এখনো বেশি দেরি হয়নি

|| এখনো বেশি দেরি হয়নি ||

এক

এখনো বেশি দেরি হয়নি। ঘড়ির কাঁটা সবে ন’টা ছুঁই ছুঁই। দশটা থেকে রেসাল্ট জানা যাবে বিভিন্ন সাইটে। কাল সারারাত ঘুম হয়নি বিদিশার। যেই চোখ বন্ধ করেছে অমনি ফিজিক্স এসে হানা দিয়েছে স্বপ্নে। এ কদিনে সে কয়েকশো বার নিরপেক্ষভাবে হিসেব কষে দেখেছে— ফিজিক্সে একুশ ওঠেনি একবারও। পড়াশোনায় ভালো বলে পাড়ায় একটা পরিচিতি আছে বিদিশার। এবার সেটা বোধহয় ভাঙতে বসেছে…

দুই

ঘড়িতে ন’টা বেজে দশ। এখনো ঘুম ভাঙেনি অর্ঘ্যর। অর্ঘ্যর মা বেশ কয়েকবার ডেকে ফিরে গেছে। অর্ঘ্যর বাবা টিভির ঘর থেকে চ্যাঁচাচ্ছে, উচ্ছন্নে গেল ছেলেটা। রেসাল্টের দিনও নাকি এভাবে কেউ পড়ে পড়ে ঘুমোয়। কাল গিয়ে শুনলাম কম্পিউটার সায়েন্সে নাকি এবার কোয়েশ্চেন খুব শক্ত হয়েছে। ছেলে বলেছে একবারও তোমাকে? বারবার করে ছেলেকে বলেছিলাম বায়োলজি নে। কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে কতগুলো লাইন আছে বলোতো? ওই সাবজেক্টটা যদি ঝোলায় আমি তবে ছেলেকে পাতি কলেজে ভর্তি করাবো শুনে রাখো।
বাবার চিৎকারে ঘুম ভেঙেছে অর্ঘ্যর। সদ্য কেনা স্মার্টফোনটা হাতে নিয়ে চোখ কচলে দেখলো বিদিশার তিনটে মিসড কল।

তিন

ঘড়িতে ন’টা পনেরো। গুঞ্জা সকাল থেকে এখনো কেঁদেই চলেছে। মাধ্যমিকের সময়ও তাই করেছিল। পরে যখন দেখেছে সেভেনটি ফোর পার্সেন্ট তখন জল মুছে একটু হেসেছিল। এবার খুব কম কম করে ধরেও ওই শতাংশটা পেরিয়ে যাচ্ছে। সবাই বলে আর্টসে কম পড়েই নম্বর বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু গুঞ্জা জানে ওটাই আসল মুশকিল। কলেজে কাউন্সিলিংয়ের সময় গিয়ে বোঝা যায় কম্পিটিশন ঠিক কতখানি। পরীক্ষার দু-মাস আগে থেকে সেজন্যই অর্ঘ্যর সাথে দেখা করা তো দূর, ফোনে কথা বলাও প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল গুঞ্জা। অর্ঘ্য যদি একটু বুঝতো সবাই ওর মতো ব্রেনি হয়না। সম্পর্কটা হয়তো টিকে যেত।

চার

সাড়ে ন’টা। ভোঁওওও… করে বিদিশার ফোন বেজে উঠলো। “হ্যালো কে রক্তিম? ইউ নো হোয়াট! তোর বন্ধুটা একটা চিটার। ইয়েস! অর্ঘ্য আমাকে ইউজ করেছে। আমি যদি আজকে ব্যাক পাই তা অর্ঘ্যর কারণে। অর্ঘ্য জানতো না যে আমি ওর জন্যে সবসময় অ্যাভেলেবেল ছিলাম? পরীক্ষার পর এসব ঢং করলে কী যায় আসতো? ওর জন্যে আমার কত বড় ক্ষতি হয়ে গেল জানিস? আই হ্যাভ টু কমিট সুইসাইড ইফ আই গট ফেইল!”
কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলতে বলতে বিদিশার গলা ধরে এলো। রক্তিম এবার প্রথম কথা বললো,”গুঞ্জার কোনো খবর পেয়েছিস?”

পাঁচ

হাতমুখ ধুয়ে টিভির ঘরে এসে বসলো অর্ঘ্য। অঙ্কে সিলি মিসটেকগুলোর কথা জানলে বাবা আস্ত রাখবে না। মাধ্যমিকে অঙ্কে একশো পাওয়ার পর থেকে বাবা অঙ্কটা নিয়ে বেশি ঘাঁটাতো না। মাধ্যমিকের অঙ্ক যদি পাথর হয় তবে উচ্চমাধ্যমিক একটা ছোটোখাটো পাহাড়। বিদিশার সাথে এখন কথা বলতে ভাল্লাগছে না একদম। যে কোনো পরীক্ষার আগেই সব মানুষেরই একটা বন্ধুত্বের দরকার হয়। বিদিশা যদি সেটাকে প্রেম ভেবে ভুল করে তবে অর্ঘ্যর কী করার থাকতে পারে! গুঞ্জা তো ভয়েই হাত পা ছড়িয়ে দিলো। প্রতিদিন একটা ঘণ্টা সময় দিলে কী এমন ক্ষতি হতো? বিদিশার কাছে চিটার হতে হতো না অর্ঘ্যকে।

