আমাদের প্রত্যেকের চিরাচরিত একঘেয়ে জীবনে একটু বিচিত্রতা আনার দরকার পড়ে। আর যদি সেই একঘেয়ে জীবনের দুঃখ, কষ্ট, চিন্তা দূর করতে পাওয়া যায় কোন টনিক? বেশ ভালো হত না? সেই জাদুকরী টনিকের মোড়কে পরিচালক অভিজিৎ সেনের বড়দিনে আমাদের জন্য বিশেষ উপহার ‘টনিক’। উত্তম-সুচিত্রা থেকে শুরু করে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা কিংবা জিৎ-কোয়েল,অ বিখ্যাত জুটির নাম বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নামাঙ্কিত। সেই পাতায় নতুন সংযোজন পরান-দেব জুটি। এক কথায় বলতে গেলে পরান-দেব যুগলবন্দী টনিক সিনেমাকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে।
পরিচালক- অভিজিৎ সেন
অভিনয়- দেব, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, শকুন্তলা বড়ুয়া, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
ছেলে পার্থ (সুজন), বৌমা (কনীনিকা) নাতনি এবং স্ত্রীকে (শকুন্তলা বড়ুয়া) নিয়ে জলধরের (পরান বন্দোপাধ্যায়) সাজানো সংসার। কিন্তু অবসরের পর জীবনটা কেমন একঘেয়ে হয়ে উঠেছে জলধরের কাছে। ছেলে বৌমা তাদের বিবাহবার্ষকীতে ব্যাংকক ঘুরে এসেছে। অথচ ছেলে তার বাবা মায়ের ৪৬তম বিবাহবার্ষকী পালন করার প্ল্যান করেছে বাড়ির ছাদে।
ছেলের ওপর রাগ করে জলধর সিদ্ধান্ত নেন, তিনিও স্ত্রীকে নিয়ে বিদেশ যাবেন বিবাহবার্ষকী পালন করতে। আলাপ হয় সর্বদা হাসিখুশি তরুণ ট্রাভেল গাইড টনিকের (দেব) সাথে। কিন্তু জলধরের স্ত্রীয়ের পাসপোর্ট না হওয়ায় প্যারিস যাওয়া হলোনা জলধরের। তার বদলে টনিক বাড়িতে লুকিয়ে তাঁদের নিয়ে গেলো দার্জিলিং। শুরু হলো পরান দেব জুটির জার্নি। জলধরের এতদিনের জমানো ইচ্ছেগুলো পূরণ করার দায়িত্ব নেয় টনিক। বৃদ্ধ জলধরের মনের জীবনীশক্তি নতুন করে জাগিয়ে তুলে তাঁকে সঙ্গে করে প্যারাগ্লাইডিং, রক ক্লাইম্বিং, রিভার রাফটিং করায়। এতদিনে জলধর নিজেকে নতুন করে খুঁজে পান। কিন্তু অন্যদিকে বাবা মাকে না পেয়ে থানায় ডায়রি করে পার্থ। খবরের কাগজেও নিরুদ্দেশ বিজ্ঞাপন বেরোয়।
হাসিখুশি, সকলকে মাতিয়ে রাখা টনিকের জীবনের দুঃখের অতীত খুব সুন্দর ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছক ভাঙ্গা চরিত্রে নিজেকে আবার প্রমাণ করেছে দেব। নিজের সুপারস্টার ইমেজের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে ক্রমশ পাশের বাড়ির ছেলে হয়ে উঠছে যেন। শকুন্তলা বড়ুয়াকে অনেকদিন পর সিনেমার পর্দায় দেখে খুব ভালো লাগলো। বাকিদের অভিনয়ও খুব সুন্দর। দার্জিলিঙের অসাধারণ সৌন্দর্য্য ক্যামেরাতে খুব দারুন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে যাঁর কথা না বললে এই লেখাই অসম্পূর্ণ তিনি পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিনয় নিয়ে তাঁর নতুন কিছুই বলার নেই। কিন্তু এই বয়সে এসে সাহসের সাথে উনি একের পর এক অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস গুলো যেভাবে করেছেন, কুর্নিশ। ছবিতে ওনাকে দেখে নিজেকে কেমন বয়স্ক মনে হলো ওনার কাছে। ইচ্ছে আর সাহসের কাছে বয়স কিছুইনা উনি প্রমাণ করে দিলেন। জিৎ গাঙ্গুলীর সুরে গানগুলি খুব ভালো। এক কথায়, এক আদ্যোপান্ত পারিবারিক ছবি যা সংসারের চাপে বাবা-মায়েদের নিজেদের হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলোকে নতুন করে বুনতে শেখায়। ছবির শেষে এরকম টনিকের প্রয়োজন বোধ করবে সবাই।