বিভূতিভূষণের ‘হিঙের কচুরি’ থেকে রাজেশ-শর্মিলার ‘অমরপ্রেম’

কথাশিল্পী বিভূতিভূষণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছোটোগল্প ‘হিঙের কচুরি’। গল্পটিতে একটি ব্রাহ্মণ বালক নিয়মিত যাতায়াত করে পতিতাপল্লীর কুসুমের ঘরে। সে যে কুসুমের ঘরে যায়, শুধু তাই নয় এটা সেটা খায়, এর মধ্যে আবার ‘হিঙের কচুরি’ তার সবথেকে প্রিয়। এসব ব্যাপার তার মা একদম পছন্দ করেন না। তিনি বারবার তার ছেলেকে নিষেধ করেছেন সেখানে যেতে। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। তার ছেলে তবু লুকিয়ে সেখানে যায়। কোন এক অদৃশ্য স্নেহের বন্ধনে বাঁধা পড়েছে সে কুসুমের সাথে। তার সাথে নানারকম জিনিস খেতে পাওয়ার লোভও কিছু কম নয় কিশোরটির।

শুধু কুসুম নয়, তার প্রতিবেশী মাখন, প্রভা এদের বাড়িতেও কিশোরটির অবাধ যাতায়াত। বলাই বাহুল্য যে এরা সবাই পতিতা। এদের প্রত্যেকেরই একজন করে বাঁধা-ধরা বাবু আছেন। এদের ঘরে ঘুরে ঘুরে কিশোরটি  কুলের আচার, চালতার অম্বল, গজা ইত্যাদি খেয়ে বেড়ায়। সে ব্রাহ্মণের ছেলে বলে কুসুম তাকে কোনোদিন ভাত খাওয়াতে সাহস পায়নি।

যখন ছেলেটি তার অসুস্থতার জন্য পাঁচদিন অনুপস্থিত ছিল পতিতাপল্লীতে, তখন কুসুম দিনকতক এসে লুকিয়ে জানলা দিয়ে দেখা করে যায় তার সাথে। কোনোদিন মাখন, কোনোদিন প্রভাকে সাথে নিয়ে। তাদের দেওয়া কমলালেবুগুলি ছেলেটি লুকিয়ে রাখে বালিশের নীচে। কোনো এক সময় লুকিয়ে খেয়ে ছিবড়েগুলো লুকিয়ে ফেলে দেয় জানলা দিয়ে।

কুসুমের একটি বাবু ছিল। সন্ধ্যেবেলা তার আসার সময় হলে কুসুম বামুনের এই খোকাটিকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে বলত। কোনো একদিন এই বাবুটির আনা ‘হিঙের কচুরি’ খেয়ে ভালো লাগে ছেলেটির। তারপর থেকে লোভ হয়ে যায় তার এই ‘হিঙের কচুরি’ র উপর। বাবুটিও তার জন্য ‘হিঙের কচুরি’ নিয়ে আসতে থাকে।

একসময় এই ব্রাহ্মণ পরিবারটিকে চলে আসতে হয় ওখানকার পাঠ চুকিয়ে। কুসুমদের সাথে আর কোনো যোগাযোগ থাকে না ছেলেটির। কিন্তু এই পতিতালয়ের পতিতারা তার মনে একটি বিশেষ জায়গা করে নেয়। এদেরকে সে ভুলতে পারে না।

এরমধ্যে কেটে গেছে ত্রিশটি বছর। গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। সেই ছেলেটি বড় হয়ে একটি অফিসে কেরানীর চাকরি করে। বন্ধুর সাথে একদিন কথা প্রসঙ্গে পতিতাদের কথা উঠলে সে জানায় এই পতিতাদের সে অন্য চোখে দেখে। একদিন এদের ঘরেই তার অবাধ যাতায়াত ছিল।

কুসুমের খোঁজে সে পুরনো ঠিকানায় গিয়ে দেখে সেখানে বৃদ্ধা মাখন ছাড়া আর কেউ নেই। তার কাছ থেকে কুসুমের বর্তমান ঠিকানা নিয়ে সে কুসুমের সাথে দেখা করে। কুসুম এখন শোভাবাজার স্ট্রীটের একটি মেসবাড়িতে ঝি এর কাজ করে। কুসুম ছেলেটিকে দেখে প্রথমে চিনতে পারে না। পরে পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে চিনতে পারে।

বিভূতিভূষণের এই গল্পটি নিয়ে শক্তি সামন্ত পরিচালিত হিন্দি সিনেমা ‘অমর প্রেম’ (১৯৭২)। কুসুম এখানে পুষ্প। পুষ্প ও তার বাবুর ভূমিকায় শর্মিলা ঠাকুর ও রাজেশ খান্না। ছোটো ছেলেটি এখানে নন্দু। বড় নন্দুর ভূমিকায় বিনোদ মেহরা। সিনেমায় গল্পটি মোটামুটি অক্ষত আছে। শুধু নন্দুর নিজের মায়ের জায়গায় সৎ মা দেখানো হয়েছে আর সিনেমার শেষ দৃশ্যে দেখানো হচ্ছে নন্দু পুষ্পকে তার মায়ের মর্যাদা দিয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। চারপাশের বাতাসে ভাসছে আগমনীর সুবাস। নন্দুর পুষ্পকে রিক্সা করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মা দুর্গাকে পুজোমণ্ডপে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য।

এটাও পড়তে পারেন: অন্তরমহল যদি বেআব্রু হয়ে যায়, তবে কী শান্তি মেলে?

এই ‘হিঙের কচুরি’ গল্পটির উপর ভিত্তি করে বাংলাতেও একটি সিনেমা করেছেন অরবিন্দ মুখার্জি। সিনেমার নাম ‘নিশিপদ্ম’ (১৯৭০)। সেখানে কুসুম ও তার বাবুর ভূমিকায় সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ও উত্তমকুমার।

Facebook Comments Box
Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Recent Posts

অনুষ্কা পাত্রর কণ্ঠে শোনা যাবে দে দে পাল তুলে দে

হিমেশ রেশামিয়ার পর সুরাশা মেলোডিজ থেকে অনুষ্কা পাত্রর নতুন গান পুজো আসছে মানেই বাঙালির নতুন…

2 days ago

Srijit Mukherji’s Dawshom Awbotaar is On a Roller Coaster!

The highly awaited trailer of grand Puja release, "Dawshom Awbotaar", produced by Jio Studios and…

4 days ago

আসছে Klikk Originals NH6 ওয়েব সিরিজ

আসছে Klikk Originals এর আগামী ওয়েব সিরিজ। জন হালদার এর প্রযোজিত ও পরিচালিত রোমহর্ষক থ্রিলারNH6…

4 days ago

Jeet Unveils the First Look of Manush

On the auspicious occasion of Ganesh Chaturthi, Bengal's Superstar Jeet Unveils the First Look of…

1 week ago

Pokkhirajer Dim Gears Up for an Enchanting Journey

'Pokkhirajer Dim' Gears Up for an Enchanting Journey with Jio Studios and SVF Entertainment We…

1 week ago

Raktabeej Teaser Wows Audience

Windows Productions --- loved by its audiences for content-driven cinema --- is bringing its biggest…

3 weeks ago

This website uses cookies.