LaughaLaughi

You Create, We Nurture

I got a story to tell

এভাবেও ভালোবাসা যায়…

এভাবেও ভালোবাসা যায়…

বাঙালির কাছে ফুটবল শুধু একটা খেলা নয়। ফুটবল এমন একটা ভালোবাসা যা মিইয়ে যাবেনা কোনোদিন। ফুটবল এমন একটা বিষয় যা নিয়ে আজ থেকে একশো বছর পরেও মোড়ের দোকানগুলো তর্কবিতর্কে উষ্ণ হয়ে থাকবে। কিন্তু বাঙালির ফুটবলপ্রেম মানে কি সারাজীবন যুবভারতী থেকে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের ডার্বি দেখেই ক্ষান্ত হওয়া? ফুটবলপ্রেমী বাঙালি মানে কি শুধুই রকে বসে মারাদোনা থেকে মেসির সমালোচনা করে যাওয়া? শুধুই কি আয়েস করে টিভিতে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখা? আন্তর্জাতিক ফুটবলকে দূর থেকেই ভালোবেসে যাওয়া? যদি তা নাই হয় তবে ফুটবলকে বাঙালি ঠিক আর কতটা ভালোবাসতে পারে সে জবাব দিতে তৈরি খাস কলকাতারই এক দম্পতি পান্নালাল চ্যাটার্জ্জী এবং তার স্ত্রী চৈতালি চ্যাটার্জ্জী।

বাঙালিকেই ব্যাঙ্গ করে রবিঠাকুর একবার লিখেছিলেন “ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো, পোষ-মানা এ প্রাণ/ বোতাম-আঁটা জামার নীচে শান্তিতে শয়ান/ দেখা হলেই মিষ্ট অতি, মুখের ভাব শিষ্ট অতি, অলস দেহ ক্লিষ্টগতি— গৃহের প্রতি টান।”

কিন্তু সস্ত্রীক পান্নালাল গত ছত্রিশ বছর ধরে এই কথাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে এসেছেন ফুটবলকে ভালোবাসার মাধ্যমে। যাত্রা শুরু ১৯৮২-তে স্পেন দিয়ে। তারপর ১৯৮৬ মেক্সিকো, ১৯৯০ ইতালি, ১৯৯৪ আমেরিকায় ছুটে গেছেন এই দম্পতি। এখানেই শেষ নয়। ফুটবলের টানে একে একে ছুটে গেছেন ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান-কোরিয়া, সাউথ আফ্রিকা, ব্রাজিল পর্যন্ত। আজ ২০১৮-তে পৌঁছে ইতিমধ্যেই চুরাশিটা বসন্ত দেখে ফেলেছেন পান্নালালবাবু। ছিয়াত্তরে পা রেখেছেন স্ত্রী চৈতালি চ্যাটার্জ। কিন্তু আজও কমেনি গ্যালারিতে দুজনের বসে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখার উন্মাদনা। পান্নালালবাবু এবারও সস্ত্রীক পাড়ি দিচ্ছেন রাশিয়াতে। পকেটে ব্রাজিল বনাম মরোক্কোর টিকিট।

মাত্র সাড়ে সাত হাজার টাকা পেনশন সাথে একটা ছোট্ট শাড়ির ব্যবসা। তবু অর্থসঙ্কটের জন্যে ফুটবল বিশ্বকাপকে কোনোবার অবহেলা করেননি এই দম্পতি। দীর্ঘ ছত্রিশ বছর ধরে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট টাকা তারা একটা ফান্ডে জমা করে এসেছেন গ্যালারিতে বসে বিশ্বকাপ দেখার জন্যে। নিকট কোনো আত্মীয়ের বিয়ে কিংবা নিজেদের শারীরিক অসুস্থতার দরুণ ওই ফান্ড থেকে টাকা খরচ হয়ে গেলে ওই দম্পতি হাসিমুখে পরের মাসটা শুধু ডাল-ভাত খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন শুধুমাত্র সামনে থেকে বিশ্বকাপ দেখবেন বলে। কথাগুলো শুনতে যতটা সহজ, দীর্ঘ ছত্রিশ বছর ধরে তা পালন করে আসাটা প্রায় অসম্ভব। তবুও এই প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন সস্ত্রীক পান্নালালবাবু।

ফুটবল খেলোয়ার না হয়েও যে ফুটবল নিয়ে ইতিহাস লেখা যায়, ফুটবল বিশ্বকাপ চলাকালীনও যে বিদেশের মাঠে তেরঙ্গা ওড়ানো যায়, ফুটবলের জন্য যে হাসিমুখে ছোটখাটো শখ আহ্লাদও বছরের পর বছর ধরে উড়িয়ে দেওয়া যায় তা পান্নালালবাবু এবং তার স্ত্রী প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। চুরাশি বছরে যেখানে একটা মানুষ পাশের পাড়া থেকে বেড়িয়ে আসতেই হাঁপিয়ে যায় সেখানে পান্নালালবাবু উড়ে যাচ্ছেন পাঁচ হাজার মাইল। কোনো একজন দর্শকও যে বাঙালির গর্ব হতে পারে। তা আমরা ভেবে দেখেছিলাম কি?

আসুন সবাই মিলে প্রার্থনা করি এই একইরকম ভালোবাসা উদ্দমতা নিয়ে এই দম্পতি যেন ২০২২ এও উড়ে যেতে পারে কাতারে।
ভালো থাকুক পান্নালালবাবু। ভালো থাকুক চৈতালিদেবী। ফুটবল যদি বাঙালির আবেগ হয়, ওনারা সেই আবেগ প্রতিটা বাঙালির মনে বাঁচিয়ে রাখবেন চিরদিন।

বি.দ্র.- আপনারাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন…
Name on the account: PANNALALL CHATTERJEE & CHAITALI CHATTERJEE
Account Number: 461800398
IFSC Code: IDIB000K036

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi