জানালার ভেজানো পাল্লা আর ভোরের সদ্য নাছোড় ঘুম-ভাঙা আলো। মাথার তলায় একটা বালিশ আর লেপের আরামে ব্যাগড়া দেওয়া বিছানা লাগোয়া টেবিলঘড়িটার টিকটিকে অ্যালার্ম। অনেকখানি পৌষের ছড়ানো শীতের কুসুম কুসুম রোদ, সেই সঙ্গে একখানা লাগসই উপমার মতন ধূমায়িত চায়ের কাপ কিংবা একটু আভিজাত্য মোড়ানো ফাঁদালো মুখওয়ালা কফিমাগে জমিয়ে একটা চুমুকের সরব টান। কি, শুনতে তো বেশ সাদামাটাই লাগছে, কিন্তু এমন জুড়িগুলোকে বাদ দিলে শীতের নামগন্ধই থাকে না। চাপাচুপির অন্দরমহল থেকে পা-দুটোকে মার্বেলের মেঝেতে রাখতে না রাখতেই এই যে শিরশিরানিটুকু গায়ে ছারপোকার ছদ্মবেশে উঠে আসে, সেটাই তো আসল চিজ। এই জিনিসটাই তো বাথরুমে যাওয়া থেকে যখন-তখন আমাকে আটকে রাখে। যতক্ষণ না পাশের ঘর থেকে পরিবারের লোকে তারস্বরে ‘এখনও পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস, সাড়ে আটটা বাজতে চলল’ করে বাড়ি মাথায় করে।
এই যে সাদা মনে এত কথা বলছি, এর ফাঁকে একজন কিন্তু আমার দিকে কেমন ঘোলাটে চোখে তেরছানজরে চেয়ে রয়েছেন। এ বছরের মতো তার মেয়াদ ফুরোতে চলল কিনা। তিনি একমেবাদ্বিতীয়ম্, সর্বজনবিদিত আমাদের ইংরেজি ক্যালেন্ডার মহাশয়। আমার হিসেব অনুযায়ী হাজার ব্যস্ততার মাঝেও যখন অন্তত একবার ক্যালেন্ডারের দিকে তাকাতেই হয় – পরীক্ষার আর কটা দিন বাকি, ব্যাঙ্কের চেক লেখার সময়, রান্নাঘরে গ্যাসের সিলিন্ডার পাল্টানোর সময়, প্রিয় সিনেমা বা সিরিজটা কবে মুক্তি পাচ্ছে, জন্মদিন বা বিয়ের নেমতন্ন থাকলে আর সর্বোপরি আপামর বাঙালির মতন সারা বছর ধরে পুজোর দিন গোনা। এ লিস্টে অবশ্য আরও কিছু কমবেশি হতেই পারে।
মোদ্দা কথাটা হল, প্রয়োজন ছাড়া তো ক্যালেন্ডারের খোঁজ কেউ নেয়ই না। তবুও দেওয়ালের ওই নির্দিষ্ট কোণে অহোরাত্র ঘেমে নেয়ে, কখনও বৃষ্টির ছাট সইতে সইতে, পাখার হাওয়ায় এদিক সেদিক উড়তে উড়তে, কখনও বা শীতে ঠকঠকিয়ে কাঁপতে কাঁপতে, ধুলো মেখে তাকে ঝুলেই থাকতে হয়। পরিশেষে আজকের পর অর্থাৎ ডিসেম্বরের একত্রিশের পর সে নিজেকে হয় পুরোনো কাগজপত্রের দলে, বদ্ধ বাক্সে কিংবা নতুন বইয়ের মোড়করূপে আবিষ্কার করে।
এবার আসে ডায়েরি। আমি সেভাবে গুছিয়ে লিখতে পারি না বটে, কিন্তু এমন অনেকেই আছে যারা এই তিনশো পঁয়ষট্টিটা দিন, তাদের জীবনটাকে প্রতি পদক্ষেপে, প্রতিটা সিদ্ধান্তে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছে। শুধু তাই নয়, সেগুলোকে রোজ রাতে শুতে যাওয়ার আগে মনে করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছে ডায়েরির পাতায়, যেন দু-মলাটের সালতামামি। যাতে ফেলে আসা মুহূর্তগুলোকে আবার পরের বছর কোনো অবসরে পাতা উলটিয়ে দেখতে পারে, আরও একটা নতুন ঝকঝকে ডায়েরিতে দু-এক কলম প্রাণভরে লেখার আগে। সুখের দিনগুলোর পাশাপাশি চোখে জল আসার দিনগুলোকেও যাতে আবার পড়তে পড়তে ভবিষ্যতে নিজেকে পরিণত করার লক্ষ্যে কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে।
ছোটোবেলায় ভাবতাম, নতুন বছর এসে গেছে মানে আমাদের ধরিত্রী নিজের অক্ষের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে সূর্যের চারদিকে গোটা এক পাক প্রায় সম্পূর্ণ করে ফেলেছে। ভাবলেই মজা হত। রাতে খেয়েদেয়ে উঠেই রোল করা ক্যালেন্ডারটা কালকে নিজে হাতে টাঙানোর জন্য আবদার জুড়তাম। তা করব না-ই বা কেন, বারো মাসের তেরো পার্বণ তো তারই মধ্যে ঠেসেঠুসে ভরা। সত্যি, জীবন কত ফুরফুরে হালকা ছিল তখন! এখনকার মতো সাড়ে বত্রিশ ভাজা লাগত না মোটেই।
আমার বাড়ির মাস্টারমশাই বলতেন, “পয়লা জানুয়ারিতে সক্কাল সক্কাল উঠে হাত-পা টান টান করে খানিক ব্যায়াম সেরে নিবি। তারপর মুখ-টুখ ধুয়ে পড়তে বসবি। খেলাধুলোটাকে যেন একেবারে বাদ দিয়ে দিসনি। শুরুটা ভালো হলে দেখবি সারা বছরটা ভালো কাটবে। বদভ্যেসগুলো আস্তে আস্তে দূরে চলে যাবে। তুই নিজেই ভেবে দ্যাখ। পরীক্ষার গোড়ার দিকে খাতায় যখন তুই জানা প্রশ্নের উত্তরগুলো না থেমে লিখে ফেলিস, তখন বাকি লেখাগুলোও ভালো হয় কিনা? কারণ তোর আত্মবিশ্বাস সেই সময় তুঙ্গে থাকে…”
প্রত্যেক বছরেই এমন কত অভিজ্ঞতা শুনি গুরুজনদের থেকে, পথেঘাটে যেতে আসতে, কতকিছু নতুন শিখি বয়সে ছোটো ভাইবোনদের কাছ থেকে। ঠিক করে রাখি পরের বছর এটা করব না, সেটা করব না। কিন্তু হয়ে আর ওঠে না। কেননা ভেতরে সেই আত্মবিশ্বাসের অভাব, জীবনে দু-কদম এগোলেই বারবার হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়া। সেই অবস্থাতেই মুখ তুলে একশোবার বলি, বন্ধুদের শোনাই – বুঝলি, এ হল আমার নেক্সট ইয়ারের অঙ্গীকার। অথচ উঠে বসতে বসতেই বড্ড দেরি হয়ে যায়।
নিজের সংকল্প তো নিজেরই, দিনের শেষে জবাবদিহি চাইবে তোমারই অবচেতন মন। কাছের মানুষেরা হাতটুকু বাড়িয়ে দেয় তোমার দিকে, যাতে টাল খেয়ে পড়ে গেলেও যথাসময়ে তুমি সামলে নিতে পারো। এগোতে হবে তোমাকেই, আপন দৃপ্ত পদক্ষেপে ভরসা রেখে।
যাক গে, ওই কে যেন দরজায় টোকা দিচ্ছে। নবীন বোধহয় এসে পড়ল ডায়েরি আর কেক হাতে।…
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.