মা

মা – এই শব্দটা সবার কাছে খুব দামী। একটা কোআদর আবদার সহবত ও ভালোবাসায় ঘেরা ডাক নাম। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। মানে আমাদের গল্পের নায়িকার ক্ষেত্রে। গল্পানুসারে কাহিনীটি রসদগ্রাহি না হলেও এর বাস্তব ভিত্তি অনেক খানি। তাহলে প্রথম থেকে বলি, আমার গল্প একটি মেয়েকে নিয়ে। তার জন্ম হয় মামাবাড়িতে। বাবার পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে প্রথম এবং শেষ কন্যা সন্তান। কিন্তু তার ঠাকুমা তাকে কিছুতেই মেনে নিতে রাজি না। একে তো মেয়ে তার উপর কালো। জন্মের পর থেকেই তার মাকে তার জন্য নানা কথা শুনতে হয়। তারপরই মেয়েটির একটি নাম হয় ‘অপয়া’ এবং সেটি মার থেকে তার প্রাপ্তি । এমন কোনো দিন নেই যে সে বড় হওয়ার পথে মা- এর হাতে মার খায় নি। কারণে অকারণে চড়, থাপ্পড়, লাথি, এমনকি মুখে নেকড়া গুঁজে অসহ্য যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। কোনো দিন স্কুলে গিয়ে সে পরে যাবার অজুহাত দেয় বা কোনোদিন সাইকেলে ধাক্কা। অনেক স্কেল, ঝ্যাঁটা ভেঙেছে অপয়ার জন্য ওর মায়ের। মেরে নুন লঙ্কা ডলে কানে তুলো গুঁজে বসে থাকতো ওর মা। কারণ মেয়ে তর অপয়া। জন্মের পরই তার জন্য তার মা বাবাকে অযাচিত সম্পত্তি থেকে বাতিল করা হয়।

অপয়া আস্তে আস্তে বড় হল, বাড়িতে যা কিছু ঘটতো তার মা তার নামেই দোষ দিত। মামা বাড়ির দাদু ডায়রিয়ায় মারা যায় তাও নাকি অপয়ার জন্য। সতেরো বছর বয়সে অপয়া একটা ভালোবাসাকে আকড়ে ধরতে চাইল। কিন্তু ওই যে ওর নাম অপয়া । বাড়িতে জানা জানি হল দু – মাসের মধ্যেই এবং তারপর ওর মায়ের সে কি ভয়ংকর রূপ ধারণ। ওকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলো সতেরো বছরের মেয়েকে সাতাশ বছরের ছেলে দেখতে এলো। তখন অবশ্য ঠাকুরদাদার আলোখ্যে রক্ষা পেল সে। কিন্তু মার হাত থেকে কে বাঁচায় তাকে, তার খাওয়া, কলেজ যাওয়া, বাইরের কারোর সাথে কথা বলা এসব তো বন্ধ করলই এমন কি মানসিক অত্যাচারেও আবদ্ধ হল সে। কিছুতেই বিয়ে করতে চাইলো না তাই তার মা তার গা থেকে সমস্ত গয়না খুলে নিলো প্রথমে কানের দুল, হাতের আংটি, চুরি, আর পায়ের নুপুর সব খুলে তার পরনের নাইটিটা মাঝ বরাবর ছিঁড়ে তাকে ঘরের একতলার সিড়ি থেকে লাঠি মেরে ঠেলে ফেলে দেয়। এর থেকে বেঁচে ফেরার পরও তার মা তাকে থাপ্পড় মেরে মেরে ঠোঁটের কোণা দিয়ে রক্ত বার করে দেয় আর তাঁর আঁচল দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে বলে বিয়ে না করলে তাকে এখানেই মেরে ফেলবে।

অপয়াও এক জেদি মেয়ে তার দাদুর দেখানোর পড়াশোনার স্বপ্নকে চাকরি করে সে সত্যি করতে চেয়েছিল। তাই তার মার দেওয়া এই অসহ্য যন্ত্রণাকে সে তুচ্ছ করেছে। কলেজ যাওয়ার আগে বাড়ির সমস্ত কাজ সেরে তাকে বেরোতে হতো। কারণ মার একটাই শর্ত ছিল রান্না বান্না আর যাবতীয় কাজ সেরেই সে পড়াশুনা করতে পারবে। আর যেদিন সব কাজ সারা না হতো ভাত খেয়ে নয় মার হাতে বটি খেয়ে তাকে কলেজ যেতে হতো।

একদিন অপয়ার মনে পরে দুপুরে যেই ম্যামের কাছে তাকে পড়তে যেতে হবে তার পড়াটাই করা হয় নি। তাই সে বাড়িতে কাজ না করে আগে পড়তে বসে পড়ে। ব্যাস এইটাই তার অপরাধ। তার মা তারপর এমন রিয়াক্ট করতে থাকে যেনো অপয়া কোনো খুন করেছে, এবং তার মা তর্কা তর্কীর বসে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিতে যায় এবং পাড়া প্রতিবেশীদের বলে সে মেয়ের জন্য আত্মহত্যা করতে চায়, তার মেয়ের বিয়ে হয় নি বলে মেয়েটি তাকে বাড়ীতে তিষ্টোতে দিচ্ছে না। অপয়া এই সমস্ত দেখে রাগে ঘৃণায় তার খাটের পাশে জানালায় যত সম্ভব গায়ের জোড়ে মাথা ঠোকে এবং শুধু একবারেই তার মাথা ফেটে অঝরে রক্ত ঝরতে থাকে। মুহূর্তেই তার বালিশ, বিছানার চাদর আর দেওয়াল রক্তাক্ত হয়ে পরে। তার মা তার অবস্থা দেখে নিজের নাটক বন্ধ দেয় এবং প্রতিবেশিরা এসে তার মাথা ধুয়ে ব্যান্ডেড লাগিয়ে দেয়। অপয়া ভাবলো যে পড়ার জন্য এতো ঝামেলা সেই পড়া ও সম্পূর্ণ করবেই , জেদ করে চলে গেল পড়তে, ট্রেনে উঠে মাথা থেকে ঝড় ঝড় করে আবার রক্ত পরতে শুরু হল। এবং সে মাথা ঘুরে পরে গেল , সহপাঠীরা তাকে কাছের হসপিটালে ভর্তি করলো। ডাক্তার জিজ্ঞাসা করলো “এসব কী করে হলো?” অপয়া অর্ধচেতন নিয়ে বললো “কল পারে পরে গেছি”। তারপর সব নিস্তব্ধ।

হয়তো ওর মা এখন বাড়ির দেওয়াল থেকে ওর রক্তটা মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। হয়তো বিছানার চাদর কেচে সব নতুন করে পাতছে। হয়তো- এই শব্দতেই আটকে গেছে কতো মেয়ের জীবন। হয়তো অপয়ার মা চাইলেই অপয়া, অপয়া না হয়ে বাবার পাঁচ ভাইয়ের এক মেয়ে রাজকন্যা হতে পারতো। হয়তো ওই রাজকন্যা আজ বেচেঁ থাকতে পারতো। হয়তো না সত্যি রাজকন্যা এখন রাজত্বের অন্ধকারে চাপা পরে গেছে। এখন তার চোখ বুজলেও অন্ধকার চোখ খুললেও অন্ধকার।

 

 

Facebook Comments Box
Haimi Nath

A foodie and a creative blogger, favourite timepass is hangout with siblings, and love to sleep.

Recent Posts

Kolkata to Witness B Praak’s Mesmerizing Performance at ‘Kolkata Odyssey’ on October 20th

The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…

2 months ago

Celebrating Friendship and Togetherness with Pujo Pujo Gondho

In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…

2 months ago

Frustration Turned To Calmness, Thanks To These Websites

The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…

3 months ago

SVF Music Unveils April Edition of “Banglar Gaan Indies”

Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…

8 months ago

Mimi Chakraborty and Nabila to Star Alongside Shakib Khan in ‘Toofan’

Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…

9 months ago

Why Does a Rich Chicago Law Firm Keep Suing Indian Tribes?

This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…

1 year ago