বিলবোর্ডে বড় বড় অক্ষরে লেখা ” সরকার কর্তৃক পরিত্যক্ত সম্পত্তি ” লেখাটা দেখেই রুহির চোখে অন্ধকার ছেয়ে গেলো। ক্ষণিকের জন্য সে সম্ভিত হয়ে গেলো। পরিত্যাক্ত জমি! কিভাবে সম্ভব? একরাতে সব গায়েব কিভাবে হয়ে যায়? কিছু একটা ঘটছে। সে জানে না। সে লোকটাকে জিজ্ঞেস করবে ভেবে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো, লোকটা নেই। এতো দ্রুত লোকটা কোথায় চলে গেলো? চারপাশ ভালোভাবে যাচাই করে দেখছে রুহি।কিছুই পেলো না। সে এখন কি করবে? যাও একটা মানুষের সন্ধান পেলো তাও আবার হারিয়ে গেলো। বিলবোর্ডের দিকে আবার তাকালো রুহি। সেখানে অদ্ভুত একটা লোগো দেখতে পেলো। বিলবোর্ডে লোগো থাকাটা সাধারণ হলেও লোগোতে অক্ষর লেখা, না চিহ্ন কিছুই বুঝতে পারছে না। সে হতাশ, ক্লান্ত এবং বিভ্রান্ত হয়ে ইউনিভার্সিটির বিল্ডিংয়ের দিকে এগোতে লাগলো। মাথা নিচু করে সে হাঁটছে। পুরো শরীর ঝিমিয়ে গেছে। তবুও সে হাঁটছে। হঠাৎ করে শীতল বাতাসে তার শরীরে কাঁটা দিচ্ছে। হঠাৎ এতো হিম ধরা বাতাস আসছে কেন? আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনে এখন আর অদ্ভুত লাগছে না তার কাছে। কারণ কিছুক্ষন আগে, এই ঘন্টাখানিক আগেও দুবার আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়েছে। একবার বৃষ্টি আবার রোদ। তাই আবহাওয়াটা এতো গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না তার কাছে। মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরছে। কি হচ্ছে তার সাথে? এই রাস্তা যেখানে ভরে মানুষ গদগদ করছিল কালকেও কয়েক ঘন্টার মধ্যে এই রাস্তায় কোনো মানুষই নেই? এতো বিশাল বিশাল বিল্ডিং, একটা পার্ক, ছোট ছোট কিছু স্ট্রিট ফুডের দোকান কিছুই নেই। কি হয়েছিল গত রাতে? এই পুরো এলাকা কিভাবে পরিত্যাক্ত সম্পত্তি হয়ে গেলো? এসব প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ক্লান্ত শরীর আরো ক্লান্ত হয়ে পরছে। সে থমকে দাঁড়ালো এবার। আকাশ থেকে বরফ কুচি ঝড়ে পরছে। বরফ! হোয়াট দা হেল! এখানে বরফ কিভাবে পরতে পারে? জীবনেও যে আকাশ ভেঙ্গে বরফ পরতে দেখে নি, সে হঠাৎ বরফ পরতে দেখলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেত। কিন্তু রুহির রাগ লাগছে। প্রচন্ড রাগ। দাত কিটকিট করছে সে রাগে।একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে ফের হাঁটবে কি না রাগে সে ফেঁটে পরছে। তার উপর, তার কাছে কোনো শীতের কাপড়ও নেই। এতো শীত! ” হে প্রভু কি দেখাচ্ছে তুমি আমায়? ” সে মাথা উচুঁ করে আবার হতবাক হয়ে গেলো। রাত হয়ে গেছে। এইবার রাগের মাত্রা দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। নিজের মাথায় দুহাত দিয়ে চুলগুলো টেনে ধরলো আর চিৎকার করে বসে পরলো। রুহি জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো। তার হাত পা কাঁপতে লাগলো।
মানুষের মস্তিষ্ক যখন কোন কারণে ক্লান্ত হয়ে যায় তখন অনেক কাছের মানুষদের কথা মনে পড়ে, মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা বিষাদ জেগে উঠে। সেসময় হরমোনাল কারণেই নানান আবেগের সঞ্চার ঘটে। ঠিক তেমনি হলো রুহির সাথে।
রুহির মায়ের নাম তুলি ছিল। সেও ফিজিক্স পড়তে ভালোবাসতো। বাবা যখন তাদের ছেড়ে চলে যান অন্য শহরে, তখন তুলি রুহিকে নিয়ে অনেক ঘুরতে বের হতো। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সেখানে ছোট ছোট ঘটনার মাঝের বিজ্ঞানের গল্প শুনাতো। ছোটবেলায় এসব কল্পনার অংশ ছিল। বড় হতে হতে অনেক কিছু বদলে যায়। ম্যাথ এর জটিল সূত্র মনে রাখার চেয়ে বেশি ভালো লাগতো ফ্রেন্ডের জন্মদিনের পার্টি। এইভাবে ছোট ছোট ব্যপারে মায়ের সাথে ঝগড়া, আর দূরত্ব সময়ের স্রোতে বেড়ে যেতে লাগলো।এতটাই বেড়ে গেলো যে মায়ের ব্রেন ক্যান্সার যে কখন লাস্ট স্টেজে চলে আসছে তা সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না রুহির। মায়ের মৃত্যুতে ভেঙ্গে পরা রুহিকে রঞ্জন স্যার আবার উঠে দাঁড়াতে শেখালেন। বিজ্ঞানকে ভালোবাসতে শেখালেন। রঞ্জন স্যারের হাত ধরে অনেক দূর হাঁটার পর, স্যারের ছায়াটাও মাথার উপর থেকে চলে যায়। স্যার বলতেন,” সৃষ্টিকর্তার চেয়ে বড় বিজ্ঞানী আর কেউ নন। তাঁর সৃষ্টি করা সবকিছুই বিজ্ঞান। আর তাঁর সর্ব শ্রেষ্ঠ ডিভাইস হচ্ছে মানুষ।” রুহি জিজ্ঞেস করতো, “মানুষ কিভাবে স্যার?” স্যার বলতেন,” মানুষের ব্রেন, পারবে না এমন কিছুই নেই। এতটা বিজ্ঞানভিত্তিক কাজ করে এই ব্রেন,যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। এই ব্রেন এমন এক ইঞ্জিন যাকে যত বেশি পরিশ্রম করাবে ততবেশি কাজ করে দিতে পারবে। ব্রেনকে কাজে লাগানো শিখতে হবে।”
স্যারের বলা অনেক কথাই রুহির জীবনে অনেক উন্নতির কারণ হয়েছে। আর মায়ের ভালোবাসাকে নিজের ভালোবাসায় পরিণত করতে সে লেগে পরেছিল।
এই মুহূর্তে মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। চোখ ভিজে গেছে। হাতে এতটা শক্তি নেই যে দুহাত দিয়ে চোখ মুছবে।ক্ষীণ শব্দে সে বলছে,” মা… মা “। অঝোরে অশ্রু বিসর্জনের পর রঞ্জন স্যারের একটা কথা হঠাৎ মাথায় এলো,” ব্রেনকে যত বেশি পরিশ্রম করাবে সে ততো কাজ করে দিতে পারবে “। স্যারের এই কথা যেন তার কানে বাজতে লাগলো। যেন স্যার তার আশেপাশে দাঁড়িয়ে তাকে সেই কথাগুলো বলেছেন। একটা অলৌকিক শক্তি অনুভব করতে লাগলো রুহি। এই অনুভূতি কোন অলৌকিক শক্তি নয়। বরং তার মস্তিষ্কের দেয়া শক্তি। যা সেই নির্দিষ্ট মুহূর্তে অলৌকিক শক্তির মত মনে হচ্ছে। যেন সেই শক্তি তাকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিচ্ছে। সে উঠে দাঁড়ালো। আবার হাঁটতে শুরু করলো। আকাশ ভেঙ্গে আবার বৃষ্টি পরতে লাগলো। তবুও সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তা দিয়ে সে হেঁটে যাচ্ছে। দূর থেকে আলো দেখা যাচ্ছে। ইউনিভার্সিটির মেইন গেটে দুটো সোলার লাইট আছে। সেই লাইট জ্বলছে।সে গতিবেগ বাড়িয়ে দিল। কিছুক্ষনের মধ্যেই সে পৌঁছে গেলো গেটের সামনে। হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এখন অনেকটুকু শান্তি অনুভব করছে রুহি। সে ল্যাবের ভিতরে গেলো। এইবার তার মনে পরলো, ল্যাব তো ঠিক তেমনি আছে যেমন সে দেখেছিল। তবে ল্যাবের বাইরেই সব এমন পরিবর্তন কেন হলো? হঠাৎ মনে পড়লো তার মোবাইলটা না ছিলো টেবিলে? সে টেবিলের কাছে গিয়ে দেখলো মোবাইল আছে। কিন্তু মোবাইল সুইচড অফ। সে তো মোবাইল অফ করে নি! যাই হোক সে মোবাইল অন করলো। তার মোবাইলে কোন সিগন্যাল দেখাচ্ছে না। সে কন্ট্যাক্ট থেকে প্রথম নাম্বারটা ডায়াল করে কল দিলো। কিন্তু কলটা গেলোই না। অন্যান্য নম্বরেও ঠিক একই অবস্থা। কল যাচ্ছে না। এবার বিচলিত হয়ে গেলো রুহি। সে সোবহান স্যারের নম্বরে একটা মেসেজ লিখলো,” স্যার আমি আটকে গেছি। কি হচ্ছে বুঝতে পড়ছি না। হেল্প লাগবে স্যার, প্লিজ।” মেসেজটা যেই সেন্ট করলো কিন্তু মেসেজটা গেলো না। বরং উল্টো মোবাইলটা অফ হয়ে গেলো।
“ধ্যাত! ”
হলদিয়াতে পেট্রোকেমিক্যাল কারখানা শুরু হওয়া থেকে সিঙ্গুর থেকে টাটাদের চলে যাওয়া। বান্তলা থেকে ধান্তলা, ওদিকে…
A storm is brewing this Puja. The poster of Raghu Dakat has been revealed, and…
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
This website uses cookies.