LaughaLaughi

You Create, We Nurture

Special Story

নারীবাদী, না খারাপ লোক?

আজকের সমাজে আপনি হয় ‘নারীবাদী’, নাহয় ‘খারাপ লোক’। হ্যা সমাজের বেশিরভাগ লোকের অন্তত তাই ধারনা। আপনি কিছুতেই বোঝাতে পারবেন না যে, আপনি নারীবাদী নয়, তার মানে এটা নয় যে আপনি পুরুসবাদী। আজকের পৃথিবীর লড়াইটা তো সমানাধিকার নিয়ে। তা এই, সমানাধিকার বলতে কাদের কাদের সমানাধিকার বোঝায়। সংকীর্ণ মানসিকতার থেকে যেটা উঠে আসে, সেটা হল নারী এবং পুরুষের সমানাধিকার। কিন্তু আজকের পৃথিবীর যা অবস্থা, তাতে আমি শুধুমাত্র নারী এবং পুরুষের সমানাধিকার নিয়ে লড়াই করব কেন! আমাদের লড়াই, আমাদের প্রতিবাদ হওয়া উচিত পৃথিবীর সকল মানুষের সমানাধিকার। লিঙ্গ, ধর্ম, জাতি, বর্ণ এবং কাঁটাতার, যা কিছু মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে, সেই সবকিছুর বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করাই আমার কর্তব্য।

আলোচনার সুবিধার্থে কিছু শব্দ ও তার সংজ্ঞা দেওয়া হল,
ফেমিনিস্ম- নারীর অধিকারের জন্য লড়াই।
মিসোজিনি– নারীর প্রতি বিদ্বেষ এবং ঘৃণা।
মিসঅ্যান্ড্রি- পুরুষের প্রতি বিদ্বেষ।
হিউম্যানিস্ম– মানুষের অধিকার এবং সকল মানুষের সমানাধিকারের জন্য লড়াই।

আমি একজন হিউম্যানিস্ট কারণ আমি মনে করি যে আজকের পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে প্রচুর বিভেদ এবং আমি চাই পৃথিবীতে এমন একটা সময় আসুক যখন মানুষের লিঙ্গ, ধর্ম, জাতি, বর্ণ নয় তার পরিচয় হয়ে উঠুক সে মানুষ।
আমি কেন ‘নারীবাদী’ নই? কারণ ‘নারীবাদ’ শব্দটি নিয়ে আমার সমস্যা। নারীবাদ শব্দটিতে শুধুমাত্র নারী শব্দটি উঠে আসে। অর্থাৎ শুধুমাত্র একটি লিঙ্গের জন্য লড়াই হয়ে ওঠে আমার নীতি। তাই আমি নারীবাদী নই। আমি মানববাদী। মানববাদ শব্দটির মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতিকে নিয়ে লড়াই করা যায়। তাই সেটি আমার নীতি।

এখন আসি মিসোজিনি এবং মিসঅ্যান্ড্রি টার্মদুটি নিয়ে। এই যুগে মিসোজিনিশ্টদের সংখ্যা প্রচুর। তবে সেটা ঠিক ঘৃণা নয়, সেটি হল অবদমন। নারী মাত্রই দুর্বল- এটি অনেকেরই বদ্ধমূল ধারনা। তবে শহুরে, শিক্ষিত তরুণদের ক্ষেত্রে এই মানসিকতা ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে এবং আমি আশাবাদী এটি অদূর ভবিষ্যতে সমূলে বিনষ্ট হবে। যতদিন না হচ্ছে, ততদিন আমাদের লড়াই এবং সচেতনতা অভিযান করে যেতে হবে।

যা কিছু উগ্র। তার সবটাই মাচা এবং ছাগু। উগ্র নারীবাদ বিষয়টিও তাই। উগ্র নারীবাদীদের মনে সব পুরুষরাই সমান এবং তারা সকলেই তাদের পেনিস নামক অঙ্গটি সামলাতে পারে না। আর এই উগ্রতার থেকে জন্ম নেয় মিসঅ্যান্ড্রি। এটি একটি অসুখ এবং এই অসুখ খুব তাড়াতাড়ি সমাজটাকে কলুষিত করে তুলবে। ও আচ্ছা, আপনি উগ্র নারীবাদীদের মিসঅ্যান্ড্রি মনে করেন না। একটি ছোট উপায় বলি তাহলে। একজন উগ্র নারীবাদীর বিপক্ষে তর্ক শুরু করুন এবং তর্কের একটা সময় বলুন, “ উগ্র নারীবাদীরা ছাগু হয়”। দেখবেন সে তৎক্ষণাৎ “ স্লা সব পুরুষ সমান” তকমা দেগে দেবে। না এই রোগটির বিরুদ্ধে কি করে লড়তে হয়, সেই উপায় আমার জানা নেই আপাততও। আপনার জানা থাকলে কমেন্টে বলুন।

