LaughaLaughi

You Create, We Nurture

I got a story to tell

বইমেলাতে প্রেম

“বইমেলাতে প্রেম”! বইটা হাতে নিতে নিতে তনিমা বলে ওঠে, ” বাহ্ বেশ ইন্টারেস্টিং নাম তো বইটার”।

“উফ্ কী ভিড়” মাথার ঘামটা মুছতে মুছতে অদ্রিজা তনিমাকে বলল।

তনিমা মুখটাকে বেঁকিয়ে নাটুকে ভঙ্গিতে বলে ওঠে, ” আহারে আমার বার্বি ডল্, এটা বইমেলা বুঝলি, ভিড় তো এখানেই হবে নাকি”

অদ্রিজা এই প্রথম বইমেলাতে এল। ছোটোবেলা থেকে এখানে আসার প্রচন্ড ইচ্ছা থাকলেও হয়ে ওঠেনি সেটা। আজ তাই বন্ধুরা বলল তাই আর না করতে পারেনি সে।

তনিমা অবশ্য প্রতিবছরই আসে বইমেলাতে, তাই রাস্তাঘাট ওর ভালোই চেনা।

এত বইয়ের দোকান অদ্রিজা দেখেনি কোনোদিনও যদিও কলেজ স্ট্রিট গেছে সে তবুও বইমেলা একটা আবেগ।

অদ্রিজা মনোযোগ দিয়ে আশপাশ দেখছিল পেটে খোঁচা খেয়ে বিরক্তি চোখে তনিমার দিকে তাকায় সে, তনিমা আবার বলে,

” কী রে বইটা নিবি?”

” উহুঁ, ওসব প্রেম প্রেম ন্যাকামোর থেকে ভালো কোনো বই দ্যাখ তো”

” যতই ন্যাকামো বল মামণি, ওপাশের স্টল থেকে কিন্তু ওই ছেলেটা তখন থেকে তোমাকে দেখছে”

কথাটা বলে তনিমা হাসতে হাসতে অদ্রিজার গাল টিপে দিল।

প্রথমে অবাক হলেও অদ্রিজা এবার ভালো করে ছেলেটাকে দেখার চেষ্টা করে। লম্বা প্রায় ছ’ফুটের কাছাকাছি, ডার্ক স্কিন, ট্রিম করে কাটা দাড়ি আর হালকা বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবিতে বেশ লাগছিল।

আবার পেটে খোঁচা মারে তনিমা,

” কী রে তুই যে নির্লজ্জের মতো দেখছিস। বাই দ্য ওয়ে উনিও বাসন্তী আর তোর শাড়ীও বাসন্তী এখন শুধু একটা গোলাপ হলেই মামলা সেট হয়ে যায়”

অদ্রিজা রাগতে গিয়েও হেসে ফ্যালে আর তখনই ছেলেটার সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যায় তার। এক মুহূর্তের দেখা তাও অদ্রিজার কেমন লজ্জা লাগে সে চোখ নামিয়ে নেয়, বুকের ধুকপুকানিটা যেন দ্বিগুণ বেড়ে যায় তার।

সে তনিমার হাত ধরে টেনে তাকে স্টলের বাইরে আনে,

” কী রে কী হল? তুই যে নতুন বউ এর মত লজ্জা পাচ্ছিস যে”

অদ্রিজা মাথা নাড়ে। সে তনিমাকে ধমকাতে যাচ্ছিল হঠাৎ থেমে গেল কারণ সেই ছেলেটা তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। অদ্রিজার মনে হল সে এবার হার্টফেল করবে, তনিমা তাকে ফিসফিস করে বলে,

” স্টেডি, অদু স্টেডি”

ছেলেটা তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে হেসে জিজ্ঞেস করে,

” নমস্কার।”

তার হাসিতে এমন কিছু ছিল অদ্রিজাও যেন হেসে ফেলে,

” নমস্কার”।

তনিমাও একটু হেসে নমস্কার বলে তাকে।

” তো এই প্রথম নাকি বইমেলাতে?”

” অদুর প্রথম, আমি বহুবার এসেছি” তনিমা জবাব দেয়

” অদু!”

অদ্রিজা এবার পেটে খোঁচা দেয় তনিমার, ” না না, অদ্রিজা”

” ও, অদ্রিজা। বেশ ভালো নাম তো। আমার নাম অনুভব আলম”

” ও হো”

বেশ কিছুক্ষণ দুপক্ষই চুপ থাকে। তনিমা খানিকটা ইতস্তত করে বলে,

” বলছি আমাকে একটা ইমপর্টেন্ট ফোন করতে হবে, তোরা কথা বল, আমি আসছি একটু” বলে সে মুচকি হসে চলে যায়।

” উম্ আপনার বাড়ী কী কলকাতা তেই?” অনুভব জিজ্ঞেস করে।

” না, ঠিক কলকাতা নয়, হাওড়ার ওদিকে। আর আপনার? ”

” আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, প্রতিবছর আসি”

অদ্রিজা হেসে বলে, ” তাহলে তো আমাদের অতিথি আপনি, আপনাকে তো আপ্যায়ন করতে হবে।”

” সে করতে পারেন তবে অতিথি বলে দূরে ঠেলতে পারবেন না। কলকাতা কিন্তু খুব কাছের আমার, এত সুন্দর, এত প্রিয়”

কথাটা বলে সে অদ্রিজার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুটা। অদ্রিজার মনে হল সে দৌড়ে পালায় কিন্তু কী যেন আটকে রেখেছে তাকে,

” আপনি প্রতিবছর আসেন, আকর্ষনটা বইমেলায়? নাকি বিশেষ কিছুর প্রতি?”

” উম্ এতদিন তো বিশেষ কিছু ছিল না, তবে এবার মনে হয় …”

কথাটা শেষ করে না সে।

অদ্রিজা হেসে বলে,

” তা কী কী বই কিনলেন এবার?”

” অনেক কিছুই। তবে আপনার হাত যে একদম ফাঁকা।”

” হ্যাঁ আসলে কোনোবই সেভাবে পছন্দ হচ্ছে না”

অনুভব এবার হেসে বলে,

” তা হলে আমি একটা বই দিলে আপত্তি নেই তো?”

এতক্ষণ সে হাতটা পিছনে রেখেছিল অদ্রিজা তাই দেখতে পায়নি, এখন সে দেখে তার হাতে একটা বই। ” “বইমেলাতে প্রেম”!

” একী? এমা না না ”

” না না, মানেটা কী? দেখুন বইমেলাতে এসে একটা উপহার নাহয় নিলেন”

” কিন্তু এভাবে?!”

” লেখক কিন্তু নিজের বই তার পছন্দের মানুষকে দিতেই পারে”

অদ্রিজা হাত বাড়িয়ে বইটা নেয় খানিকটা অবাক হয়েই। বইয়ের প্রথম পাতায় লেখা লেখকের নাম, অনুভব আলম। সে এবার হেসে ফেলে,

” তাহলে শুধু শুধু নেব না, কিছু তো নিতেই হবে”

” টাকা নেব না।  আপনার শুধু একটা দিন চাই আমার, বলুন বেরোবেন?”

অদ্রিজার গাল লাল হয়ে গেল সে আমতা আমতা করে বলল,

” উম্…”

” এপার বাংলা ওপার বাংলা দুটোই সমান আমার কাছে। তবু যদি আপনার সঙ্গ পাওয়া যেত”

অদ্রিজাকে চুপ থাকতে দেখে অনুভব আবার বলে ওঠে,

” আচ্ছা পরে ভেবে বলবেন”

বলে সে চুপ করে থাকে। অদ্রিজা এবার ধীরে ধীরে বলে,

” ওপার বাংলা দেখার বড় শখ আমার। আপনি তো লেখক, একটা অটোগ্রাফ দেবেন?”

অনুভব চকিতে একবার তার দিকে তাকিয়ে, বইয়ের প্রথম পাতায় কিছু লিখে দেয়।

তনিমা চলে আসে,

” সরি একটু লেট হল”

অনুভব হেসে বলে,

” তাহলে এবার আসি আমি? ভালোই লাগল কথা বলে”

” আমাদেরও।” তনিমা বলে।

অদ্রিজা চোখ তুলে আলতো হেসে বলে,

” আবার আসবেন, দেখা হবে আবার”

অনুভব হাত তুলে নমস্কার করে হেঁটে চলে যায়। অদ্রিজা তার চলে যাওয়া দেখছিল হাঁ করে, পেটে খোঁচা খেয়ে সে বিরক্তি চোখে তনিমার দিকে তাকায়,

” নতুন বই আহা প্রথম গিফ্ট, তা ভালো ভালো”

অদ্রিজা কিছু না বলে একটু হাসে তারপর বইয়ের প্রথম পাতা খোলে,

” খোঁপার ওই গোলাপ দিয়ে মনটা কেন এত কাছে টানলে, পারবে কী বাসতে ভালো, আমাকে জানলে আমাকে তেমন করে জানলে?

বইমেলাতে এবারে প্রাপ্তি শুধু বই নয়, আরও অনেক কিছু… তোমার বন্ধুত্ব। পিছনে তাকিও কিন্তু”

শেষ লাইনটার মানে বুঝতে তার একটু সময় লাগে তারপর সে পিছনের পাতা ওল্টায়। একদম শেষ পাতায় লেখা,

” অবশেষে এলে তুমি” অনুভবের ফোন নাম্বার লেখা।

বইটা হাতে নিয়ে সে হাসে, বইমেলার বই বই গন্ধ আর নতুন প্রেমের আমেজ তার মনকে ততক্ষণ আবেশ করে রেখেছে।

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi