বেশ বড়ো আকারের একটি আতসকাঁচ নিয়ে শাস্ত্রী মশাই সকাল সকাল বসে পড়েছেন। এটি তাঁর লক্ষ্মী আগমনের খাস উপকরণ। এক ঝলক দেখেই বোঝা যায় আতস কাঁচটির আলাদা একটা আভিজাত্য আছে। জ্ঞানদাচরণ শাস্ত্রী মহাশয়ের হস্তরেখা বিচারে অগাধ পাণ্ডিত্য। তাই যারা অদৃষ্টের চাল আগেভাগে বুঝে নিতে চায়, তাদের ভিড় তো লেগেই থাকে। বাড়ির বাইরে লম্বা লাইন। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। কেউ অমঙ্গল কাটাতে, কেউ দাম্পত্য কলহ মেটাতে, তো কেউ প্রাপ্তি যোগ জানতে। উনি গোল্ডেন ফ্রেম চশমার ওপর দিয়ে একবার ব্যক্তিটির মুখমন্ডল পর্যবেক্ষণ করেন, তারপর চার চক্ষু দিয়ে হাতের কাটাকুটি রেখায় দৃষ্টিপাত করেন। অবশ্যই রুপোর হাতল দেওয়া, মিনাকারি ডিজাইন করা আতস কাঁচটি হাতে নিতে ভোলেন না। তারপর ডিগ্রি বোঝাই সাদা প্যাডের ওপর ভিন্ন আকারের ছক কেটে কাউকে বলেন পাঁচ রতির মুক্ত, গোমেদ পরিধান করতে হবে, তো কাউকে বলেন এগারো রতির পলা পরলে সংসারে সুখ ফিরবে। পারিশ্রমিক উনি নিজে হাতে নেন না, তার জন্য চৌকাঠে একজন মাইনে করা লোক রাখা আছে। অগ্রিম দিলে তবেই শাস্ত্রী মশাইয়ের ঘরে ঢোকার ছারপত্র মেলে। মোদ্দা কথা এই হল তাদের তিন পুরুষের জাত ব্যাবসা। তবে এখানেই শেষ, ছেলেরা কেউ এসবের ধারে কাছে ঘেঁষে না।
তিনতলা থেকে ঝনঝন করে পিতলের থালা ছুঁড়ে ফেলার শব্দ এলো। গিন্নি তো চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করছে। কারণ পদ্ম কাটা ডিজাইনের পিতলের থালার ঘাঁজে একটু তেঁতুল ঢুকে রয়েছে। বড়ো বৌমার শরীরটা আজ একটু ম্যাজম্যাজ করছে। কাল রাতে জ্বরও এসেছিল। তাই এই সামান্য ত্রুটি তার চোখে পড়েনি। কিন্তু গিন্নি তো আর অসুস্থ নয়! সে সবকিছু কাঁটায় কাঁটায় মিলিয়ে দেখে নিল। ঠাকুরের বাসন ঝি চাকরদের দিয়ে মাজানো হয় না। সে দায়িত্ব বড়ো বউয়ের। ঠাকুরের ফুলপাত কামাই গেলেও, এ কাজে তার নিস্তার নেই। রান্নায় নুন একটু বেশি হয়েছিল বলে ছোটো বউয়ের সঙ্গে সে কি অশান্তি! ছোটো বউ শাশুড়ির এসব স্বভাব ধাতস্থ করতে পারেনি, তাই বিয়ের মাস খানেক যেতে না যেতেই ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠেছে। ছোটো ছেলেটাও তেমনি মেনি মুখো, বউয়ের পিছন পিছন কেটে পড়লো।
গিন্নির মাথা গরম এমনি এমনি তো হয় না! তার হাতে যে উচ্চ রতির আসল মুক্ত রয়েছে! নিশ্চই বড়ো বৌমাই কোনো দোষ করেছে— নিজের মনে কথা গুলো আওড়াতে আওড়াতে শাস্ত্রী মশাই তিনতলায় উঠে এলেন নিজের কাজ ছেড়ে। দশ বছরের নাতনি প্রজ্ঞা ও সর্বক্ষণের কাজের ঝি সুখোদাও এসে হাজির। সমস্ত ঘটনা গিন্নির মুখে শুনে ঘটনার সত্যতা বিচার করলেন শাস্ত্রী মশাই। পদ্মকাটা থালাটা হাতে নিয়ে আতস কাঁচ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিরীক্ষণ করে দোষী সাব্যস্ত করলেন বড়ো বৌমাকে ।
হঠাৎ প্রজ্ঞা একটা মোক্ষম প্রশ্ন করেই অশান্তিটা বাড়ালো— “এই টুকুর জন্য মাকে তুমি এতো বকলে ঠাম্মি?” ঠাম্মিকে আর রাখে কে! সে আর বিবৃত করার প্রয়োজন বোধ করি না। অবস্থা বেগতিক দেখে সুখোদা প্রজ্ঞাকে টেনে নিয়ে গেল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো, “কেঁদো না প্রজ্ঞা। এরা তো ভালো জিনিস গুলো দেখতে পায় না, চোখে ঠুলি বাঁধে, আর ভুল গুলো আতস কাঁচ দিয়ে খুঁজে বের করে।” বড়ো বৌমা আবার মুখ গুঁজে থালা মজায় মন দিল।
–অর্যমা
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.