বিক কুমার ঘটক ১৯৭৬ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী কলকাতায় তাঁর শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন।
বি.দ্র.- ‘মানুষের জন্য ছবি করি। মানুষ ছাড়া আর কিছু নেই। সব শিল্পের শেষ কথা হছে মানুষ। আমি আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় সেই মানুষকে ধরবার চেষ্টা করি. মাধ্যমটা কোনো প্রশ্নই না। আমার কাছে মাধ্যমের কোন মুল্য নেই। আমার কাছে বক্তব্যের মুল্য আছে. কারণ- বক্তব্যটা মানবদরদি। তাই কাল যদি সিনেমার চেয়ে কোন ভালো মাধ্যম পাই, তাহলে আমি সিনেমাকে লাথি মেরে চলে যাব।’
‘আমৃত্যু আমার জীবনে আপোষ করা সম্ভব নয়. সম্ভব হলে তা অনেক আগেই করতাম। আপোষ করলে হয়তো কিছু পয়সা পাওয়া যেত, কিন্তু তাঁর চোরাগলিতে জীবন থাকতে নিজেকে পাচার করতে পারব না।’
-‘ঋত্বিক কুমার ঘটক’
Content Writing : Aritra Banerjee Original Copyright © 2014-2015 LaughaLaughi.com Picture Courtesy : Google
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.