|| ওদের শৈশব ||
“আজকে মোটে ৪৭!” বলেই একটা জোরে থাপ্পড় এসে পড়ল মুন্নির গালে। তৈরী ছিল না দশ বছরের মেয়েটা, ছিটকে গিয়ে পড়ল ডাস্টবিনটার ধারে। আসলে ওদের রোজ ১০০ টাকা করে তুলে এনে জমা দিতে হয়। না, ওরা কোনো পুজো কমিটির সদস্য নয়, ওরা কোনো চাঁদা তুলতে বেরোয় না রোজ, আসলে এটাই ওদের পেশাবৃত্তি। বস্তিটার কোনো নাম নেই, ওরা সব ওখানেই থাকে।
ওদের সবার একটাই কাজ, আমাদের জাতীয় পেশা মানে ভিক্ষাবৃত্তি। অবশ্য পেটের দায়ে নেহাত ভিক্ষা না করলেই বা উপায় কি! ওদের পরিবার নেই, আপনজন নেই, আছে বলতে শুধু একটুকরো থাকার জায়গা আর দিনে ২ বার খাওয়া সেটাও যদি সে সকাল বিকেল ১০০ টাকা করে আনতে পারে তবেই, নয়তো খাবার পাবে না। তা আজকে মুন্নি মোটে ৪৭ টাকাই জোগাড় করতে পেরেছে, সকালের খাওয়াটা বোধহয় আজকে গেল ওর। থাপ্পড় খেয়ে আর উঠতে পারছিল না কিন্তু এরকম হলে যে রাত্রের খাওয়াটাও পাবেনা। অগত্যা হাতের জোরেই উঠে দাঁড়াল। খালি পেটে কি আর বেশিক্ষণ পারে, একটু হেঁটেই আবার বসে পড়ল একটা বড়ো রেস্টুরেন্টের বাইরে, কি একটা ইংলিশে লেখা, একটু একটু বুঝতে পারল নামটা।
আসলে ৮ বছর অবধি ও একটা প্রাথমিক স্কুলে পড়ত, তারপর একদিন বাবা এখানে নিয়ে এসে বলেছিল, “আজকের দিনটা থাক, পরের দিন আসব আবার”। সেই পরের দিনটা আর কোনোদিনও আসেনি। প্রথমে বোঝেনি ও, আশা করে থাকতো প্রতিদিন কবে আসবে ওরা, পরে জানতে পেরেছিল ওকে নাকি সারাজীবনের জন্য দিয়ে গেছে এখানে কিছু টাকার বিনিময়ে। সেইদিন থেকে ওর আর কোনো বাবা মা নেই, নেই কোনো আপনজন।
যাই হোক অতিকষ্টে সে রেস্টুরেন্টের নামটা কিছুটা উদ্ধার করল ‘বারবিকিউ নেশন’। বেশ বড়ো রেস্টুরেন্ট, কাঁচ দিয়ে ঢাকা পুরো, ভেতরে অনেক খাবার, কয়েকজন সাদা কালো কোনো জামা পড়ে টেবিলে টেবিলে ঘুরছে, বাকিরা বসে আছে। কিছু জন আবার ও দেখছে বলে নিজেদের মধ্যে কীসব আলোচনা করছে, হঠাৎ করে হইহই করে সাদা কালো জামা পড়া একটা কাকু তেড়ে এল ওর দিকে। এই সময় কী করতে হয় মুন্নি জানে, এক নিমেষে দৌড় মারল ওখান থেকে তবে কিছুটা গিয়েই হাপিঁয়ে বসে পড়ল। আর দিচ্ছেনা শরীরটা, এবার একটু বিশ্রাম চাই ওর। ছোটোবেলায় মা বলেছিল, “কখনো হার মানবিনা, জানবি গাঢ় অন্ধকারেও আলো থাকে।” আজকে মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে ওর। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে ও।
মাইকের শব্দে ঘুম ভাঙে, বিকেল হয়ে গেছে, খুব একা লাগছে আজ ওর, রাত্রেও হয়তো না খেয়েই থাকতে হবে! মাইকের কথাগুলো শুনতে পেল ও, “আর ৪০ মিনিট ভোগ দেওয়া হবে। তারপরে আর দেওয়া হবে না। যারা মায়ের প্রসাদ নিতে আসছে তাড়াতাড়ি আসুন।” সত্যি অন্ধকারে আলোই দেখল ও। দে দৌড় প্রসাদের কাছে, তবে বিপত্তির শেষ নেই, ওর নোংরা জামাকাপড় আর মুখটা দেখে প্যান্ডেলের একটা কাকু ওকে তাড়িয়ে দিল। এবার আর পারছেনা ও, দম শেষ হয়ে আসছে, বসে পড়ে আবার ওখানেই। চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে আসছে। কে যেন ওকে ডাকলো, আবছা দৃষ্টিতে তাকালো, কেউ ওকে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করছে কিন্তু সেটা শুনে উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা নেই ওর। মুখে এক ঝাপটা জল এসে পড়ল কোথা থেকে, এবারে যেন একটু হুঁঁশ ফিরল ওর। সামনে একটা কাকু হাতে খিচুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, এক মুহূর্তও দেরী না করে রীতিমতন খিচুরিটা ছিনিয়ে নিয়ে খেতে শুরু করে দিয়েছে ও। পুরোটা শেষ করার পর যখন উপর দিকে তাকালো ও, ওই কাকুটা আবার একবাটি খিচুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এবারে ভালোভাবে দেখল লোকটাকে, পাকা চুল, চোখে মোটে ফ্রেমের চশমা, ওর থেকে অনেক বড়ো। একদৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে আছেন ভদ্রলোক। কিন্তু খিদেতে মরে যাচ্ছে ও, আর কিছু না ভেবে ওই খিচুরিটাও নিয়ে গোগ্রাসে খেতে শুরু করল। ওর ওটা শেষ হওয়ার আগেই কাকুটা আবার একবাটি এনে দিল। তৃতীয় বাটি শেষ করেই দেখে সন্ধে হয়ে গেছে, সাতটার মধ্যে ডেরায় ফিরতে না পারলে আজকে ডেরার মালিকের সাথে শুতে হবে, এটাই ডেরার নিয়ম। ভেবেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল ওর। ওই কাকু রাত্রি হলেই ওর পোশাক খুলে নেয়, তারপর ওর শরীরের নীচের দিকে কীসব করে মুখ আর হাত দিয়ে। ওর খুব কষ্ট হয়, পাগলের মতন চ্যাঁচাতে থাকে, তখন একটা মোটা হাত এসে ওর মুখটা চেপে ধরে, ওর তখন আর ওই দানবীয় শক্তির সাথে লড়বার ক্ষমতা থাকে না। প্রচণ্ড কষ্টে শুধু পাগলের মতন কাঁদতে থাকে, লোকটা ছেড়ে দেওয়ার পর ওর বিছানাটা রক্তে লাল হয়ে যায়। ওই কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা নেই ওর, তাই এক দৌড় লাগাল ডেরার দিকে। হয়তো ওই কাকুটা কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু সেটা শোনার সময় আর ওর নেই। আজকে বিকেলে ওর ১০০ টাকা তোলা হয়নি তাই নিয়ম মতন খাবার পাবেনা। তবে আজকে ওর পেট পুরো ভরতি, তাই খাওয়ার চিন্তা না করেই ছুটেছে ও।
হয়তো ও সাতটার মধ্যে পৌঁছেও যাবে, হয়তো আজ ১০০ টাকা না দিয়েও ভরতি পেটে ঘুমাতে পারবে, হয়তো ওকে আজ সেই দানবীয় শক্তির সাথে লড়তে হবেনা, তাই হয়তো আজ ও একটা শান্তির ঘুম ঘুমাবে। কিন্তু ওর মতনই আরো হাজার হাজার মেয়ে এভাবেই তাদের দিন কাটিয়েছে, সবাই কি এভাবেই চশমা পড়া ভদ্রলোকের সাহায্য পায়? সবাই কি এভাবেই ওই দানবগুলোর থেকে মুক্তি পায়? সবাই কি এভাবেই শান্তির ঘুম ঘুমায়? মুন্নির কালকের দিনটা যে ভয়াবহ কাটবেনা তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে! মুন্নির আজকের দিনটা এরকম হাজার হাজার হারিয়ে যাওয়া শৈশবের স্বপ্ন কিন্তু এই স্বপ্নটাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য ওরকম অনেক চশমা পড়া ভদ্রলোকের দরকার। উনি কে ছিলেন? আমি, আপনি নাকি আমার আপনার মতনই কেউ একজন যে ওদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল। হয়তো দানবরূপ স্বার্থের সাথে লড়তে লড়তে আজ চশমাটাই ভেঙে গেছে তাই দৃষ্টিভঙ্গিটাও দুর্বল হয়ে গেছে। কালকে মুন্নির দিনটা কেমন কাটবে জানিনা তবে এটুকু নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারি যদি আমার আপনার মতন মানুষ ওই চশমাটা পড়ে ওদের জন্য এগিয়ে আসে তাহলে হয়তো দানবটাকে পরাজিত করে মুন্নির মতন আরও হাজারটা শৈশবকে রক্ষা করতে পারবো।।
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.