আজ পঁচিশ বছর পর আবার দেখা,
প্রীতির পরনে একখানি ধুসর-নীলের শাড়ী, যতোই হোক বয়সতো বেড়েছে, আর সৌমিত্র তো আগাগোড়া বড়ো সাদামাটা, সেই পাঞ্জাবীতেই সীমাবদ্ধ।
হটাৎ সামনাসামনি দিঘার সমুদ্র সৈকতে, চোখাচুখি হতে খানিকটা থতমত খেয়েই দুজন চোখ সরিয়ে নিয়েছিলো,
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নিজেদের সামলে আবার তাকিয়েছিল একে অপরের দিকে!!
এই পঞ্চাশের গণ্ডিতে পা দিয়েও অনুভূতিটা পঁচিশের মতই রয়ে গেছে…
সৌমিত্র এগিয়ে এসে বললো…
— কি রে ভালো আছিস?
— হ্যাঁ ভালো।তুই কেমন আছিস?
— ভালো রে! তোর সব কটা বই জানিস আমার পড়া।
— ওহ্ তাই নাকি? লাস্ট বইটা কেমন লাগলো!
— এখনও পড়া শেষ হয়নি, এই দেখ!
(ওর হাতে প্রীতির লেখা শেষ বইখানা )
— তুই ঘুরতে এসে বই পড়ছিস? পাগল রে!
এই বলে স্বভাব মত চুলটা নাড়িয়ে দিতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো সে, এমন সময়ে পিছন থেকে প্রীতির মেয়ের ডাক।
সৌমিত্র প্রীতি কে জিজ্ঞাসা করলো, ” কিরে তোর মেয়ে? বাবা কত বড়ো হয়ে গেছে… তা নাম কি রেখেছিস?”
— সৌপ্রীথা!
একটা অনাথ আশ্রম থেকে ওকে নিয়ে এসেছিল প্রীতি, একাকীত্ব কাটাতে একটা ছোট্ট হাত দরকার ছিল খুব।
আজও প্রতিটা লেখার পরে একটা কমেন্টের আশায় বসে থাকে সে, না সেটা কখন সৌমিত্র কে বুঝতে দেয়নি।
এই পঁচিশ বছর ধরে প্রতিটা দিন প্রীতির মনে হয়েছে, যদি সৌমিত্রর মা একটু বুঝত যে মা বাবার পরিচয় থাকাটা ততটাও গুরুত্বপূর্ণ নয়।তারাও মানুষ, তাদেরও ইচ্ছা হয় ভালোবাসা পেতে গুছিয়ে সংসার করতে! অনাথ আশ্রমে বেড়ে ওঠা মেয়েগুলোর অপরাধ শুধু কি এটাই যে তারা অপারক নিজের পরিচয় খুঁজতে, একটা উচ্চ বংশের মেয়ে হিসাবে নিজেকে তখমা দিতে ???
এইসব ভাবতে ভাবতে প্রীতি মেয়ের হাত ধরে সমুদ্রের ধার ধরে হোটেলের উদ্দেশ্যে এগিয়ে চললো, সৌমিত্র তাকিয়ে ওদের দিকে একদম মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত দেখতে লাগলো আর ওর মন একটাই কথা বললো “আজ ওই দুটো মিষ্টি মেয়ের সাথে যদি আমিও হাঁটতে পড়তাম!”
—”আচ্ছা মা ইনি কি সে যার কথা ভেবে প্রতি রাতে তুমি কাঁদো?”
হঠাৎ প্রশ্ন করলো সৌপ্রীথা।খানিকটা নিজেকে সামলে নিয়ে প্রীতি বললো “আরে না না, আমি কই কাঁদি?”
—থাকনা মা আমাকে কেন লুকিয়ে যাচ্ছ! এই পৃথিবীতে তোমার আমি আর আমার তুমিই তো আছো, তাই না?
—আচ্ছা চল হোটেলে গিয়ে সবটা বলব।
বাকি রাস্তাটা কেউ কারোর সাথে কথা বলেনি ওরা। হোটেলে ঢুকতেই ডিনার সার্ভ করে দিয়ে গেলো, ডিনার সেরে মা-মেয়েতে বসলো স্মৃতি রোমন্থনের আসরে।
প্রীতি বলা শুরু করলো—
“আমি তখন সবে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পা দিয়েছি। তুই তো জানিসই আমি বাংলা বিভাগের ছাত্রী, সৌমিত্রর বিষয় ছিল কম্পিউটার সম্পূর্ণ বিপরীত। কিন্তু আমাদের ব্যাচ ছিল একই। প্রসঙ্গত বলে রাখি ও খুব ভালো গিটার বাজাতো, আর আমি ওই একটু আধটু লেখালিখি সাথে দু-চার লাইন পাঠ করতাম তখনও । কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রথম আমাদের আলাপ। সেখান থেকে বন্ধুত্ব, কলেজের পরে আড্ডা, ময়দানে বসে একগুচ্ছ কাব্য, প্রিন্সেপ ঘাটের সূর্যাস্তের সাথে গিটারের অসম্ভব সুন্দর টিউন,এসব করতে করতে আমরা যে কবে একে অপরের প্রেমে পড়েছি বুঝতেই পারিনি।
তবে আমার নিজের অনুভূতির ওপর লাগাম ছিল কারণ ও খুব বড়ো বাড়ির ছেলে আর আমি তো নিজের বংশ পরিচয়টাও জানিনা। কিন্তু সৌমিত্রর কিছু যায় আসতো না তাতে, ওর কথা ছিল “আমি তোকে ভালোবাসি, তোর সবটা নিয়ে।” ওর এই স্বভাব ওকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছিলো। আমার জীবনে ভালোবাসার মত কেউ ছিলোনা তাই আষ্টেপিষ্টে ওকে জড়িয়ে ধরেছিলাম।এভাবেই কাটলো বছর পাঁচ, আমাদের কলেজ শেষ হল সৌমিত্র চাকরীও পেয়ে গেলো আর আমিও তখন চেষ্টা করছি কিছু চাকরী পাওয়ার সাথে লেখালিখি। সেদিন ছিল ১২ই মে প্রিন্সেপ ঘাটে ওর কাঁধে মাথা দিয়ে “শেষের কবিতা ” টা আওরাচ্ছিলাম, এটা সৌমিত্রর কোনো এক আত্মীয়র চোখে পড়ে, তিনি গিয়ে জানান ওর মাকে। রীতিমতো তার পরের দিন আমার ডাক পড়লো ওর বাড়ি, অনেক আশা নিয়ে গিয়েছিলাম হয়তো এবার আমার একটা পরিবার হবে, মা হবে, বাবা হবে, একটা গোছানো সংসার হবে, মন দিয়ে জমিয়ে ঘরকন্যার কাজ করব। না এই পোড়া কপালে সেই সুখ যে ছিল না! আমাকে সেদিন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছিলো আমার অবস্থান!
১৫ই মে আমরা আবার দেখা করি সেদিন এক আকাশ কান্না ছিল, আমরা একে অপরের হাতে হাত রেখে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম আমরা কখনোই ছেড়ে যাবনা কাউকে, মরার দিনেও যেনো ওর কোলে মাথা রেখে শেষ নিশ্বাসটা ফেলতে পারি এই ছিল আমার ওর কাছে শেষ চাওয়া। সৌমিত্র বলেছিলো পরের দিন আমরা দুজন অনেক দূরে কোথাও চলে যাব। সময় দেওয়া ছিল ১৬ই মে, সকাল ১০ টা।
বাড়ি ফিরে আমি ভাবতে বসি এটা কি ঠিক হচ্ছে? আমি একটা সন্তানকে তার মা বাবার থেকে আলাদা করে দিচ্ছি! আমি তো জানি বাবা মা না থাকার কি কষ্ট! সেদিন রাতেই ঠিক করি আর আমি ওর সাথে কোনো যোগাযোগ করব না ফোনের সিম নষ্ট করে দিয়েছিলাম সেদিন। পরের দিন সকালে উঠে মন মানতে চাইছিল না, একটা অসম্ভব অশান্তি। সেদিন গিয়ে দূর থেকে দেখেছিলাম সৌমিত্র পাগলের মত সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একই ভাবে দাঁড়িয়ে, সাথে ফোনে চেষ্টা করছে বার বার।
—তারপর?
—তারপর দীর্ঘদিন কেটেছে । ও হয়তো অভিমানে আমার সাথে আর দেখা করার চেষ্টা করেনি। তবে আমার সব লেখা ও পরে সেটা আমি জানতাম।
চল চল অনেক রাত হলো এবার ঘুমাতে যা।
মেয়েকে ঘুমাতে বলে, প্রীতি একটা গল্পের বই খুলে বসলো। ওটা ওর অনেক পুরোনো অভ্যাস, বেশির ভাগ দিনই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যায়, বাড়িতে থাকা নীলু মাসি রাতে ঘুম ভাঙলে এসে বই সরিয়ে, চাদর চাপা দিয়ে আলো নিভিয়ে দেয় ।। কিন্তু আজ পড়ায় মন বসলো না, শুধু মাথা জুড়ে পুরোনো স্মৃতির বিচরণ।
“না আজ আর পড়া হবে না” এই বলে বই টা মুড়ে আলো অফ করে শুয়ে পড়লো সে।
খানিক পরে হটাৎ শুরু হল অসম্ভব মাথার ব্যথা, এটা বেশ কিছুদিন জ্বালাচ্ছে ওকে, এখনও মেয়েকে কিছু জানায়নি কারণ এই সামান্য জিনিস কি আর বলবে।
আজ ব্যথাটা জেনো অন্য দিনের থেকে বেশী, উঠে জল খেতে গেছে হঠাৎ কালো এক নিবিড় অন্ধকার নেমে এলো ওর চোখের সামনে, ব্যস্ তারপর আর কিছু মনে নেই, যখন জ্ঞান ফিরল তখন সে হাসপাতালের বিছানায়।
হটাৎ শব্দে ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো সৌপ্রীথার, মা কে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে ওর মাথা কাজ করছিলো না খানিকক্ষণের জন্য। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলো রিসেপসানে, ওখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা হল তৎক্ষণাৎ। হাসপাতালে নিয়ে যেতেই এমারজেন্সিতে ভর্তি করে নিলো সাথে সাথে।
পরের দিন তখন সকাল ১০ টা,
সৌপ্রীথা ওষুধের দোকানে ডক্টরের দেওয়া ওষুধগুলো কিনতে এসেছে, এমন সময় কে যেনো ওর নাম ধরে ডাকছে শুনল, পিছন ফিরতে দেখে সৌমিত্র।
—হ্যাঁ, বলুন।
—তুমি ওষুধের দোকানে?কেউ অসুস্থ নাকি?
— মাকে কাল রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
— কি? মানে কেন? কি এমন হল? যখন আমার সাথে দেখা হলো ভালোই তো ছিল।
—রাতে হটাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়, জ্ঞান ফিরছে না দেখে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
—ডক্টর কি বলছেন?
—এখনও কিছুই বলেনি, অনেক কটা টেস্ট হবে তারপর জানাবে বলেছে।
—জ্ঞান কি ফিরেছে?
—হ্যাঁ, রাতে মেডিসিন দিতে জ্ঞান ফিরেছে, কিন্তু!
—কিন্তু কি?
—কিন্তু ডক্টররা ভাবছেন হয়তো বড়ো কিছু হতে পারে!
—মানে? কি এমন হতে পারে?
—জানিনা!
—আচ্ছা চলো আমি তোমার সাথে যাব।
—আপনি যাবেন?
—হ্যাঁ যাব।
—আচ্ছা চলুন।
হাসপাতালে পা দিতে হাতে এলো প্রীতির টেস্টের রিপোর্ট, ও ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত।
কথাটা শুনে পায়ের তলার মাটি সোরে গেলো ওদের দুজনেরই। প্রীতির হাতে আর খুব বেশী হলে একটা বছর।
নিজেকে খানিকটা সামলে মেয়েটা কে সান্ত্বনা দিতে লাগলো সৌমিত্র, “সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করিসনা!”
— মা ছাড়া আমার আর কেউ নেই আঙ্কেল!! মা চলে গেলে আমি কি করব! আমি একা হয়ে যাব!
—আমি আছি তো! চল আমি গিয়ে একবার ঘুরে আসি তোর মায়ের কাছে থেকে।
কেবিনে ঢুকে সৌমিত্র ডাকল “শ্রী, কেমন আছো?”
শ্রী সৌমিত্রর দেওয়া নাম, আবার ২৫ বছর পর কেউ ডাকল ওই নামে।
—তুমি এখানে? জানলে কি করে।
—এত কথা বলেনা, বাবা!
মেয়ের সাথে দেখা হয়েছিল।
— ওহ্, ভালো আছি!
ডক্টর কি বললো? আমার কি হয়েছে?
—কিচ্ছু হয়নি , তুমি একদম ঠিক আছো, কয়দিন
পর তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
—ওহ্ আচ্ছা। জানতো এখনও মেয়েটার বিয়ে
দিতে পারিনি, ওকে বিয়ে না দিলে আমি মরেও
শান্তি পাবনা গো। আমি তো জানি একা থাকার
কষ্ট কি!
—ধুর পাগলী, তুই মরবি কেন এত তাড়াতাড়ি!
—আমরা দুজনে মিলে ওর বিয়ে দেবো, অনেক
ধুমধাম করে।
কথাটা শুনে প্রীতি যেনো একটা অপার ভরসার জায়গা পেয়েছিলো সেদিন।
সৌমিত্র চলে যাওয়ার পর মেয়ে এলো ওর সাথে দেখা করতে, মা কে দেখে সেদিন ও নিজেকে সামলাতে পারেনি,হাউমাউ কেঁদে জড়িয়ে ধরলো।
—আরে পাগলি দেখ্ আমার কিচ্ছু হয়নি! আমি একদম সুস্থ আছি।
— তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই গো,তুমি না থাকলে আমি কার কাছে থাকবো।
—এক্ষুনি আমি কোথাও যাচ্ছি না, এখনও তোকে কত জ্বালানো বাকি আছে! তোর বিয়ে দেবো, তোর কোল জুড়ে ফুটফুটে একটা ছোট্ট ব্যাবি হবে তার সাথে খেলব।
— সৌপ্রীথা চুপ করে কাঁদতে থাকল আর মনে মনে বললো কি জানি মা তোমার কাছে হয়তো অতো সময় নেই।
—আন্টি আসব?
হটাৎ সমুদ্রর গলা শুনে দুজনেই চমকে তাকালো। সমুদ্র সৌপ্রীথার প্রেমিক। প্রীতি ওদের ব্যাপারে সব জানলেও সমুদ্রর বাড়ির কেউ জানেনা।
—তুমি এখানে কেন এসেছ? বাড়িতে জানলে ব্যাপারটা খারাপ হবে!
—আমি ওকে অনেক বার বারন করেছিলাম মা, ও আমার কথা শুনল না।
—আমি সেটা বুঝে নেবো! আন্টি অসুস্থ এটা জেনে আমার পক্ষে ওখানে বসে থাকা সম্ভব নয়।
—বুঝলে সমুদ্র এবার তোমার বাড়ির লোকের সাথে কথা বলতে হবে, আমি আর তোমাদের বিয়েটা ফেলে রাখতে চাইনা।
—হ্যাঁ, ঠিক আছে আন্টি। তুমি আগে সুস্থ হও।
“এবার আপনারা প্লিজ বাইরে যান, উনি এখনও ততটা সুস্থ না, এতক্ষণ কথা বলা ঠিক না ওনার জন্য।”
“আমরা এক্ষুনি চলে যাচ্ছি।মা আমি বাইরে আছি।” এই বলে ওরা দুজন বেরিয়ে গেলো।
বাইরে বেরোতে দেখা সৌমিত্র সাথে, সৌমিত্র আর সমুদ্র তো একে অপরকে দেখে অবাক!
—কাকাই তুমি এখানে? আমি জানি তুমি দিঘাতে আছো কিন্তু হাসপাতালে! তুমি ঠিক আছো তো! Everything is alright?
— আমি ঠিক আছি কিন্তু তুই এখানে ওর সাথে! কি ব্যাপার?
—না মানে, আসলে ও আমার খুব ভালো বন্ধু আর আন্টি আমাকে খুব ভালোবাসে তো তাই আর কি অসুস্থ শুনে বাড়িতে থাকতে পারিনি? প্লিজ কাকাই রাগ করোনা।
—তোমরা একে অপরকে চেনো?
—হ্যাঁ রে মা, এই পাগলটাই তো আমার সব, আমার এক মাত্র ভরসা।আর মহারাজ আপনি এখানে যেই কারণে আমিও সেই কারণে, আপনার আন্টির জন্য।
—তুমি আন্টি কে চেনো? আচ্ছা দাঁড়াও দাঁড়াও… এই সেই তোমার প্রীতি? Is it?
হালকা মুচকি হাঁসল সৌমিত্র। আর খুব ভালো করেই বুঝলো ওরা শুধু বন্ধু নয় তার চেয়েও বেশী।
কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আজ পঁচিশ বছর পর প্রীতির মেয়েও প্রায় প্রীতির মতো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে।
এক সপ্তাহ পর হাসপাতাল থেকে প্রীতিকে ছুটি দিলো, এই কয়দিন সৌমিত্র আর সমুদ্র দুজনে সৌপ্রীথার সাথেই ছিল। জানা গেলো কত পুরোনো কথা, সৌমিত্রর মা শেষে তার ভুল বুঝেছিলেন!
সৌমিত্রও জানলো, সেদিন কেনো প্রীতি যায়নি ওর কাছে।
কলকাতায় ফিরে তোর জোর শুরু হল সৌপ্রীথা আর সমুদ্রর বিয়ের, না!!ওদের বিয়েতে কোনো বাঁধা আসেনি।
সমুদ্র ধরতে গেলে ছোট্ট থেকে কাকার কাছে বড়ো হয়েছে তাই ফলতঃ সৌমিত্রর কথাই শেষ ছিল।
১৪ ফেব্রুয়ারি ওদের বিয়ের ঠিক হলো। এর মধ্যে চলতে লাগলো প্রীতির চিকিৎসা সাথে কেমো থেরাপি। বিয়ের দিন সুন্দর ভাবে বিয়ে মিটে গেলো।
মেয়ে চলে যাওয়ার পর ঘরে বসে কান্নাকাটি করেছিল প্রীতি।এমন সময় সৌমিত্রের আগমন…
—আসতে পারি?
—জিজ্ঞাসা করার কি আছে? আয়।
—বলছিলাম মহারানি এবার আমরা সেরে ফেললে কেমন হয়?
—কী সারব?
—কেনো বিয়ে!
—হ্যাঁ সেই বুড়ো বয়সে ভীমরুতি!
—না না ভীমরুতি নয়, বুড়ো বয়সে প্রেম প্রেম।
—এই যা তো তুই? একে আমার মন ভালো নেই!
—ঠিক আছে একজনের জন্য একটা গিফট্ ছিল সে নেবে না বুঝলাম!
(এই বলে উঠে যাচ্ছিলো সৌমিত্র, প্রীতি ওর হাতটা ধরলো ।)
—কি গিফট্!
—না থাক আমি দেবোনা!
—দিবি হ্যা়ঁ কি না!
