LaughaLaughi

You Create, We Nurture

I got a story to tell

হেডফোন

সকাল থেকেই বাড়ির পরিবেশ একদম ভালো না। সাথে টুবাই এর হেডফোন টাও কেমন যেন ঠিকঠাক কাজ করছে না। আর তাছাড়া,বাড়ির পরিবেশ ভালো হবেই বা কি করে। আজ টুবাই ১৯ বছরে পা দিল। তার সাথে সাথেই টুবাই এর মা এর মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হল।  তাই বাড়ির অবস্থা খুব একটা ভালো না। টুবাই এর মন‌ও যে ভালো থাকবে না সে তো বলাই বাহুল্য। কিন্তু তার মন মাএর মৃত্যুর থেকেও অন্য বিষয়ে বেশি খারাপ। যে তার মা এর মৃত্যুর জন্য তার জন্মদিনটাও মাটি হয়েছে। এই কারনে মৃতা মা এর ওপর তার বেশ রাগ‌ই হয়েছে। তবুও সন্তান তো মা এর জন্য মন কেমন ও করে ওর। মা এর শাসন,মা এর হাতের রান্না,মা এর আদর সব কিছুকেই বড্ড মিস করে।

গঙ্গার ঘাটে বসে এসব‌ই ভাবছিল টুবাই। মনে স্মৃতিগুলো যত ভিড় করে আসছিল তত‌ই যেন চোখ দুটো ঝরনার রূপ নিচ্ছিল। তাই মনটা একটু হালকা করবে বলে গান শুনবে ঠিক করল। কিন্তু পকেটে হাত রাখতেই বুঝতে পারল সে হেডফোন আনতে ভুলে গিয়েছে। তাই আর কিছুক্ষন এমনি বসে বাড়ির দিকে র‌ওনা দিল।

বাড়িতে এখন মা বাদে ঠাম্মি,বাপি আর ও নিজে থাকে। বাড়ি এসে দেখল ঠাম্মি মা এর ছবিতে ধুপ দিচ্ছে। দেখল বাবাও বাড়িতেই আছে,খবরের কাগজ পড়ছে। ঠাম্মি জিজ্ঞেস করল কিরে কোথায় গেছিলি? ঠাম্মির প্রশ্ন শুনে বাবা খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে টুবাই এর দিকে তাকাল। টুবাই বাবার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে ঠাম্মিকে বলল,”গ‌ঙ্গার ঘাটে”। এই বলে নিজের ঘরে চলে গেল। হেডফোন টা ব্যাগ থেকে বের করে বিছিনায় শুয়ে বিভোর হয়ে গান শুনতে লাগল।

হঠাৎ করেই মনে পড়তে লাগল এক বছর আগে এই দিনটার কথা। উড়তি বয়সের টুবাই নতুন ফোন কিনে সারাদিন সোশ্যাল মিডিয়া তে মগ্ন থাকত। কখোনো ফেসবুক নয়তো ইন্সটাগ্রাম। নয়তো হোয়াটস্অ্যাপ,কখোনো ইউটিউব। বা কখোনো নীল ছবি তাই হেডফোনটা ছিল অপরিহার্য। ওটা ছাড়া জীবন প্রায় অচল ছিল। মা এই নিয়ে খুব ঝামেলা করত। যখন‌ই দেখত টুবাই কানে হেডফোন দিয়েছে রে রে করে তেড়ে আসত। টুবাই সেটা মানতে পারত না। সে ভাবত তার পার্সোনাল ম্যাটার এ মা কেন নাক গলাবে। তাই মা এসব নিয়ে কিছু বললেই ঝগড়া বেঁধে যেত।

আগের বছর এই দিনে টুবাই এর জন্য স্পেশাল পায়েস রেঁধেছিল ওর মা। দুপুর বেলা খেতে ডাকতে গিয়ে দেখে ছেলে নিজের ঘরে নেই ছাদে বসে কানে হেডফোন গুঁজে ফোনে কিসব করছে। ওর মা এর মাথা গরম হয়ে যায়। হবে নাই বা কেন। যে ছেলের জন্মদিন বলে সারাদিন ধরে ভালোমন্দ রান্না করল আর সেই ছেলেকে ডেকে ডেকে পারা যায় না। কানে ওসব উদ্ভট জিনিস গুঁজে বসে আছে ডাকলেও শুনতে পায় না। রোজ খেতে বসার আগে এটাই হয়। একবার ডাকলে আসবেই না। ঘরে গিয়ে রাগ দেখিয়ে না ডাকলে হয় না। তাই সেদিন এর একটা বিহিত করবে বলে কিছু না বলে সোজা ছেলের কাছে যায়। আর গিয়ে কান থেকে হেডফোন টা খুলে দেয় টুবাই এর মা। টুবাই প্রচন্ড রেগে যায় আর মা এর সাথে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায়। তর্কাতর্কি করতে করতে কখন যে ছাদের একদম ধারে এসে পড়েছে খেয়াল‌ই করেনি কেউ। হঠাৎ করেই ওর মা টুবাইকে একটা থাপ্পড় মারে। আর টুবাই রেগে গিয়ে ওর মা কে ধাক্কা দেয় আর তাতেই অনর্থ ঘটে যায়। টুবাই এর মা তিনতলা থেকে সোজা নিচে পড়ে যায়। আর তৎক্ষনাৎ মৃত্যু হয় ওর মা এর। পুলিশ এসেছিল বাড়িতে। পুলিশকে আর আত্মীয়সজনদের ওর ঠাম্মি বলে ছাদে কাপড় শুকোতে দিয়েছিল সেটা তুলতে গিয়েছিল। ছাদে শ্যাওলা আছে হয়তো জল টল পড়েছিল পা পিছলে গেছে।

ওই ঘটনার পর থেকে টুবাই এর বাবা ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। দরকারের বেশি কথা বলে না,ওর বাবা ওকেই দায়ী করে ওর মা এর মৃত্যুর জন্য। টুবাই নিজেও অপরাধবোধে ভোগে। ও নিজেকে দোষী ভাবে ওর মা এর মৃত্যুর জন্য। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল টুবাই বুঝতে পারেনি। সম্বিত ফিরল ঠাম্মির ডাকে,খেতে ডাকছিল। টুবাই,” যাইইইই “, বলে উঠে হেডফোন টা মোবাইল থেকে খুলে ব্যাগে রেখে খেতে চলে গেল।

এটাও পড়তে পারেন: ইমোজি-এর ইমোশান

প্রায় আধ ঘন্টা পর খেয়ে দেয়ে এসে ঘরের বড়ো আলোটা জ্বালালো। আয়নায় মুখ দেখে চুলটা একটু ঠিক করল টুবাই। বড়ো আলোটা নিভিয়ে বিছানার পাশে থাকা ল্যাম্পশেডটা জ্বালালো। আর ফোনটা হাতে নিতেই সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল টুবাইয়ের। হেডফোন টা বাজে ভাবে ছেঁড়া। কিন্তু টুবাই তো এখুনি দেখে গেল ওটা ঠিক ছিল। তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব। ঠাম্মিকে ডাকতে যাবে এমন সময় চোখ গেল ওর মাএর ফটোটার দিকে। ওটার পাশে একটা ছোটো কাগজে লেখা,”আই অ্যাম হোম“।

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi