আজ বহুদিন পর ঋভুর সাথে দেখা হতে চলেছে অমলেশ এর। রবীন্দ্রসদনে ওর একটা ছবি প্রদর্শনী রয়েছে।
অবশ্য এখন ঋভু আর সেই ঋভু নেই, ও এখন শহরের নামকরা আঁকিয়ে। খুব শীঘ্র নাকি বিদেশেও পাড়ি দেবে সে। এমন্টাই শুনেছে অমলেশ।
অফিস থেকে ফেরার পথে হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেলো অমলেশ এর। বাড়ি না গিয়ে তাই সে উঠে পড়লো দমদমগামী বাসে।
নভেম্বরের শুরু, শহর জুড়ে এখন চলছে শীতের মরশুম। হাল্কা হাল্কা শীত করছে গায়ে।
বাসে উঠে জানালার ধারের একটা সিটে বসে পড়ে অমলেশ, পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরায়।
ভরপুর আমেজে চোখ দুটি বন্ধ করে সে।
স্মৃতির কোণ ভিড় করে জমা হতে থাকলো ছোটোবেলার মধুময় স্মৃতির কথা গুলি। যা জড়িয়ে আছে ঋভু আর অমলেশ এর জীবন জুড়ে।
ঋভু আর সে একসাথে বড় হয়েছে। নার্সারি থেকে কলেজ পর্যন্ত একসাথে।
ঋভু ওরফে ঋভাসরঞ্জন মিত্র রায় ছোটোবেলা থেকেই আঁকতে ভীষণ ভালোবাসতো।
স্কুলের পড়ার ফাঁকেও চলতো তার রঙ তুলির টান।
ঋভুর বাবা অর্থাৎ মিত্র জ্যাঠু এসব খুব একটা ভালো চোখে দেখতেন না। ঋভু লুকিয়ে চুরিয়ে আঁকার খাতা, পেন্সিল, রং-পেন্সিল কিনত। কখনো কখনো অমলেশ ওকে গিফট করতো এসব। ও খুব আনন্দিত হত।
অমলেশ এর মনে পড়ে, কলেজের থার্ড ইয়ার কমপ্লিট করে হঠাৎ করেই ঋভু শহর থেকে রাতারাতি বেপাত্তা হয়ে যায়। এমন কি অমলেশ কেও জানিয়ে যায় নি সেদিন। একথা মনে পড়তেই হাল্কা অভিমান হয় অমলেশ এর।
মিত্র জ্যাঠু পাগলের মতো খুঁজেছিলেন ঋভু কে। যতই হোক নিজের একমাত্র ছেলে বলে কথা।
অমলেশ নিজেও কি কম আঘাত পেয়েছিল সেদিন? তন্নতন্ন করে খুঁজেছিল তাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানে তারা সকলেই।
অমলেশ কেমন যেন মুষড়ে পড়েছিল। আর মিত্র জ্যাঠু? ওনার শেষ পরিণতি খুবই দুঃখজনক হয়েছিল। সেদিন অমলেশ ও তার পরিবারই ওনার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছিল।
এই তো মাস দুয়েক আগে খবরের কাগজের পাতায় ঋভুর ছবি দেখে ইউরেকা বলে লাফিয়ে উঠেছিল অমলেশ।
খবরের কাগজের মাধ্যমেই সে জেনেছে তার আঁকা ছবির নাম-ডাকের কথা, রবীন্দ্রসদনের ছবি প্রদর্শনীর কথা।
মনে মনে ভাবে অমলেশ, তাকে চিনতে পারবে তো ঋভু? তার এখন কতো নাম-ডাক।
দমদম পৌঁছতে দেখে খুব সরগরম।
বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করে সে।
রবীন্দ্রসদন ঢুকতেই দেখে এলাহি ব্যাপার। খুব জমজমাট। খুব একটা ভিড় নেই, কিন্তু আলোর রোশনাই পরিবেশ টাকে বেশ আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সে।
ছবি সম্বন্ধে খুব একটা নলেজ না থাকলেও বেশ উপলব্ধি করতে পারে অমলেশ।
যতই হোক সেও তো বিশ্বচরাচরের অন্তরালে একটু-আধটু কলম চালায়।
ছবি গুলো সবুজ ঘাসের গালিচার উপর খুব সুন্দর ভাবে স্ট্যান্ড করে পরপর রাখা আছে। অমলেশ একের পর এক ছবি দেখে যাচ্ছে। একেকটা ছবি যেন একেকটা স্পর্শ। যেন হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে দেওয়া যায় অমন পাহাড়ি ঝরনা কে। জীবন্ত জীবাশ্ম যেন তারা।
ছবি গুলোর প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নাম। ছবির নীচে তাদের নাম লেখা।
“উষ্ণ পরশ”, “অপরাহ্ন”, “অলিখিত”, “সূর্য-সকাল” আরও ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধে মাতোয়ারা দর্শকের হৃদয়। প্রকৃতির আনাচে-কানাচে রহস্যের হাতছানি। ঋভু অমলেশের বন্ধু ভেবে অমলেশের গর্ব হচ্ছিল খুউব।
প্রকৃতির পাঠ পেরিয়ে এবার এলো “নদী ও রমনী”।
একেকটা ছবি একেকটা আগ্নেয়গিরি। পুরুষের হৃদয় চিরে নিয়ে আসছে প্রেমের অবাধ্য বান।
দেখতে দেখতে অমলেশ থমকে গেলো একটা ছবির সামনে।
এই ছবি যেন আরও জীবন্ত, আরও প্রানবন্ত, আরও উচ্ছল। কৃষ্ণাঙ্গী এক পাহাড়ি মেয়ে, ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় নদীর স্বচ্ছ জলে স্নান করে কলশী কাঁখে সূর্য অভিমুখে।
সূর্যের আলো যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে মেয়েটির সিক্ত শরীরের আনাচ-কানাচ। যৌবনের মত্ততায় যেন সূর্যের লালিমা স্পর্শ করতে চায়ছে মেয়েটির সুপ্ত হৃদয়, ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়ছে সূর্যালোকের গহীনে।
হঠাৎ পিঠে হাত পড়তেই চকিত অমলেশ তাকায় পেছনে। দেখে ঋভু দাঁড়িয়ে তার সামনে। আনন্দে ঋভু জড়িয়ে ধরেছে তাকে। বারবার হাতে চুমু খাচ্ছে অনবরত।
অমলেশ একটু অপ্রতিভ হয়ে ওকে থামালো।
অনেকের চোখ তখন ওদের দুজনের উপর।
এতো দিনের জমানো অভিমান গুলো সব ঢালবে ভেবেছিল অমলেশ, কিন্তু ছবি দেখে সব গলে জল।
দুই বন্ধু মিলে অনেক কথার পর অমলেশ জিজ্ঞেস করলো – আচ্ছা, ঋভু ওই “সূর্যস্নাতা” ছবিটার কত দাম রে?
– কেন? তুই কিনবি নাকি?
হো হো করে হেসে ওঠে ঋভু।
অমলেশ একটু লজ্জা পেয়ে বলে – না! এমনি জিজ্ঞাসা করলাম।
– তোকে আমি এমনিতেই একখানা ছবি উপহার দেব। তবে ওই ছবি টা বাদ দিয়ে।
অমলেশ উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো- কেন? ওটা বাদ দিয়ে কেন? ওই ছবিটার বিশেষত্ব কী?
ঋভু বললো – তোকে লুকানোর মতো আমার কাছে কিছু নেই, তাই তোকেই বলছি শোন।
কলকাতা ছেড়ে ছবি আঁকার নেশায় আমি পাহাড়ি এলাকা গুলোতে মিশে যায়।
শিলং এর এক পাহাড়ি গাঁয়ে তাঁবু খাটিয়ে থাকতে শুরু করি, ওই ছবির মেয়েটা সেই গাঁয়েরই মেয়ে ‘উস্রি’। ওর শ্যামলা চেহারার মাঝে দুটো নরম নদীর মতন চোখের কাছে আমি দুর্বল হয়ে পড়ি। ভালোবেসে ফেলি ওকে। ওর চুলের ভেলায় মেঘেদের মায়াজাল আঁকতে শুরু করি। মেয়েটিও ভালোবেসে ফেলে আমায়।
দুজনেই প্রেমের স্রোতে ভেসে যায়। প্রথম কোনো মেয়েকে ছুঁয়েছিলাম, ওর হৃদয়-শরীর। ওর উষ্ণতায় পুড়ে ছাঁই হতাম রোজ।
একদিন ওর শরীরে নতুন প্রাণের অস্তিত্ব টের পায় সে। আমাকে জানায়।
কিন্তু, তখন আমার দুচোখে স্বপ্ন। আমি ওকে ফিরিয়ে দিই।
সেদিন ঠিক করি এই জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার। কিন্তু পরের দিন ভোরে ওকে দেখি নদীর কিনারে। তবে নিষ্প্রাণ!
ঋভু হাত দুটো ঢেকে কাঁদতে থাকে। অমলেশ নিশ্চুপ হয়ে যায়।
ছবিটি তখনও বহু মুখে প্রশংসিত।
–অরুণিমা
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.