যদিও সরস্বতী পুজো কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন হল, তবুও তার রেশ কি আর এত সহজে মিটে যাওয়ার? তাই ভাবলাম সেই রেশ থাকতে থাকতেই নাহয় আর একবার একটু নস্ট্যালজিক হয়ে পড়া যাক, আর ক্যালেন্ডারের পাতায় পিছিয়ে যাওয়া যাক বেশ কয়েকটা বছর…
শীতকাল তো সবসময়ই একটু অন্যরকম মজা আর আনন্দ নিয়ে আসে, কিন্তু তাদের মধ্যে যদি সবথেকে রঙিন, আর সবথেকে বিশেষ কোনও উৎসব হয়ে থাকে, তা যে এই শীতের শেষভাগের বসন্ত পঞ্চমীর দিনটা, সেটা আর বাঙালিকে আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। ছোট থেকেই আমি আবার এই দিনটা নিয়ে হেব্বি সিরিয়াস। বলা তো যায়না, মা সরস্বতীর আরাধনায় কোনো বিচ্যুতি থাকলে যদি অঙ্ক বা ভূগোল খাতায় গোল্লা বসে!!! আর এই সিরিয়াসনেসের প্রথম পর্বই ছিল পুজোর আগে কুল না খাওয়া। বাবা মা কেও পইপই করে বারণ করা থাকতো যেন বাড়িতে কুল না আনে, কিন্তু বিধি বাম! প্রায় প্রতি বছরই ভুলবশতঃ সেই লাল লাল টোপা কুল আমি খেয়েই ফেলতাম আর সেই ভয়ংকর অপরাধের পরে মনে মনে মা সরস্বতীকে ‘এই শেষবার ক্ষমা করে দাও মা গো ‘ বা ‘পরের বার আর এই ভুল হবেনা’ বলে ঘুষ দিতেও ছাড়তাম না। ওহ হ্যাঁ, এখন তো আমি বড় থুড়ি বুড়ি হয়ে গেছি, বুক ফুলিয়ে বলি ঠাকুর দেবতায় আর আমার কোনো বিশ্বাসই নেই কিন্তু সেই আমিই এখনও সরস্বতী পুজোর আগে কুল খাওয়া নৈব নৈব চ। হে হে!!!
আমাদের যৌথ পরিবারে পুজোটা তখন হতো বেশ ধুমধাম করেই। আগের দিন ঠাকুর আনতে যাওয়া, তারপর সব ভাইবোনেরা মিলে রঙিন কাগজ কিনে শিকল আর নিশান বানানো কত কাজ বাড়ির বাচ্চাপার্টিদের তখন। বাবা, কাকা ছিল আমাদের এই সাজসজ্জা পর্বের মূল আয়োজক। এক্ষেত্রে একটা ব্যাপার ছিল খুব ইন্টারেস্টিং, সেটা হল আটা বা ময়দা গরম জলে ফুটিয়ে আঠা তৈরি করে ব্যবহার করা। ছোটবেলায় আঁকাআঁকি শিখতাম বলে আলপনা দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটা আমি পেতাম, আর আমার সেই সময়ের ‘যেমন পারো আঁকো’ জাতীয় আঁকা-ব্যাঁকা আলপনাও বরাবর বাহবাই কুড়োত বই কী! তারপর আসল দিনটায় আমার মত চিরকালের লেট রাইজারও সক্কাল সক্কাল অল্প সরষের তেল দিয়ে কাঁচা হলুদবাটা মেখে ( এটা কিন্তু মিস করা যেত না কোনোভাবেই, এই বছরও মা একটু হলুদ ছুঁইয়ে দিয়েছে), মায়ের শাড়ী পরে, উপোস থেকে অঞ্জলি দেওয়া। পুরোহিত মশাইএর অমন জটিল মন্ত্র না বুঝেই ভুলভাল আউড়ে ঠাকুরের কাছে দুবার এক্সট্রা ক্ষমা চেয়ে নেওয়াটাও অঞ্জলি দেওয়ার অংশ ছিল আর বলতে দ্বিধা নেই সেই অভ্যেস আমার আজও বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। মনে আছে আমার প্রথম শাড়ি ছিল ছ’ বছর বয়সে যেটা এরকমই এক সরস্বতী পুজোয় বাবা আর কাকা নিয়ে গিয়ে আমাকে কিনে দিয়েছিল। বেগুনি রঙের সেই শাড়িটা যত্ন করে রাখা আছে এখনও কারণ প্রথম সবকিছুই খুব স্পেশ্যাল হয় কিনা। শাড়ি পড়ার ট্র্যাডিশনে তারপর আর খামতি হয়নি কোনোদিনই। আরও একটা অদ্ভুত ব্যাপার এই যে এই বুড়ি বয়সেও শাড়ির কুঁচি ধরার মানুষ না পেলেও এখনও শাড়ির আঁচল বাবা ঠিক করে দেয়!
আমাদের মিশনারি স্কুলের মধ্যে কোনো পুজো হতোনা, স্কুলের পুজোটা হতো কোনো ছাত্রীর বাড়িতে আর তার দায়িত্বে থাকতো নবমশ্রেণীর ছাত্রীবৃন্দ। গোটা স্কুলজীবনে এই সরস্বতী পুজোর দায়িত্ব পাওয়ার জন্যে যেভাবে অপেক্ষা করেছি তা আর কোনো কিছুর জন্যে করেছি বলে মনে পড়েনা। ” আমি তখন নবম শ্রেণী, আমি তখন শাড়ি”, ‘বেণীমাধব’ দের সাথে সদ্য আলাপের সূচনা হয়েছে কোনো টিউশনে বা নিছকই স্কুলে যাতায়াতের পথে, ঠিক তখনই বাঙালির ভ্যালেন্টাইনস’ ডে একরাশ মুক্ত হাওয়া নিয়ে এসে হাজির হত আর আমাদের সেই মুক্তাঙ্গনে বিচরণের প্রধান ক্ষেত্রই যে ছিল কলেজ মাঠ আর কলিজিয়েট স্কুল, এতো আমার শহরের ষোলো থেকে ছেচল্লিশ সবাই জানে। পুজোর একমাস আগে থেকেই অন্য স্কুলে কার্ড বিতরণই হোক বা পুজোর দিনে অনভ্যস্ত শাড়ি আর পাটভাঙা পাঞ্জাবীর প্রথম যুগলবন্দী, একটু আড় চোখে গভীর মুগ্ধতায় তাকানোর সাহসই হোক অথবা প্রথমবার নোটসের বাইরে গিয়ে খানিক নিভৃত আলাপচারিতা, আবিরের রং সেদিন লাগত সব মনেই।
আমরা যারা মেদিনীপুরে ছোটো থেকে বড় হয়েছি, তারা বোধহয় সরস্বতী পুজোর সময়ে কলেজ মাঠ আজও কেউ মিস করেনা। এখন আমাদের ভাইবোন স্থানীয় স্কুলের ছেলেমেয়েগুলোকে দেখে আমরা যারা তথাকথিত ‘বড়’ তারা যেন কিঞ্চিৎ ‘ শিং ভেঙে বাছুড়ের দলে ‘ ঢুকেছি বলে মনে হলেও এক অদ্ভুত টানে টানা হয়ে বন্ধুরা দল বেঁধে প্রতি বছরই ঠিক পৌঁছে যাই। বড়দিনের পার্কস্ট্রীট আছে, চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো আছে, আর আমাদের আছে একটা সরস্বতী পুজো, যাকে ঘিরে একটা গোটা শহরের এই যে উন্মাদনা, তা তো অভূতপূর্বই।
বাড়িতে এখন পুজোর পাট চুকে গেছে অনেক বছর আগেই, কিন্তু এখনও প্রতিবছর শাড়ি পড়ি, চেষ্টা করি মামাবাড়িতে গিয়ে অঞ্জলিটা অন্তত দিতে কারণ সারা বছর যতোই মা সরস্বতীর প্রতি হাজারবার অভিযোগ করি না কেন আমাকে আরও একটু জ্ঞান, বিদ্যা, বুদ্ধি না দেওয়ার জন্যে কিন্তু, মনে মনে আমি জানি যে আমি আজ যা কিছু, তার জন্যে দেবী কে একটা ধন্যবাদ দেওয়া তো ‘ বানতা হ্যায় বস ‘। এখনও সেই ছোটবেলার মতো ঠাকুরের সামনে বইটা বা স্টেথোস্কোপটা রাখি নিয়ম করে। আমাদের এই জেনারেশনটার প্রায় সবাই এখন একটা মরচে ধরা হৃদয় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে যেটা হঠাৎ করেই আবার একটু অক্সিজেন পেয়ে সজীব হয়ে ওঠে এই দিনটায়। দেবী সরস্বতী বাঙালির কাছে বিদ্যার দেবী নাকি প্রেমের ( নাকি দুটোই? ), সেই তর্কে আজ না গেলেও এটা একবাক্যে বলা যায় যে বাঙালির একটা গোটা ভ্যালেন্টাইনস’ উইক থাক বা না থাক, একটা ‘ বাঙালির প্রেমদিবস ‘, একটা সরস্বতী পুজো ছিল, আছে আর থাকবে!
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.