LaughaLaughi

You Create, We Nurture

I got a story to tell

যদি নেপথ্যে বাজে গান…

“আমি কত টাকা মাইনে পাই তুমি জানো না? রোজ রোজ ইলিশ খাওয়ার ইচ্ছে থাকলে আমায় গলায় ঝোলাতে গেলে কেন? তোমার বাবার পছন্দমতো কাউকে বিয়ে করলেই তো পারতে।
এই মাছ যদি ভালো না লাগে ছুঁড়ে ফেলে দাও!”
অরূপের কথাগুলো শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো মৌপিয়া, “সে কথা কি তোমাকে একবারের জন্যেও বলেছি? সংসারের কত কাজ তোমরা পুরুষ মানুষরা কী বুঝবে? তার মধ্যে এইসব ছোটো মাছ এনে হাজির করা! চুলোয় যাক রান্নাবান্না! খাওয়ার হলে নিজে করে খাও!
জবাবে কিছু একটা বলতে গিয়েও চুপ করে গেল অরূপ। গলার স্বরটা পাল্টে গেল নিমেষে, “এই থামো থামো; শোনো, সেই গানটা বাজছে… সেই গান…

***

“কি! আর কিস্যু করে না? মানে বেকার! তুই এমন কী পেলি ওই ছেলেটার মধ্যে? বিয়ের পর তোকে কী খাওয়াবে শুনি? শুধু গান শুনে কি পেট ভরবে তোর? বাস্তবের দিকে তাকা মউ। ভূধরের ভালোবাসা দুদিন বাদে উদরে নামবে। কল্পনা তুমি মেয়েকে বোঝাও, বোঝাও ওভাবে হয় না। আ-আমার শরীরটা খারাপ লাগছে…”
কল্পনা পরিতোষকে বারান্দার ইজি চেয়ারটায় বসিয়ে রেডিওটা চালিয়ে দিল আস্তে করে। বাড়ির পরিবেশ শান্ত হচ্ছে আবার…

***

খবরটা প্রথমে উড়ো ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিল অরূপ। কিন্তু সত্যি সত্যিই যে ঘটনাটা ঘটবে ভাবতে পারেনি। ভাবতে না পারার কারণ অরূপের এই নিয়ে কলেজে পাঁচবছর চলছে, অমন একটা ফেল্টুস ছেলেকে কে পছন্দ করবে? তাও নাকি মৌপিয়া ব্যানার্জি! সিনিয়র জুনিয়র নির্বিশেষে সবাই যার প্রেমে পড়ে যায় ঝুপ করে। অরূপেরও যে তাকে ভালোলাগে না এমনটা নয় কিন্তু ওভাবে প্রেমে আটকে থাকা তার কাছে মিনিংলেস। অগত্যা উড়ো ভেবে উড়িয়ে দেওয়াটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু আজকে কলেজে ঢোকার মুখেই শ্রাবণী একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়েছে অরূপকে। তাতে রবিঠাকুরের সেই গানটা। নীচে ডানদিকে ছোট্ট করে লেখা “উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো। ইতি, মউ।”

***

“কাম অন্ মৌপিয়া, বি রিয়ালিস্টিক। আঙ্কল তো ঠিকই বলেছে। শুধু গান দিয়ে কি আর পেট ভরে?
ইউ নো, আমার কাছে ‘বিটেলস’টা ওষুধের মতো। অফিস করে এসে এনার্জি ফুরিয়ে গেলে ওসব শুনি। কিন্তু তাই বলে তো না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি না।
গান মানুষের জীবনে একটা এন্টারটেইনমেন্ট ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। আর তুমি জাস্ট একটা এন্টারটেইনমেন্টের জন্যে আমায় না করছো? সো সিলি! তোমার ওই আনএমপ্লয়েড বয়ফ্রেন্ড কত বড় গায়ক শুনি? আমি তোমায় হাজারটা সেলিব্রিটি গায়কের ক্যাসেট কিনে দিতে পারি এক্ষুনি।”
ঠাস্ করে একটা শব্দ হল ঘরের ভেতর। মৌপিয়ার চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে, পরিতোষের ঠিক করা পাত্র তখন গালে একটা হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে…

***

“কি গো, কেমন হয়েছে বললে না তো? বলছি আর ভাত দেবো?” মৌপিয়ার চোখে আদরের জিজ্ঞাসা।
অরূপ শেষ দলাটা চিবোতে চিবোতে বলল, “নাহ থাক। এরপর পেট ফেটে যাবে। আহা, আজকে যেন মায়ের হাতের চচ্চড়িটা খেলাম।”
মৌপিয়া শুনে একটু হাসলো, “ইশ, হয়েছে! আর তেল দিতে হবে না। আর, সরি।”
হাত ধুতে ধুতে অরূপ বলল, “সরি তো আমার বলা উচিত ছিলো। সত্যিই তো, তুমি একা হাতে কতটা সামলাবে আর। ওসব সরি-টরি বাদ দাও তারচেয়ে চলো একসাথে মিলে থ্যাঙ্ক ইউ বলি সেই গানটাকে আবার।”

ফের বসন্ত নামলো ওদের ঘরে। নেপথ্যে সেই গান-ই— “আমারও পরাণ যাহা চায়…”
আজ প্রমাণিত হলো পরিতোষবাবু ভুল বলতেন। শুধু গান দিয়েও কখনও কখনও পেট ভরে।

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi