
॥ ওরাও মানুষ ॥
— ওরে, অ্যাই বেটা, কিছু দে!
হাতে তালি বাজিয়ে স্বাভাবিক মানুষের থেকে কিছুটা হয়তো আলাদা ভঙ্গিতে নিজেদের রুজি-রোজগার ওরা এইভাবেই আদায় করে।
তথাকথিত ভাষায় ওরা ‘হিজড়া’, বা একটু ভদ্রভাবে বলতে গেলে অর্ধনারী-অর্ধপুরুষ। ওদের চালচলন, কথা বলার ভাবভঙ্গী, পোশাকের ধরন সবটাই বেশ কিছুটা আলাদা। সাধারণ মানুষের কথায় মুখে রং-চং মেখে সং সেজে ওরা রোজকার ভীষণ ব্যস্ত মানুষদের উপদ্রব করতে আসে!
সুতরাং বলাই বাহুল্য যে, সাধারণ উচ্চ ভাবনা চিন্তা সম্পন্ন মানুষদের মাঝে তারা নিজেদের স্থান করে নিতে পারেনি। স্থান করে নিতে পারেনি কথাটা অবশ্য আংশিকভাবে ভুল ধারণা, ওদের আমরা কোনোদিন নিজেদের সংস্পর্শে আসার সুযোগই দিইনি। ওরা পৃথিবীর বাসিন্দা হলেও ওদের জগৎটাকে আমরা সম্পূর্ণভাবেই নিজেদের জগৎ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। তাই আমাদের নিত্যদিনের জীবনের মাঝে ওদের সাক্ষাৎ খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত।
ওদের শরীরে নারী বা পুরুষ কোনোটারই চিহ্ন খুব একটা সুস্পষ্ট নয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে গেলে বলা যায় XX প্যাটার্ন ক্রোমোজোমের সৃষ্টির ফলে কন্যা সন্তান এবং XY প্যাটার্ন ক্রোমোজোমের সৃষ্টির ফলে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। পুরুষদের অণ্ডকোষ থেকে নিঃসৃত হয় হরমোন এন্ড্রোজেন ও স্ত্রী দেহের ডিম্বকোশ থেকে নিঃসৃত হয় হরমোন ইস্ট্রোজেন। এক্ষেত্রে যদি কোনো কারণে ভ্রুণের বিকাশকালে XX এবং XY ছাড়া কিছু অস্বাভাবিক প্যাটার্নের (যেমন XXY/XYY) সৃষ্টি হয়, তবে তাদের শরীরে পুরুষ বা নারী কোনোটিরই পুরোপুরি চিহ্ন ফুটে ওঠে না। সেক্ষেত্রে অসম শারীরিক গঠনযুক্ত ‘হিজড়া’ তৈরী হয়।
তাই ওদের পরিশ্রম, কষ্ট, অনুভূতি সবটাই অন্যদের কাছে খুব সস্তা। না! ওদের দেখলে মায়াদয়া আসেনা বিশেষ, বরং পকেট খালি হওয়ার ভয়টা চরম পরিমাণে আসে। কারো কারো তো ওদের ছোঁয়া ভীষণই ঘেন্নার লাগে, তাই সেক্ষেত্রে কোনোরকমে টাকা পয়সা দিয়ে ‘আপদ’ বিদায় করাই শ্রেয় বলে মনে করেন।
আচ্ছা, যদি একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখা যায়, তাহলে এই কথাটা তো স্পষ্ট যে ওদের আমরা ঠিক আমাদের মত মানুষ পরিচয় দিতেই লজ্জা পাই। পেটের দায়ে আমরা সবাই বিভিন্ন জায়গায় কাজ করি কিন্তু ওদের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে আবার আমাদের ঘোরতর আপত্তি। কেন না ওদের শ্রেণীটাকে যে আমরা আমাদের থেকে অনেক নিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে রেখেছি। সমানাধিকার নিয়ে লেখালেখি, তর্ক-বিতর্ক কম কিছু হয়নি কিন্তু কখনো কি আমরা মন থেকে ওদের প্রাপ্য সম্মানটা দিতে পেরেছি?
কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে বা বিশেষ জায়গায় ওদের মুখোমুখি হামেশাই হতে হয় আমাদের।
ধরুন! ভিক্টোরিয়া কিংবা প্রিন্সেপ ঘাটে আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটির সাথে নিদারুণ ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে আছেন, এমন সময় ‘ওদের’ কেউ এসে ওদের সাধারণ ভঙ্গিতে কিছু চাইল। আপনি খুবই বিরক্ত হলেন এবং নিতান্ত তাচ্ছিল্য সহকারে খুচরো কিছু টাকা দিয়ে মানে মানে বিদায় করলেন। এই টুকটাক বিরক্তগুলো করতে ওরা আসলে বাধ্য হয়! কারণ সুস্থ সমাজে অন্যদের মতো খেটে রোজগার করার অধিকারটা থেকে কিন্তু ওরা বঞ্চিত।
বাড়িতে কোনো নবাগত শিশু জন্মালেও ওদের আগমন নিশ্চিত। টাকার দাবি কিছু করলেও শিশুটিকে আশীর্বাদ করতে কিন্তু কিপ্টেমি করেনা ওরা। কিন্তু সেই শিশুটিকেই আবার জ্ঞান হওয়া মাত্র বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে ‘ওরা’ আমাদের কেউ না, এড়িয়ে চলার উপদেশ পায় শিশুটি।
এইভাবে কিছুটা ভয়, কিছুটা অস্বস্তিকে সঙ্গে করে ওদেরকে আমরা কখনোই ঠিক ‘আমাদের’ করে তুলতে পারিনি। তাই তথাকথিত সভ্য সমাজের কাছে ‘ওরা’ আজও অচ্ছুত, গণ্য নয়।।
হলদিয়াতে পেট্রোকেমিক্যাল কারখানা শুরু হওয়া থেকে সিঙ্গুর থেকে টাটাদের চলে যাওয়া। বান্তলা থেকে ধান্তলা, ওদিকে…
A storm is brewing this Puja. The poster of Raghu Dakat has been revealed, and…
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
This website uses cookies.