ছয়

পাড়ার সবাই বলেছিল, “মাধ্যমিকে এত ভালো রেসাল্ট করেছিস, সায়েন্স নে।” রক্তিম শোনেনি।
আর্টস নিয়েও এগোনো যায়। আর্টসও সাফল্য আনতে পারে। প্রথম প্রথম বন্ধুরা মুচকি মুচকি হাসতো। অর্ঘ্যও। ইলেভেনের রেসাল্টের পর ঝামা ঘষে দিয়েছে সবার মুখে। স্কুলে হাইয়েষ্ট। অর্ঘ্যদের ব্যাচের অরূপের থেকে গুনে গুনে এগারো নম্বর বেশি। যে অরূপ ফাইভ থেকে টপার। আজকে রেসাল্ট নিয়ে রক্তিমের বিন্দুমাত্র টেনশন নেই। সে জানে তার রেসাল্ট ভালো হবে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা…

সাত

দশটা। টিভিতে রাজ্যের প্রথম স্থানাধিকারীর নাম দেখাবে এক্ষুনি। গুঞ্জার এখনো মনে হচ্ছে তার রেসাল্ট খারাপ হবে। হাত পা কাঁপছে রীতিমতো। থেকে থেকে কেমন যেন গা গুলিয়ে উঠছে। রেসাল্টের আগে সবারই কি এরকমটা হয়? নাকি যারা শুধু নম্বর পাওয়ার আশায় পরীক্ষা দেয়?

আট

দশটা পনেরো। অঘটন যা ঘটতে পারতো ঘটেনি কিছুই। বিদিশা ফিজিক্সে কানের পাশ দিয়ে বেড়িয়েছে। বাকি সবকটায় মার্কস ভালোই।
গুঞ্জার প্রাপ্ত নম্বর চারশো ছত্রিশ। স্কুলে সম্ভাব্য প্রথম। গুঞ্জার ওই দুটো মাস সার্থক। রক্তিম গুঞ্জার থেকে সাত নম্বর বেশি কিন্তু স্কুলে প্রথম হয়েছে সেই অরূপই। অর্ঘ্য কম্পিউটার সায়েন্সে নাইনটি এইট। বাকি একটাতেও পঁয়ষট্টির উপর তুলতে পারেনি। ওর বাবা কপালে হাত দিয়ে বসে পড়েছে।
ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন ভাঙলো বলে।

নয়

দুপুর বারোটা। রেসাল্ট নিয়ে আসার সময় বিদিশার সাথে দেখা হল অর্ঘ্যর। বিদিশার মা অর্ঘ্যকে যা নয় তাই বলে অপমান করলো। নিজে রেসাল্ট খারাপ করেছ আবার আমার মেয়েটাকেও আরেকটু হলে জলে ফেলে দিতে। লজ্জা করে না?
গুঞ্জা দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিল।
হঠাৎ রক্তিম এসে গুঞ্জার হাতটা ধরলো। আরেক হাতে একটা গ্রিটিং কার্ড। গুঞ্জা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিল হাতটা।

দশ

বিকেল পাঁচটা। সদ্য কেনা স্মার্টফোনটা আলমারিতে পৌঁছে গেছে। আবার সাদাকালো ফোনটা বরাদ্দ হয়েছে অর্ঘ্যর জন্যে। সেটা নিয়েই খুট খুট করছিল, হঠাৎ ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠলো ফোনটা।
ওপাশ থেকে গুঞ্জার গলা, “দেখলি তো ওই দুটো মাস খুব জরুরি।”
অর্ঘ্যর মনে একইসাথে একটা অন্যরকম শান্তি আর রাগ উপচে পড়লো, “তুইও গুঞ্জা? তুইও এখন আমাকে দোষারোপ করবি?”
গুঞ্জা শান্ত গলায় বলল, “ধ্যাত পাগল, এখনও বেশি দেরি হয়নি। কম্পিউটার সায়েন্স-এ অনার্স তো পাচ্ছিস। শোন মন দিয়ে পড়বি আর শোন ওই দুটো মাস খুব জরুরি।”
অর্ঘ্য চিৎকার করে উঠলো, “আমি বিদিশাকে প্রপোজ করিনি।”
গুঞ্জা বললো, “আমি জানি। কাল একবার দেখা কর।”

Facebook Comments Box
Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Recent Posts

Kolkata to Witness B Praak’s Mesmerizing Performance at ‘Kolkata Odyssey’ on October 20th

The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…

2 weeks ago

Celebrating Friendship and Togetherness with Pujo Pujo Gondho

In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…

2 weeks ago

Frustration Turned To Calmness, Thanks To These Websites

The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…

1 month ago

SVF Music Unveils April Edition of “Banglar Gaan Indies”

Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…

6 months ago

Mimi Chakraborty and Nabila to Star Alongside Shakib Khan in ‘Toofan’

Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…

7 months ago

Why Does a Rich Chicago Law Firm Keep Suing Indian Tribes?

This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…

11 months ago