—আচ্ছা আচ্ছা এই নে।
এই বলে একটা চকোলেট বক্স বার করে দিলো।
—হুম শুধু চকোলেট, সারাজীবন কিপটেমি!
এইসব বলতে বলতে বক্সটা খুলতেই হাতে এলো দুটো টিকিট! সাথে দার্জিলিং ট্রিপের পুরো প্যাকেজ।
—ওহ ওদের জন্য জন্য বেড়াতে যাওয়ার টিকিট কেটেছিস্? ভালো করেছিস্! ওরা যাক ঘুরে আসুক!
—না এটা আমাদের দুজনের টিকিট, আমি জানি পাহাড় যাওয়ার সখ তোর আগাগোড়া! আমরা নেক্স উইক দার্জিলিং যাচ্ছি।
—কী? তুই কি পাগল? শেষ বয়সে এসে ভীমরুতির শেষ নেই! চকোলেট, বেড়াতে যাওয়ার টিকিট কি হচ্ছে সৌম্য, বয়সটার দিকে তাকা!
—আমরা নেক্স উইক বেড়াতে যাচ্ছি এটা ফাইনাল!
পরের একটা সপ্তাহ বউভাত অষ্টমঙ্গলা চললো।সৌপ্রীথা এসে মায়ের বেড়াতে যাওয়ার সব প্যাকইনগ করে দিলো।
২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১০:০৫ দার্জিলিং মেইলের জন্য রওনা হলো, সৌপ্রীথা আর সমুদ্র দুজন গেলো ওদের স্টেশনে পৌঁছে দিতে।
দু কাপ চা নিয়ে বাংলোর বারান্দায় বসলো দুজন।
—দেখ সৌমিত্র আমাদের এভাবে চলে আসা কি ঠিক হল?
— আর কতদিন সকলের কথা ভেবে কাটাবি বলতঃ? কখনো তো আমাদের কথা ভাব! আজ জীবনের শেষ সীমানায় দাঁড়িয়ে তোর কাছে ভিক্ষা চাইছি…! থেকে যা না
প্লিজ!
—এভাবে বলিস না রে! একটা সত্যি কথা বলব?
— হ্যাঁ, বলনা!
— সেই তোকে ছেড়ে আসার দিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তে ভগবানের কাছে চেয়ে আসছি , যাই হোক অন্তত জীবনের শেষ নিশ্বাস টা যেনো তোর কোলে মাথা রেখে ত্যাগ করতে পারি।
(এই বলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো প্রীতি)
—কেনো বলছিস এসব? আমাদের কাছে আরো কয়েকটা মাস আছে। চল না একটা সংসার পাতি পাহাড়ে!
—আচ্ছা চল তাই হোক!
প্রীতি আর সৌমিত্র পাতলো একটা ছোট্ট পাহাড়ি সংসার।
এমন করে কেটে গেলো কয়েকটা মাস, কেমো থেরাপিটাও বেশ কাজ করছিলো। সংসারের আনন্দে ওরা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো অসুস্থতার কথা।
তারপর, হঠাৎ একদিন সকালে রান্নাঘর থেকে হুরমুর করে বাসন পরার শব্দ শুনে দৌড়ে গেলো সৌমিত্র।
গিয়ে দেখে প্রীতির শরীরটা লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে মাটিতে। তাড়াতাড়ি গিয়ে ওকে ধরে নিলো সৌমিত্র মাটিতে পরার আগেই। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ও।
—আ…মার কাছে আ…র সময় নেই রে! ভা…লো থা..কিস…
—তোর কিচ্ছু হবে না! আমি এক্ষুনি ডাঃ এর কাছে নিয়ে যাব তোকে, একটু ধৈর্য্য ধর।
—আ.. বার প.. রের জ..ন..মে সং…সার ক…র…ব আম…রা এখন চ…লি!
সৌমিত্র কোলে মাথা রেখে প্রীতির শেষ শাসনের সাথে সাথে গল্পের নির্বাণ প্রার্থী ঘটলো।
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.