লকডাউন এই শব্দটির সাথে অতীতে পৃথিবী পরিচিত ছিলনা। তবে বর্তমানে আমরা এক অন্য জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সংক্রামক করোনা ভাইরাসের কারণে হঠাৎ করেই সমগ্র পৃথিবী জুড়ে লকডাউন ঘোষিত হয়। ফলে আমরা এক অন্য জীবন স্বচক্ষে দেখলাম। আমাদের দেশে যখন লকডাউন ঘোষণা করা হয় তখনও হয়তো অনেকেই বুঝতে পারেনি এরপর ঠিক কি কি হতে চলেছে। কারণ আমরা হয়তো স্বপ্নেও ভাবিনি একটা ভাইরাসের জন্য বা যে কোনো সংকটজনক পরিস্থিতিতে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে! একটা গভীর সংকট থামিয়ে দিতে পারে পৃথিবীকে। তবে সত্যিই এই অবস্থায় লকডাউন করা ছাড়া কোনো উপায় ছিলোনা। বাইরে ছুটে বেড়ানো মানুষ হয়ে গেল গৃহবন্দী।
এ যেন এক অন্য পৃথিবী!
একবিংশ শতাব্দীর জীবনযাত্রা হঠাৎ যেন থমকে গেল। গত কয়েকদশকে বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতিসাধনের ফলে পৃথিবী এগিয়ে গিয়েছিলো কয়েক কদম। হঠাৎ করেই পাওয়া এই অবসর মানুষকে যেন প্রথমে সাময়িক একটা আনন্দ দিয়েছিলো। দীর্ঘদিনের ব্যস্ত জীবনের থেকে একটা বিরতি দিয়েছিলো এই লকডাউন। অনেকেই একটু স্বস্তি পেয়েছিলো এটা ভেবে যে এই অবিরাম ছুটে চলা, যান্ত্রিক, কর্মব্যস্ত ও ক্লান্ত জীবন থেকে অল্প কিছুদিনের একটা ছুটি মিলেছে। যেটা তারা আগে সারাদিনের শেষে বহুবার চেয়েছে! বিজ্ঞানের দুর্দান্ত সব আবিষ্কারের ফলে মানুষ গত কয়েকবছরে যন্ত্রনির্ভর জীবনযাপন করছে। এরফলে জীবন থেকে হারিয়েছে আবেগ, প্রাধান্য পেয়েছে বেগ। গতিশীল জীবন, ব্যস্ত জীবন, কেজো জীবন, বিলাসবহুল জীবন আমাদের কাম্য হয়ে উঠেছিল। আমরা হারিয়েছি নব্বইয়ের দশকের সেই সাদামাটা জীবনযাপন। এখন যাপনের থেকে প্রদর্শন বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এই জীবনে অনেকের নিত্যসঙ্গী হয়েছে কিছু প্রজেক্ট, কিছু ওষুধ এবং কিছুটা ডিপ্রেশন।
তবে লকডাউন কোনো মুক্তির চিঠি নয়। লকডাউন সাময়িক একটা পদক্ষেপ যাতে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পরতে না পারে। শুধু তো রাজ্য নয়, দেশ নয় সারা পৃথিবী এখন আক্রান্ত। তাই অনির্দিষ্টকালের জন্য নেওয়া এই সিদ্ধান্ত হয়তো রুখে দিতে পারতো এই গভীর সংকটকে। কিন্তু, যে মানুষেরা সারাক্ষন হেঁটে বেরিয়েছে রাস্তায় তাদের অনেকের পক্ষে সারাক্ষন ঘরে থাকাটাও শাস্তির মতো। আবার দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জন্য এই লকডাউন খানিকটা মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করার মতোই। যদিও সরকারিভাবে এইসময় ত্রাণ দিয়ে সহায়তা করা হয়। এছাড়াও বহু মানুষ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে যাওয়া মানুষজনকে নিত্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করে। আবার অন্যদিকে খবরে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে কীভাবে দিনে দিনে কোভিড 19 এর ফলে বেড়ে চলেছে মৃত্যুমিছিল। যে আশা নিয়ে লকডাউন শুরু হয়েছিল তা ব্যর্থ হয়। আমরা সেটা বুঝতে পারি মাস দুয়েক গৃহবন্দী থাকার পরে।
সোশ্যাল ডিসটেন্স, স্যানিটাইজার এবং মাস্ক এসব এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবু মহামারী দমন করা যায়নি। গৃহবন্দী অবস্থায় কিছু মানুষ ঘরে বসে কাজ করেছে এবং কিছুজন বেরুতে বাধ্য হয়েছে। ডাক্তার, নার্স, সাফাইকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী প্রমুখদের নিরলস প্রচেষ্টা যদিও ঠেকাতে পারেনি রোগকে। সাধারণ মানুষের মনে বাসা বেঁধেছে শঙ্কা।
এটা বোধহয় একটা ঐতিহাসিক সময়… যখন মানুষজন ঘরে থেকে লড়াই করেছে সুস্থভাবে বাঁচার জন্য। শহরের ব্যস্ততম রাস্তাগুলো শুনশান, নেই কোনো হর্নের আওয়াজ। নিজের চেনা শহর, চেনা অঞ্চল যেন অন্যরকম… কতরকম নাম না জানা পাখির ডাক আজকাল কানে আসে। আগে তারা কি ডাকতো? নাকি আমাদেরই কান পেতে শোনার সময় হয়নি?
নিজেদের আজ সময় দিয়েছে মানুষজন। পরিবারকে সময় দিতে ভুলে যাওয়া মানুষ সেইসব আপনজনের সাথে সময় কাটিয়েছে। বহুদিনের ধূলো জমে থাকা তানপুরায় যে সুর তুলতে ভুলে গিয়েছিল সে আবার এই অবকাশে তার ধূলো ঝেড়ে তাতে সুর বেঁধেছে। এই অদ্ভুত সময় বহু হারানো অভ্যাস, ভালোলাগা ফিরিয়ে দিয়েছে। ট্রাফিকের ধূলো-ধোঁয়ায় বাড়ি ফেরা মানুষ বহুদিন পর বিকেলবেলায় ছাদে যেতে শুরু করেছে। কারখানা, যানবাহন সবকিছু বন্ধ থাকায় এই সময় প্রকৃতি দূষণমুক্ত হয়ে উঠেছে, পৃথিবী সেজে উঠেছে অন্যভাবে। এতদিন মানুষের বহু অত্যাচার সহ্য করেছে প্রকৃতি… এই লকডাউনে প্রকৃতি মুক্তি পেয়েছে। প্রকৃতি যে রসদ সংগ্রহ করেছে তা আগামী আরও ১০০ বছর আমাদের খোলা হাওয়া দিতে পারে। পৃথিবী কিছুদিনের জন্য হলেও মুক্তি পেয়েছে এই গতানুগতিক জীবন থেকে।
এটাও পড়তে পারেন : মোবাইল ফোন থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন
সমস্যা থেকে মুক্তি আমরা পাইনি। রোগমুক্তি না ঘটলে আগের স্বাভাবিক জীবনে আমরা কবে ফিরতে পারবো জানা নেই কারোর। তবে এই লকডাউন আজীবন আমাদের স্মৃতির মনিকোঠায় এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়ে রয়ে যাবে জীবনের শেষদিন অবধি। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই সময়ে বহু দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি আমরা। ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে ঘরে বসে থাকা কোনো সুরাহা করতে পারেনা। এরফলে আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছে। এমনকি বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পরেছে। ‘পরিযায়ী শ্রমিক’ এখন আমাদের কাছে অতি পরিচিত শব্দবন্ধ। তাদের পরিণতি সত্যিই আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কত অন্ধকার জমে আছে। এইসব ঘটনা অনেকের মনে হতাশা, অবসাদের জন্ম দেয়। আগামীদিন হয়তো আমাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে যাবে।
তবে সবশেষে বলতেই হয় বহুকাল ধরে গতে বাঁধা জীবন থেকে একফালি মুক্তি দিয়েছে লকডাউন। নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে আর দূরে থেকেও মানুষের পাশে মানুষকে থাকতে শেখাচ্ছে। এই হঠাৎ পাওয়া অবসরে মানুষ চাঁদের আলো গায়ে মেখে রাত্রে বিছানায় শুতে গেছে। যদিও দীর্ঘদিনের এই সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মানুষের মনে একঘেয়েমি তৈরি করে। সবাই আবার বাইরের কর্মজীবনে ফিরে যেতে চায়। মুক্ত আকাশের নিচে সকলে সুস্থ বাতাসে শ্বাস নিতে চায়। তবু বলবো, যখন মহামারী কেটে যাবে, আমরা একটা সুস্থ সকালের আলো দেখবো তখন এই গৃহবন্দী দিনযাপনের স্মৃতি যেন জোনাকির আলো জ্বেলে দেবে আমাদের ব্যস্ততার মাঝে। এরপর আমরা আর অবহেলা করবোনা প্রকৃতিকে, ব্যস্ততার অজুহাতে উপেক্ষা করবোনা কাছের মানুষদের এই প্রত্যাশা রাখি।
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
In a spectacular celebration coinciding with the birthday of the iconic actor Prosenjit Chatterjee, the…
হিমেশ রেশামিয়ার পর সুরাশা মেলোডিজ থেকে অনুষ্কা পাত্রর নতুন গান পুজো আসছে মানেই বাঙালির নতুন…
This website uses cookies.