LaughaLaughi

You Create, We Nurture

Book Review

বাংলার দীর্ঘতম ডিস্টোপিয়ান থ্রিলার পর্যালোচনা

তেইশ ঘন্টা ষাট মিনিট

প্রকাশক: পত্রভারতী

লেখক: অনীশ দেব

অনীশ দেবের লেখার সাথে আমার প্রথম পরিচয় প্রায় এক দশকেরও বেশী আগে শারদীয়া শুকতারায় ‘পিশাচের রাত’ গল্পের মাধ্যমে। তাঁর গল্পের অপূর্ব লেখনশৈলী আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। বাংলা সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞানের পরিসরে তাঁর উপস্থিতি এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের ন্যায়।

উক্ত উপন্যাসের প্রথম ভাগ সর্বপ্রথম প্রকাশ পায় ২০০৪ সালে কিশোরভারতীতে, শেষ হয় ২০১০ সালে। ইতিমধ্যেই ‘ডিস্টোপিয়ান’ ঘরানা যথেষ্ট প্রচার পায়। দুই খন্ডে সমাপ‍্য এই উপন্যাস কালের হিসেবে আজ থেকে প্রায় সোয়া তিনশো বছর পরে ২৩০০ থেকে ২৪০০ সালের মধ্যে কোনো এক সময়ের। ভবিষ‍্যতের কোলকাতার পটভুমিকায় পাশাপাশি অবস্থিত দুই শহর ওল্ড সিটি আর নিউ সিটির মধ‍্যে বহু অমিল। তবে ক্লেদাক্ত, ধূলোমাখা, গরীব ওল্ড সিটির আর অর্থ এবং প্রযুক্তিবিদ‍্যার মহাসমারোহে গড়ে ওঠা নিউ সিটির মধ‍্যে মিল একটাই; ভালোবাসা আর মানবিকতার অভাব।

একদিকে ওল্ড সিটিতে খুন, জখম, রাহাজানি, আর মুদ্রার উল্টো পিঠে নিউ সিটির প্রাচুর্য্য। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মত দৈনন্দিন চাহিদাগুলো পূরণ করতে এবং নিজের পরিবারকে রক্ষার্থে ওল্ড সিটির বাসিন্দা জিশান কে অংশগ্রহণ করতে হয় নিউ সিটির এক ভয়ংকর রিয়েলিটি শোয়ের মারণ খেলায়; যেখানে মৃত‍্যু ঝুলছে সূক্ষ্ম সুতোয়। আর সেই মৃত্যুর মুনাফা লুটছে কিছু স্বার্থলোভী অর্থ লোলুপ। যেখানে জীবন মৃত্যুর মধ্যে রয়েছে এক চুলের ফারাক, সেখানে আফসোস বা অপরাধবোধের মত সুক্ষ অনুভূতিগুলোর আর কোনো অস্তিত্ব থাকেনা।

এই খেলায় সামিল হতে গিয়েই জিশান প্রত‍্যক্ষ করে অর্থপ্রাচুর্যের মুখোশে ঢেকে থাকা নিউ সিটির ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া স্বরূপ। এর পেছনে কি কাজ করছে নিউ সিটির পিস ফোর্স এর মার্শালের কোনো অস্বাভাবিক মনস্তত্ত্ব? কীই বা তার অতীত? জিশান কি পারবে এই দুই শহরের মধ‍্যে ভালোবাসার যোগসূত্র হতে? সে কি পারবে মৃত‍্যুঞ্জয়ী হতে?

এই সমস্ত উত্তরের খোঁজে পড়তে হবে বাংলা সাহিত্যের দীর্ঘতম ফিউচারিস্টিক থ্রিলার। অসহ‍্য টেনশন ও রুদ্ধশ্বাস এবং মানুষের সাথে মানুষের ভালোবাসার গল্পকে লেখক তার অনবদ‍্য লিখনশৈলী দিয়ে এক সূত্রে বেঁধেছেন দুই পর্বে সমাপ‍্য উপন‍্যাসে। যদি থ্রিলারপ্রিয় হন তবে এ উপন‍্যাস হতাশ করবে না। তবে কিছু অংশ বেশ নাটকীয় বা সিনেমাটিকও বলা যেতে পারে। হালে তৈরী হওয়া ওয়েব সিরিজ ‘স্কুইড গেম’ এর সাথে বহু অংশে এই উপন্যাসের মিল রয়েছে বলে অনেকে দাবী করেছেন। তবে কারো সাথে মিল খোঁজার উদ্দেশ্য নয়, বরং বাংলা সাহিত্যের অন্য এক দিক উন্মোচনের উদ্দেশ্যেই এই উপন্যাস পড়ার আহ্বান রইল।

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

A whole time doctor, ameture writer, part time food photographer and dancer... Basically I'm jack of all trades, master of none?