“হেড!” বাতাসে বনবন করে ঘুরতে থাকা এক টাকার কয়েনটার দিকে তাকিয়ে বললো জিতু। কয়েনটা মাটিতে পড়ে, কিছুটা গড়িয়ে গিয়ে, মাতালের মতো টলমল করতে করতে ঘাসের বিছানায় নিজেকে ছেড়ে দিল। এক পলক সেটার দিকে তাকিয়েই জিতু নাচতে শুরু করলো তার দলের বাকি ছেলেদের সাথে। “জিতে গেছি!” “জিতে গেছি!”, বলে চিৎকারটা সবে গগনভেদী হয়ে উঠতে চলেছে, এই সময় সপাটে একটা থাপ্পড় এসে পড়লো জিতুর গালে। বেমক্কায় চড় খেয়ে টলোমলো চোখে চোখ তুলে জিতু দেখলো, ছোড়দা। কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কান ধরে হিড় হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেল। তার কোকাবুরা ব্যাট মাঠেই পড়ে থাকলো। যদিও, ও জানে ওটা ঠিক মতো কেউ না কেউ বাড়িতে পৌঁছে দেবে। কিন্তু তার মাথাটা গরম হল অন্য কারণে। এক মাঠ বন্ধুর সামনে ছোড়দা এই ভাবে মারধোর করে তাকে তুলে নিয়ে আসলো, এটা মাথা গরম করে দেবার মতোই একটা ব্যাপার। তার উপর আজ মাঠে অপনেন্টের ক্যাপ্টেন ছিল ধ্রুব। জিতুর সাথে ধ্রুবর সম্পর্কটা সাপে-নেউলে। ওরা ক্লাসমেট হলেও সেই ছোট্ট বেলায় কী এক ঘটনার পর থেকে ওরা একজন আরেকজনকে দেখতে পারেনা। তাই আজ ধ্রুবকে হারিয়ে, জিতু সবকটা ম্যাচ জিততে চেয়েছিল। জিতেও ছিল। সব শেষে এই ছোড়দার চড়টাই সব মাটি করে দিল। কাল স্কুলে যে এ নিয়ে ভালো রকম আওয়াজ উঠবে, সেটা জিতু এখন থেকেই বুঝতে পারছিল। শুধুমাত্র এই ছোড়দাটাই যত নষ্টের গোড়া। জিতু মানছে, অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল, সন্ধ্যা ঘন হয়ে এসেছিল। এতক্ষণ বাড়ির বাইরে থেকে সে ভুল করেছে। কিন্তু বন্ধুদের সামনে এই অপমানটা ছোড়দা না করলেও পারতো। জিতু বাড়ি ফিরে ভেজা বেড়ালের মতো চুপচাপ দু’গাল মুড়ি খেয়ে পড়ার ঘরে পড়তে বসে গেল। মা আশেপাশে না থাকায় ঝাড় খাওয়ার হাত থেকেও বেঁচে গেল। তবে পড়তে বসে ও জ্বলজ্বলে চোখে এটাই ভাবছিল, ছোড়দা কে কী করে পাল্টা মারটা দেওয়া যায়?