ছবি সৌজন্যে- প্রাণের বাংলা

দ্বিচারিতা এবং খিস্তিঃ-

আমার চেনা ৯০ শতাংশ নারীবাদী খিস্তি দেয় এবং শুধু নারীবাদী কেন এই দেশের সবথেকে জনপ্রিয় খিস্তি হল ‘চুতিয়া’। আপনি একজন নারীবাদীকে বলুন আপনি নারীবাদী নয়, সে আপনাকে বলবে, ‘চুতিয়া’। চুতিয়া শব্দটি এসেছে ‘চুত’ শব্দটি থেকে। আর ‘চুত’ মানে হলও, যোনি/ ভ্যাজাইনা। অর্থাৎ একজন নারীবাদী অন্য একজন অনারীবাদীকে খিস্তি দিচ্ছেন এমন একটি শব্দের মাধ্যমে যেটায় নারীকে সেক্স সিম্বল বা সেক্স কোমোডিটি হিসেবে প্রদর্শন করা হচ্ছে। আমি মাদারচোদ বা বাঞ্চদের মত খিস্তিগুলিকে বিশ্লেষণ করলাম না। সেটা আপনারাই বুঝেনিন।

লাভ, সেক্স অ্যান্ড ধোঁকাঃ-
একসাথে দুজনকে ভালবাসা যায়? একজনের সাথে একটি প্রেমের সম্পর্কে থেকে কি অন্য কারও সঙ্গে সেক্স করা যায়? এই প্রশ্নগুলির কি নারীবাদ বা পুরুসবাদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক আছে? আমার মনে হয় নেই। কিন্তু নারীবাদীরা এই প্রশ্নগুলিতে জর্জরিত করে দেয়। হ্যা, ভার্জিন নয় এমন মেয়েকে বিয়ে করব কিনা – এটি একটি বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন। এর উত্তরে বলি, হ্যা করব। তবে আমার সঙ্গে সম্পর্কে থাকাকালীন আমার প্রেমিকা অন্য কার সাথে শোবে, এটা আমি মেনে নিতে পারব না। একইভাবে আমি একজনের সঙ্গে সম্পর্কে থাকাকালীন অন্য কারও সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে যাব, সেটা আমার অপরাধ। ভালবাসার সঙ্গে আসে বিশ্বাস এবং দায়িত্ব। সেটা নারী- পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর এই পরিচ্ছেদটি সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত মতামতের ওপর ভিত্তিশিল।

সবশেষে বলি, নারীরা যেমন পুরুষের থেকে কোন অংশে কম নয়, তেমনি বেশিও নয়। পুরুষেরা যেমন দেবতা ফেবতা কিসসু নয়, তেমনি নারীরাও দেবী নয়। সবাই মানুষ। সাধারণ মানুষ। কিন্তু নারী- পুরুষের শরীরের বিপাকের হার আলাদা। হরমোনের পরিমাণ এবং ব্যাল্যান্স আলাদা। তাই স্বভাবগত দিক থেকে নারী ও পুরুষের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকবেই। কিছু স্পেসিফিক স্বভাব যেমন পুরুষের থাকে , আবার কিছু বিশেষ স্বভাব পুরুষের থাকে। এই বিশেষ স্বভাবগুলো যেমন কিছু ক্ষেত্রে সুবিধাজনক আবার কিছু ক্ষেত্রে সেগুলি অন্যদের মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক করে। আবার কিছু ব্যাতিক্রমও আছে। সুতরাং নারীবাদীরা, মানুষকে চিনুন। মানুষকে ভালবাসুন। কুয়োর ব্যাং হয়ে না থেকে কিছু নারীবাদের বই পড়ুন। দেখবেন ভাল লাগবে। সুস্থ বোধ করবেন। তরল নারীবাদ এবং ছদ্ম নারীবাদের যুগে চলুন না, সবাই মিলে একটু মানুষকে ভালবাসি। আর আমি বরং একটা প্রেমের গান গাই।

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi