LaughaLaughi

You Create, We Nurture

Travel

বকখালি সমুদ্র সৈকত

ঘোরার কথা বললে নাক সিঁটকোয় এরকম মানুষ বোধহয় সংখ্যায় খুব কম, আর তা যদি হয় কোনো সমুদ্র সৈকত বা সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল সবসময়ই একপায়ে রেডি আমরা। কমখরচে, আশেপাশে একটু সামুদ্রিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য অন্যতম স্থান হল- ‘বকখালি’।

কলকাতা থেকে সামান্য কিছু দুরত্বে অবস্থিত এই জায়গাটা আমাদের মনকে প্রকৃতির অনেকটা কাছে এনে দেয়। শিয়ালদহ থেকে নামখানা লোকালে চেপে নামখানা স্টেশনে নামলেই গন্তব্যে মোটামুটি পৌঁছোনো যায়। যদি সকাল সকাল বেরোনো যায় তবে খুব ভালো হয়। যাই হোক, নামখানায় নেমে প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরোলেই অনেক টোটো, ভ্যান রিক্সা পাওয়া যায়, তাতে করেও বকখালি যাওয়া যায় কিন্তু সেটা সময়সাপেক্ষ। আর যদি চটজলদি পৌঁছে যেতে চান তবে তো বাস আছেই। আমরা যে সময় গিয়েছিলাম বাসটা কোনো কারণবশত ছিল না সেইদিন অগত্যা আমরা সময় নিয়েই ভ্যানরিক্সায় গিয়েছিলাম। রাস্তায় যেতে যেতে সমুদ্র তীরবর্তী গ্ৰাম বাংলার মানুষের জীবন যাপনের রেশ দেখা যাচ্ছিল। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যে সাইক্লোনগুলো আসে আর তার যে ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে তার চিহ্নও আমরা দেখতে পাই।

সেইসব দেখতে দেখতেই আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের হোটেলে। সমুদ্রের পাশেই হোটেলগুলো অবস্থিত হওয়ায় হোটেল থেকেও প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। আমরা গিয়েছিলাম শীতের দিকে তাই ওখানে বেশি ঠান্ডা বা গরম কোনোটাই ছিল না তবে রাতের দিকে হালকা শীতের পোশাক পড়লে আরামদায়কই হবে। ওখানে প্রচুর আমিষ-নিরামিষ হোটেল আছে চাইলেই আপনি খেতে পারেন বাঙালি সুস্বাদু খাবার।

বকখালির সৈকত আর পাঁচটা সমুদ্র সৈকত থেকে আলাদা(ব্যক্তিগত মত)। ভীষণ শান্ত, নিরিবিলি একটা পরিবেশ। দেখেই মনমুগ্ধকর সেই লাইনটা মনে পড়ে- “আহা! কী দেখলাম! জন্ম জন্মান্তরে ভুলিব না।” (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়- ‘কপালকুণ্ডলা’) সারাদিন সেই তপ্ত বালুর মধ্যে দিয়ে দূরের সমুদ্রের দিকে যতোই এগোনো যায় এক অপরূপ মোহ ভালোবাসা যেন আরো কাছে টেনে নিয়ে যায়। সূর্যের আলোটা যখন সমুদ্রের ওপর পড়ে সমুদ্র দেখতে কোনো স্বর্ণ অলংকারের মতোই লাগে। শীতের হিমেল হাওয়ার সাথে যখন আস্তে আস্তে সমুদ্রের জলটা পায়ে এসে ঠেকে, সে এক দারুণ অনুভূতি! এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলা যেতেই পারে, আমরা যে সময়ে গিয়েছিলাম সমুদ্র অনেকটা দূরে ছিল দুপুরের দিকে কিন্তু বিকেলের দিকে তা এগিয়ে আসতে আসতে চরে এসে ঠেকে। তখন সমুদ্রের গর্জন শোনা যায়। বিকেলের দিকে চরে অনেক সামুদ্রিক মাছ, অক্টোপাস ইত্যাদি খাবারের মেলা বসে চাইলে সেখানে খাওয়া যেতেই পারে। বিকেলে ওখানে খাওয়া দাওয়া করে রাতের দিকে আমরা হোটেলে ঢুকলাম সেদিনের মতো রাত নিষ্পত্তি হল। পরের দিন সকালে উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আবার সমুদ্র ভ্রমণ অল্প সময়ের জন্য। আসার পথে একটি বড় মন্দির আছে সেটি দর্শন করলাম। এছাড়াও বকখালিতে একটি বড় ফরেস্ট পার্ক আছে যেখানে বিভিন্ন জীবজন্তু, মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

সেদিনের মতো ঘোরাঘুরির পাট চুকিয়ে আমরা বাস ধরলাম নামখানায় ফেরার সৌভাগ্যবশত বাস চালু হয়ে গিয়েছিল। মনে এক শান্ত সমুদ্র আর তার চারপাশের মনোরম দৃশ্য নিয়ে। শহরের ব্যস্ততম জীবনে এই এক-দুদিনের ছোট্ট ভ্রমণগুলো মনে গেঁথে থাকে।

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

লেখালেখির সাথে যুক্ত হতে হতে কখন যে সেটা জীবনের অংশ হয়ে গেছে আর বোঝা হয়ে ওঠেনি। প্রতিদিনের জীবনের অংশ লেখালেখি।