সাধারণ ক্রিকেট খেলায়, স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী, টস, খেলার একদম শুরুতে হয়। টস দিয়েই খেলার উদ্বোধন। কিন্তু সাতগাছিয়ার এই রেললাইনের ধারের মাঠে খেলা ক্রিকেট ম্যাচগুলোর বৈশিষ্ট্য হল ক্যাপ্টেন যদি মনে করে, খেলা তাড়াতাড়ি শেষ করা প্রয়োজন, তাহলে সে বিপক্ষ ক্যাপ্টেনের সাথে সম্মতি নিয়ে খেলার মীমাংসা স্রেফ একটা টস দিয়ে করতে পারে। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, আদতে এর কয়েকটা সুবিধা আছে। প্রথমত, কারোর টিম যদি দুর্বল হয়, সে বুঝতে পারে যে, সে হেরে যাচ্ছেই ম্যাচটা, তাহলে এই টস তাকে একটা শেষ সুযোগ দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, দিনের শেষ ম্যাচ খেলতে গিয়ে অনেক সময় সন্ধ্যা হয়ে যায়, বল দেখা যায়না। তখন সেই ম্যাচের নিষ্পত্তি ঘটায় এই টস। নিয়মটা খটমট ও বিতর্কিত হলেও, জিতুদের বাবার সময়কাল থেকেই এটা চলে আসছে। অনেক ইতিহাসও আছে এই নিয়মের। হারা ম্যাচ জিতে, টিটকিরি খাওয়া, তার থেকে রাগারাগি, মারপিট এসব তো খুব সাধারণ। অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় টসে ম্যাচ জিতেও তর্কাতর্কি করা, আদতে কারা জিততো, এইসবও লেগেই থাকে আকছার। তবে আজকের খিচাইনটা অন্য রকম। জিতুকে তার ছোড়দা যখন তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে তখন ধ্রুব হঠাৎ বলে উঠলো, “আরে! দ্যাখ দ্যাখ! টেল পড়েছে! টেল! হেড নয়!”
জিতুর দলের একজন বলে উঠলো, “বললেই হল নাকি? চিটিংবাজ কোথাকার!”
ধ্রুব বললো, “তোদের ক্যাপ্টেন চিটিংবাজ! অন্ধকারে টেলটাকে হেড বলে চালিয়ে দিচ্ছিল! আমি ভুল বলছি কিনা নিজের চোখেই দেখে নে না!”
একজন ওই অন্ধকারেও ঘাসের মধ্যে ঝুঁকে দেখলো, সত্যিই টেল পড়েছে। তখন সে ক্ষেপে গিয়ে বললো, “জিতুকে ওর ছোড়দা যখন মারছিল, তুই সুযোগ বুঝে কয়েনটা উল্টে দিয়েছিস। তুই চিটিংবাজ!”
এবার দু’দলের অবশিষ্টরাও ঝামেলায় গলা মেলালো। কিন্তু সন্ধ্যে আরো কিছু গভীর হওয়ায়, সবারই বাড়ি থেকে ডাক আসতে শুরু করলো। তাই ঝগড়াটা মুলতুবি রেখে রাগে গড়গড় করতে করতে যে যার বাড়িমুখো হল।
পরেরদিন সকালে জিতু করলা গেলা মুখ করে স্কুল গেল। এক পিরিয়ড ক্লাস হওয়ার পর ক্লাসের হাওয়া দেখলো গরমই আছে। তবে ওকে নিয়ে তেমন কেউ খিল্লি করছেনা। তাই ও একটু অবাক হয়ে বেস্ট ফ্রেন্ড লাতুকে জিজ্ঞেস করল, “কেসটা কী রে? একটা বাওয়াল হবে মনে হচ্ছে!” বলার পর, লাতু কালকের ঘটনাটা জিতুকে বললো। শুনে জিতুরও মটকা গরম হয়ে গেল। কাল ও স্পষ্ট দেখেছে হেডই পড়েছিল। ওই ধ্রুবটাই যত নষ্টের গোড়া। আজ টিফিনে একটা মারামারি ফাটাফাটি হবেই! জিতু শেষ দেখেই ছাড়বে! মগের মুলুক নাকি? যে যা ইচ্ছা করে চলে যাবে আর ও বসে বসে দেখবে?
(ক্রমশ পরবর্তী পর্বে…)
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
In a spectacular celebration coinciding with the birthday of the iconic actor Prosenjit Chatterjee, the…
হিমেশ রেশামিয়ার পর সুরাশা মেলোডিজ থেকে অনুষ্কা পাত্রর নতুন গান পুজো আসছে মানেই বাঙালির নতুন…
The highly awaited trailer of grand Puja release, "Dawshom Awbotaar", produced by Jio Studios and…
আসছে Klikk Originals এর আগামী ওয়েব সিরিজ। জন হালদার এর প্রযোজিত ও পরিচালিত রোমহর্ষক থ্রিলারNH6…
This website uses cookies.