শীতের পড়ন্ত রোদে দুপুরবেলা শর্মিলাদেবী আমের, চালতার, তেঁতুল ও কুলের ইত্যাদি ধরনের আচার বানাতে ব্যস্ত, অন্যদিকে চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত তার কত্তা ঘরে বসে হুঁকো টান দিতে দিতে গল্প, উপন্যাস ও কবিতা পড়ে সময় কাটাচ্ছেন।
ঠিক এমনসময় ওনাদের একমাত্র ছেলে সৌরভ মায়ের কাছে এসে বলল,
-“শোনো মা, কাল তোমাকে আর বাবাকে একটা জায়গায় যেতে হবে, তার জন্য তোমরা আজ রাতের মধ্যে ব্যাগপত্র গুছিয়ে রাখবে।”
-“কোথায় রে বাবা?”
-“এখন কিছু বলবো না, কাল সকাল হোক তখন দেখেশুনে নিও।”
ছেলের কথা শেষ হওয়ার পর আচারের বোয়মটার মধ্যে তেঁতুলের আচারটি ভর্তি করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর,পাশের বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে মিষ্টি পানের স্বাদ নিতে নিতে প্রতিবেশিনী নন্দিতাদেবী বললেন,
-“কী গো সৌরভের মা! তোমার ছেলে কোথায় যাওয়ার কথা বলছে?”
-“জানি না গো দিদি।”
-“দেখো মনে হয় বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর কথা ভাবছে, যা যুগ চলছে বাবা মায়ের বয়স বেড়ে যেতে না যেতেই বৃদ্ধাশ্রমের ঠিকানায় পাড়ি দিতে হয়।”
নিরুত্তর অবস্থায় একটুকরো মুখে হাসি সঙ্গে করে, ছাদ থেকে ঘরে চলে যান শর্মিলাদেবী। তারপর রাতে ছেলের কথা মতো ব্যাগপত্র গুছিয়ে-টুছিয়ে নিজেদের তৈরি করে রাখেন আর ভাবতে থাকেন বউমা ও নাতির কথা, ওদের সাথে আরও কিছুদিন সময় কাটালে মনটা ভালো থাকত।
সৌরভের ও তার স্ত্রী সুকন্যার একমাত্র সন্তান শুভ্রাংশু, বাড়ির সকলের আদরের ডাকনাম বাবলু। সে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র, মেধাবী ও শান্তশিষ্ট প্রকৃতির। দাদু ও ঠাম্মি চলে যাওয়ার কথা বাবা মায়ের মুখে শুনে বাবলুর মনটা খুব খারাপ, কারণ ও যে প্রতিদিন রাতে দাদুর শোনানো রূপকথা ও হাসির গল্প শুনে ঘুমোতো।
পরের দিন সকালে বৌমা সুকন্যার ডাকে তার শ্বশুর ও শাশুড়ি মানে অমরবাবু এবং শর্মিলাদেবী ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেখলেন, ড্রয়িংরুমের চারিদিকে নানা ধরনের ফুলে সাজানো ও পুরোনো অ্যালবামের ছবিগুলো লাগিয়ে রাখা হয়েছে।
হঠাৎ করে দুম করে বেলুনের শব্দের সাথে সকলে একসুরে বলে উঠল,” শুভ বিবাহবার্ষিকী মা আর বাবা। খুব ভালো থাকো তোমরা।”
সত্যিই তো আজ অমরবাবু ও শর্মিলাদেবী বিবাহের বয়স তিরিশে পা দিল। এত আনন্দে মুহূর্তে তাদের চোখ থেকে আনন্দের অশ্রুজলটুকু বেরিয়ে এল। ছিঃ কী ভেবেছেন আর কী হলো…
সামনেই চায়ের টেবিলের উপরে রাখা অপূর্ব কেকটাকে কাটার জন্য সৌরভ বাবা ও মায়ের হাতে ছুরিটা ধরিয়ে দিল। কেকটার সাথে আবার সকলে মিলিত সুরে বলে উঠল,”শুভ বিবাহবার্ষিকী।”
তারপর সৌরভ, সুকন্যা ও তাদের ছেলে বাবলু একসাথে বিকেলে ট্রেনে যাওয়ার টিকিট দুটো বাবা,মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-” তোমাদের বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে, আমাদের সকলের মিলিত উপহার সাতদিনের জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘা বেড়াতে যাওয়ার টিকিট। খুব আনন্দ করে এসো দুজন মিলে।”
আনন্দের সুরে শর্মিলা দেবী হেসে বললেন
-” আমরা বুড়োবুড়ি শুধু একা একা ঘুরতে পারবো না। তোরাও আমাদের সাথে চল, তাহলে খুব আনন্দ হবে সবাই মিলে। ”
-“না না শোনো তোমরা একা একা ঘুরতে হবে না, তোমাদের জন্য আমার ঠিক করা একজন দেখাশোনার লোক সবসময় সাথে থাকবে। তোমরা শুধু খাওয়া-দাওয়া করবে, খুব ঘুরবে আর ছবি তুলবে। আর মা তোমাকে বলছি, তোমাদের কোনো সমস্যা হলে সৌরভকে বা আমাকে ফোন করে জানাবে, আমরা সব বুঝে নেবো এদিক থেকে। তোমরা ঘুরবে আর আনন্দের মেজাজে সারাদিন কাটাবে।”
সারা বাড়িতে যেন আনন্দে ও উল্লাসে ভেসে উঠেছে আজ। শর্মিলা দেবী বউমাকে সঙ্গে করে নন্দিতাদেবীর বাড়িতে গিয়ে, তার হাতে মিষ্টি কূলের আচারের পাত্রটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
-“দিদিভাই এই মিষ্টি কূলের আচারটা আপনি খাবেন। আর একটা কথা, আমি আর আমার স্বামী কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে যাচ্ছি। আপনারা সকলে ভালো থাকবেন ও সুস্থ থাকবেন। ফিরে এসে কথা হবে। এখন আসি।”; এই বলে পা বাড়ান শাশুড়ি, বৌমা মিলে।
আচারে পরিপূর্ণ পাত্রটি হাতে নিয়ে ওদের চলে যাবার পথের দিকে তাকিয়ে অবাক দৃষ্টিতে কথাগুলো ভাবতে থাকেন নন্দিতাদেবী।।
(সমাপ্ত)
Image Courtesy – Google
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.