Happy Bornday

ওরা পাঁচ জন। দীপ,জিৎ,প্রভাস, স্নেহাশীষ আর অভীক। কলকাতায় পড়াশোনা করতে এসে ওদের আলাপ। তার পর থেকে একসাথেই থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমোতে যাওয়া অব্দি সব কাজ একসাথেই করে। জাঙ্গিয়া আর গার্লফ্রেন্ড ছাড়া এমন কোনো জিনিস নেই যেটা ওরা শেয়ার করেনা। বেশ ভালোভাবেই কাটছিলো দিনগুলো। কিন্তু বাঁধ সাধলো ফ্ল্যাটের মালিক। আগাম কোনো নোটিশ ছাড়াই কয়েকদিন সময় দিয়ে ফ্ল্যাট ছাড়তে বলে দিলো। তাতে অবশ্য তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। এরকম এর আগেও হয়েছে। এখন কলকাতায় ঘর পাওয়া তেমন কোনো ব্যাপার না। পেয়েও গেলো একটা ঘর। একটা রবিবার দেখে সবাই হই হই করে নতুন ফ্ল্যাটে শিফ্ট করে গেলো।
খুব কমদামে ফ্ল্যাট টা পেয়ে গেছিলো। মাত্র নয় হাজার টাকায় তিন কামরার ফ্ল্যাট পেয়ে কেউ আর দেরি করেনি। এক কথায় সবাই রাজি হয়ে গেছিলো। একটু ভেতরে বাড়িটা,একদম পাড়ার শেষ প্রান্তে। তবে চারিদিক বেশ ফাঁকা। পাড়ার লোক খুব একটা এদিকে আসেনা। বাড়ির পিছনটা দখল করে রয়েছে বিশাল একটা কচুরিপানার ক্ষেত। তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে একটা নেড়া বট গাছ। এক নাগাড়ে অনেক্ষন ধরে তাকিয়ে থাকলে কেমন যেন অস্বস্তি হয়। জিৎ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নেড়া গাছ টার দিকে তাকিয়ে বসে একটা অবজ্ঞা সূচক মুখ ভঙ্গি করে বাথরুমের দিকে চলে গেলো। তখনও সবাই ওঠেনি ঘুম থেকে । বেসিনের সামনে লাগানো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত মাজছিলো। জিতের রুমের দরজা দিয়ে বেরিয়েই সামনে বেসিন। বেসিনের আয়নায় রুমের খাট টা স্পষ্ট দেখা যায়। চোখ থেকে তখন ও ঘুমের রেশ কাটেনি। আনমনা ভাবেই আয়নার দিকে তাকিয়ে ছিল হঠাৎ আয়নায় দেখলো একটা নীল রঙের একটা বাক্স আয়নার বিপরীতে থাকা ওর খাটে রাখা আছে। জিৎ চমকে গিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে খাটে কিছুই নেই। আবার আয়নার দিকে ফিরে তাকালো, নাহ কোথাও কিছুই নেই। কিন্তু আশ্চর্য , নীল রঙের বাক্স ছিল ওখানে একটা । তাড়াতাড়ি রুমে এসে দেখে অভীক ঘুমাচ্ছে পাশের খাটে। কেমন একটা করে উঠলো মনটা কিছুক্ষনের জন্য। পিছন ফিরে বালিশের পাশে ফোনটা খুঁজতে গিয়ে দেখে সেটা সেখানে নেই। খাটের আসে পাশে,নিচে ,সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ফোন টা না পেয়ে প্রচন্ড রাগ হলো জিতের। চেঁচিয়ে পুরো ফ্ল্যাটে নাচতে লাগলো। সবাই উঠে এলো ঘুম চোখে। সব কিছু শুনে সবাই একটু অবাকই হলো। ওদের মধ্যে কেউ জিনিসটা চুরি করবে এমনি কথা মাথায় আসাও পাপ। হঠাৎ অভীক খেয়াল করলো জিতের মাথার সামনের জানলে একটু ফাঁক আছে। আর জানলা টা রাস্তার দিকে মুখ করা ,যদি কেউ দেয়ালের পাইপ বেয়ে ওপরে উঠে আসে তার পক্ষে ফোন টা হাতানো খুব একটা কঠিন কাজ হবেনা। মনটা খারাপ হয়ে গেলো জিতের। কিছুদিন আগেই নতুন ফোন কিনেছিলো আর সেটা চুরি হয়ে গেলো এই ভাবে?যাই হোক তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে অফিসের দিকে রওনা দিলো সে। মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে জানতে পারলো অটো ধর্মঘট চলছে একটাও অটো যাবেনা।
কোনোরকমে একটা ট্যাক্সি অতি কষ্টে দাঁড় করলো জিৎ। ট্যাক্সিওয়ালার আবার বিশাল মেজাজ। যায় হোক বলে কয়ে এবং দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে রাজি করিয়ে ট্যাক্সি তে উঠে বসলো। মনটা এমনিই খারাপ তার ওপর উপদ্রব। কার ভালোলাগে?কার মুখ দেখে যে উঠেছিল কে জানে?অবশ্য কপাল খারাপ থাকলে কি যে হয় আর কেনই বা হয় কিছুই বোঝা যায়না। কিছুক্ষনের মধ্যেই অফিসে এসে ট্যাক্সিটা অফিসের সামনে এসে দাঁড়ালো। ভাড়া মিটিয়ে অফিসের গেটের দিকে এগোতে লাগলো জিৎ। কিন্তু অফিসে চত্বর এতো ফাঁকা কেন আজ?
কিছুটা এগিয়ে গেলো আরো। নাহ কাউকে তেমন দেখতে পাচ্ছেনা। ছোট গেটটা খোলা শুধু ,বড় গেট টা খোলেনি আজ।
এক ঝটকায় জিতের মুখ লাল টকটকে হয়ে উঠলো। নিজের গালে নিজেকে একটা কষিয়ে চড় মারতে ইচ্ছে করলো। আজ তো ঈদ। ছুটি। আর সে এসেছে অফিসে। রাগে কষ্টে দুঃখে কি করবে বুঝতে না পেরে সামনের ফাঁকা রাস্তায় হাঁটতে লাগলো। গিয়ে বসলো সামনের নির্জন পার্ক এর ফাঁকা বেঞ্চ টায়। নাহ এখন আর বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে নেই তার। সকাল থেকে সত্যিই দিনটা জঘন্যতম কাটছে। সকালে উঠেই আয়নায় দেখ নীল রঙের প্যাকেটটা বার বার চোখের সামনে ভাসছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘটি-গরমওয়ালা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারেনি। করুণ স্বরে লোকটা বললো দাদা নিন না একটু ঘটি গরম। সকাল থেকে বিক্রি হয়নি। জিৎ কিছু না ভেবে নিয়ে নিলো। ধীরে সুস্থে একটা সিগারেট ধরিয়ে লম্বা সুখ টান দিয়ে সামনের ফাঁকা বেঞ্চ টার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। ঐতো সেই নীল বাক্সটা। সকালেই দেখেছে সে। শরীরে কেমন একটা হিমশীতল প্রবাহ বয়ে গেলো। কোথাও কেউ নেই এই বাক্সটা এলো কোথা থেকে। মন কে শক্ত করে উঠে দাঁড়ালো, নাহঃ! জানতেই হবে ব্যাপারটা কি। এগিয়ে গেলো বেঞ্চটার দিকে,হ্যাঁ এই বাক্সটাই দেখেছিলো সকালে খাতের ওপরে। কোনো তফাৎ নেই। অবিকল একরকম। হার্টবিট বেড়ে গেছে বেশ কিছুটা,চারিদিক তাকিয়ে দেখলো কোথাও কেউ নেই। আস্তে করে হাতে তুলে নিলো বাক্সটা। সুন্দর ভাবে নীলরংয়ের র‍্যাপারে প্যাক করা রয়েছে। কি থাকতে পারে এতে?নাঃ আর মাথা কাজ করছেনা। এক ঝটকায় ছিড়ে ফেললো র‍্যাপার টা।ভিতরের জিনিসটা দেখে চমকে উঠলো জিৎ। এটা কি?এটাতো সেই ঘড়ি টা যেটা ও আগের মাসে সাউথ সিটি তে দেখেছিলো। ‘মার্ক ইকোর’ সেই দামি ঘড়িটা। এই মাসেই কিনে ফেলতো। আগের মাসে টাকা ছিলোনা হাতে। ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়ার চক্করে অনেক টাকা বেরিয়ে গেছিলো। তাই দেখে পছন্দ হলেও সেটা আর নিতে পারেনি। ওর বরাবর ই ঘড়ি খুব পছন্দের জিনিস। কিন্তু এটা এখানে এলো কি করে? ঘড়িটা হাতে নেয়ার সাথে সাথেই কিল চড় থাপ্পর ঘুসি লাথি সব একসাথে আঁচড়ে পড়লো ওর পিঠে। হকচকিয়ে কেঁদে ফেলে তারস্বরে চেঁচাতে লাগলো, “দাদা আমি চুরি করিনি। “
অত্যাচার যখন থামলো তখন সে অবাক। সামনে দাঁড়িয়ে অভীক ,স্নেহাশীষ ,প্রভাস আর দীপ। জড়িয়ে ধরলো সবাই মিলে। সবার মুখে তখন একটাই কথা, “Happy BORNDAY asshole” দীপ পকেট থেকে ফোন টা বের করে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,”কাল ডিনারের পরই বাগিয়ে নিয়েছিলাম। মাগা ঈদের দিন অফিসে এসেছে।”
জিৎ দাঁত কেলিয়ে,”জন্মদিনটা ভুলেই গেছিলাম। “
অভীক খিঁচিয়ে বললো,” নাটক মেরে ইমোশনাল হতে হবেনা,লাল পাতি ছাড় দেখি একটা,’রাম পুজো’ অনেকদিন হয়নি।”
জিতের মুখ হাসি কান্নায় ঢাকা পড়েছে। সবাই এবার হাঁটা লাগালো সামনের অফ শপ
টার দিকে।
কয়েকটা টুকরো কথা ভেসে আসছিলো, শালা জানলি কি করে ঘড়ি টা আমার পছন্দ? .
-তোর শ্বশুর এসে কানে কানে বললো।
-ভীতুর ডিম,শালা একবার টোপ ফেললাম সকালে ভয়ে শুকিয়ে গেছিলো।
-মাগা টা কিরে দীপ?
-মেয়েরা মাগী হলে ছেলেরা মাগা হবেনা কেন?
-ভাই ভাই এটা শোন, “দেখ ছেলেরা মেয়েরা যদি মাল হয় তোরা কি ?মাল গাড়ি?”
-‘লাফালাফি’ টা মার্কেটে এসেছে নাকি? এদেরও আমাদের মতো কোনো কাজ নেই সিওর।
-হা হা হা হা হা। …….

Facebook Comments Box
Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Recent Posts

Frustration Turned To Calmness, Thanks To These Websites

The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…

3 weeks ago

SVF Music Unveils April Edition of “Banglar Gaan Indies”

Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…

5 months ago

Mimi Chakraborty and Nabila to Star Alongside Shakib Khan in ‘Toofan’

Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…

6 months ago

Why Does a Rich Chicago Law Firm Keep Suing Indian Tribes?

This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…

10 months ago

Anupam Roy’s ‘Aami Sei Manushta Aar Nei’ is a Musical Masterpiece

In a spectacular celebration coinciding with the birthday of the iconic actor Prosenjit Chatterjee, the…

12 months ago

অনুষ্কা পাত্রর কণ্ঠে শোনা যাবে দে দে পাল তুলে দে

হিমেশ রেশামিয়ার পর সুরাশা মেলোডিজ থেকে অনুষ্কা পাত্রর নতুন গান পুজো আসছে মানেই বাঙালির নতুন…

12 months ago