LaughaLaughi

You Create, We Nurture

Emotional

দেবী-পক্ষ

দেবী-পক্ষ
“আশ্বিনে ওই শরতে,
সাজানো পুষ্পরথে..
গিরিরাজ কন্যা উমা,
আসবে পিতার ঘরে।”

শ্যামল পোটো গান গায়তে গায়তে ডাক পাড়লো,
দেবী…,,, ও দেবী… আয় তো মা, সময় হয়ে এলো যে…
মহালয়ার পূর্ন লগ্নে, দেবীপক্ষের সূচনা হবে,
মায়ের চোখ টা এঁকে দিয়ে যা এসে..।

(ছবি:- সংগৃহীত)

প্রতিবার তার মেয়েই ছোটো থেকে মায়ের চোখ আঁকে,
তাই, শ্যামল পোটো মায়ের মুর্তি গড়ে এবং চোখ টা শুধু আঁকায় তাকে।
সে বলে, তার মেয়েই নাকি সাক্ষাত মা দুর্গা।
কিন্তু এবার আর তা হয়নি, ওকে গিলেছে দুষ্টু দানবেরা।

ভাগ্যের কি পরিহাস, গরীবের ঘরেই এমন হতে হয় ঠাকুর রে?
হঠাৎ রাতে খবর আসে, শ্যামল পোটোর ঘরে,
তার মেয়ে পরে রয়েছে, ছিন্ন এবং ভিন্ন শরীরে।
শ্যামল তখন রং করছিলো মায়ের প্রতিমা জুড়ে।

ছুটে গিয়ে শ্যামল দেখে জমিদারের দুই ছেলে,
মাঝখানে তে পড়ে আছে, তার ছোট্ট মেয়ে।
শ্যামল বলে, গরীব বলে, মা রে তুই চুপ থাকলি..
তোর চক্ষু যে দান করে, তার মৃত্যু এভাবে দেখলি?

(ছবি:- সংগৃহীত)

দেবী-র মৃত দেহ সৎকারের পর, শ্যামল মায়ের কাছে এসে,
প্রশ্ন করে, মারে….. ওর অপরাধ ছিলো কিসে!
গরীব পোটো এবং ঠাকুর গড়ি, এটাই কি ছিলো মোর পাপ!
বল মা, সর্বসান্ত করে কিসে পেলি তুই লাভ?

যে জমিদারেরা মারলো দেবীকে, তাদের বাড়ি পুজো নিতে যাবি?
আর আমি গরীব বলে, আমার মেয়েকে নিয়ে নিবি!
ওদের কাছে হেরে গেলাম, জোর নেই আমার..
মেয়ের বিচার চাইতে গিয়ে, খেলাম চাবুকের মার।

কেনো মা রে, পারলিনে তুই, মেয়েটাকে বাঁচাতে,
কাল সকালে কে আঁকবে চোখ, পারবি এবার বলতে?
জমিদারকে বললাম, কি দোষ ছিলো! ঠাকুর বানায় আপনাদের,
আর সবচেয়ে বড়ো ক্ষতি, আপনারাই করলেন মোদের।

শুনে জমিদার ভেঙে দিয়ে গেলো মুর্তি গুলো সব,
এখন আমি কেমনে বানাবো, একদিনে অতসব?
বলে গেছেন জোড় গলায়, ঠাকুর না পেলে…
পোটো… দেখবি কাল কেমন লাগে, সবার সামনে উলঙ্গ সাজালে।

মা রে, এ দৃশ্য দেখার আগে নে না আমায় তুলে….
এখন ও তুই চুপ থাকবি, এবং থাকবি ওদের দলে?
বলতে বলতে ক্লান্ত শ্যামল কখন পড়েছে ঘুমিয়ে,
মায়ের পায়ের কাছে মাথা রেখেছে, প্রদীপখানি নিভিয়ে।

(ছবি:- সংগৃহীত)

পরের দিন সকাল বেলা শ্যামল উঠে দেখে..
মায়ের প্রতিমা জুড়ে যেন দেবী-র শরীর আছে।
শ্যামল বলে মা রে, একি রুপ দেখালি..
সত্যি তুই সাক্ষাত দূর্গা, আমার মেয়েকে পাঠালি?

এমন সময়, জমিদারের ডাক, ঠাকুর কতদুর..
এসে দেখে, মাটি নয়, এযে জ্যান্ত দুর্গা ঠাকুর।
ঠকবাজ বলে জমিদারের ছেলে, মারতে এলে এদিকে,
দেবী যেন ত্রিশুল ধরে, সত্যি মায়ের রুপে।

দুটো অসুর বধ হয়, পোটোর মেয়ের হাতে,
সেদিন যারা মেরেছিলো, দেবী কে রাস্তাতে।
শ্যামল বলে, মারে, তুই আছিস জগৎ জুড়ে,
আমার কথা রেখেছিস, এবং শাস্তি দিয়েছিস পাপীরে।

(ছবি:- সংগৃহীত)

সত্যি আজ দেখলাম তোকে, আসল মায়ের রূপে,
আজ থেকে তুই পুজিত হলি, আমার কুঁড়েঘরে।
মহালয়ার শুরুর সাথে শ্যামলের চলছে দুর্গা পূজো,
ঘন্টা বাজছে, উলু দিচ্ছে এবং মন্ত্র বলছে পোটো….

“যা দেবী সর্বঃভূতেসু মাতৃ রূপেনসংস্থিতা
নমঃস্তসে, নমঃস্তসে, নমঃস্তসে, নমো নমোঃ।
যা দেবী সর্বঃভূতেসু শক্তি রূপেনসংস্থিতা
নমঃস্তসে, নমঃস্তসে, নমঃস্তসে, নমো নমোঃ।”

এটাও পড়ুন: পুজোর পাঁচ দিন উৎসবে? নাকি আতঙ্কে?

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi